জুমবাংলা ডেস্ক : বাক্স সদৃশ একটি মেশিন, যেখানে বিপুল পরিমাণ ডলার রাখা আছে বলে জানানো হয়। আর সেসব ডলারের সমপরিমাণ টাকা ওই বাক্সে রাখা হলে টাকাও ডলারে রূপান্তরিত হবে।
এমন প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে অনেকেই বিপুল পরিমাণ টাকা তুলে দিয়েছেন প্রতারকদের হাতে। যারা এমন অসংখ্য মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়ে নিখোঁজও হয়েছেন।
বুধবার (২০ এপ্রিল) রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই চক্রের ১১ বিদেশি নাগরিকসহ ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি ডলার ট্রিক মেশিন, সিলভার কাপড়ে মোড়ানো আঠারোটি বান্ডেল, প্রতারণা কাজে ব্যবহৃত ১৭টি মোবাইল ফোন, দুটি ল্যাপটপ, কেমিক্যালের বোতল, বিভিন্ন মামলার ওয়ারেন্টের কপি উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেফতাররা হলেন- হেনরি ওসিতা ওকেচুকু, চিসম ইমানুয়েল ওবাইজুলু, ওকাকে পিটার, ওবিনা সান্ডে, ওনেকা এমবা, চিছম এন্থনি ইকুয়েনযে, ওকেয়া আজুবিকে, অনুয়ারাহ ওযুয়েমেনা ডানিয়েল, অনুরুকা জিনিকা ফ্রান্সিস, লুকে, ডোমাডু চিনেডোদ এবং বাংলাদেশী সহযোগী কাস্টমসের ভুয়া অফিসার চাঁদনী আক্তার।
ডিবি জানায়, চক্রের সদস্যরা অভিনব ‘ডলার ট্রিকের’ বাইরেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইউরোপ-আমেরিকার নাগরিক হিসেবে ভুয়া পরিচয়ে আইডি খুলে বিভিন্ন প্রতারণা চালিয়ে আসছিলেন। বন্ধু হিসেবে কারো সঙ্গে সখ্যতা তৈরি করে উপহার পাঠানোর নামে কিংবা বিনিয়োগের প্রলোভনে হাতিয়ে নিতেন লাখ লাখ টাকা।
বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
প্রতারক চক্রটির প্রধান নাইজেরিয়ান নাগরিক হেনরি ওসিতা ওকেচুকু এবং চিসম ইমানুয়েল উল্লেখ করে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার বলেন, এই দুজনই মূলত বাংলাদেশী সহযোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎকৃত টাকা গ্রহণ ও প্রতারক চক্রের মধ্যে বণ্টানের দায়িত্ব পালন করেন। গ্রেফতার অন্য বিদেশি সদস্যরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশী নাগরিকদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করে প্রতারণা করে থাকেন।
চক্রটি মূলত তিনটি উপায়ে প্রতারণা করে থাকে উল্লেখ করে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার আরও বলেন, তারা ভুয়া ডলার বাক্স উল্লেখ করে একটি মেশিন দেখায়। এই বাক্সে সুইস ব্যাংকসহ বিভিন্ন ইন্টারন্যাশনাল বড় বড় ব্যাংকের সিলযুক্ত ডলার ব্যবহার উপযোগীর কথা বলে প্রতারণা করা হয়। প্রাথমিকভাবে সুকৌশলে তারা দু-একটি ডলার ব্যবহার উপযোগী করেছে এরকম ভেলকি দেখায়। পরে তাদের কাছে বিপুল পরিমাণ ডলার আছে এবং তার সমপরিমাণ টাকা পাওয়া গেলে সেসব টাকা ও ডলার একই মেশিনের মধ্যে কয়েক ঘণ্টার জন্য রেখে দিলে টাকাগুলো ব্যবহার উপযোগী ডলারে রূপান্তরিত হবে বলে জানায়। এই প্রলোভনে তাদের হাতে টাকা তুলে দিলেই তা নিয়ে সটকে পড়তেন চক্রের সদস্যরা।
এর বাইরে তারা ফেসবুকে বিভিন্ন বিদেশি পুরুষের আইডি খুলে নারীদের সঙ্গে এবং বিভিন্ন বিদেশি তরুণীর নামে আইডি খুলে পুরুষদের সঙ্গে চ্যাটিং করে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। অনেক ক্ষেত্রে তার অঢেল সম্পত্তির কিছু অংশ বাংলাদেশী বন্ধুকে দেওয়া কিংবা দামি গিফট পাঠানোর ফাঁদে ফেলে। গিফট হিসেবে আসা হাজার হাজার পাউন্ড বা ডলার ছাড়াতে সুযোগ বুঝে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা দাবি করেন কাস্টমসের ভুয়া অফিসার চাঁদনি।
প্রতারণার আরেকটি কৌশলের কথা উল্লেখ করে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার আরও বলেন, চক্রের সদস্যরা ইউরোপ-আমেরিকার সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশের বিনিয়োগ করার আগ্রহ প্রকাশ করে। এক পর্যায়ে বাংলাদেশে গিফট পাঠিয়েছে অথবা টার্গেট ব্যক্তিকে ব্যবসায়িক অংশীদার করার কথা বলে বিভিন্ন উপায়ে অর্থ হাতিয়ে নিতো।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।