বৃদ্ধ বয়সে মানুষ অনেক বেশি একা হয়ে পড়েন। বিশেষ করে তার অনুভূতিগুলো কেউ মনোযোগ দিয়ে শুনতে চায় না। এই অসহায় দিনগুলোতে কেউ যখন বন্ধু হয়ে পাশে থাকে, তাকে বিশ্বাস না করে উপায় কী! ভারতের পশ্চিম উপকূলীয় শহর মুম্বাইয়ে ৮০ বছরের এক বৃদ্ধও বিশ্বাস করে বন্ধুত্ব করেছিলেন।
এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, ‘‘ওই বৃদ্ধের সঙ্গে এক তরুণীর বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিলো ফেসবুকে। এরপর দুইজনের মধ্যে ভালোবাসা ও সহানুভূতিশীল একটি সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে ওই তরুণী বৃদ্ধের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন পরিচয়ে মোট ৯ কোটি রূপি নিয়েছেন। ’’বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ১২ কোটি টাকা।
গণমাধ্যমের তথ্য, ২০২৩ সালের এপ্রিলে ওই বৃদ্ধ ফেসবুকে শারভি নামের এক নারীকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠান। কেউ কাউকে আগে থেকে চিনতেন না। শুরুতে রিকোয়েস্টটি গ্রহণ করেননি বৃদ্ধ। কয়েক দিন পর শারভির অ্যাকাউন্ট থেকে মেসেজ পাঠানো হয়। ওই বৃদ্ধ ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গ্রহণ করেন। এরপর তারা চ্যাট শুরু করেন এবং কিছুদিনের মধ্যে ফোন নম্বরও বিনিময় হয়। তারপরে ফেসবুক থেকে চ্যাট চলে যায় হোয়াটসঅ্যাপে।
শারভি ওই বৃদ্ধকে জানান, তিনি স্বামীর সঙ্গে থাকেন না। সন্তানদের নিয়ে তার সংসার। একটা সময় পর তিনি ওই বৃদ্ধের কাছ থেকে টাকা চাইতে শুরু করেন। কখনও বলেন সন্তানেরা অসুস্থ। কিছুদিন পর কবিতা নামের আরও এক নারী হোয়াটসঅ্যাপে ওই বৃদ্ধকে মেসেজ পাঠানো শুরু করেন। তিনিও নিজেকে শারভির পরিচিত বলে পরিচয় দেন। কিছুদিনের মধ্যে তিনি অশ্লীল বার্তা পাঠাতে শুরু করেন এবং টাকা চাইতে থাকেন। এরপরে দিনাজ নামের আরও এক নারী বৃদ্ধকে মেসেজ পাঠান। তিনি নিজেকে শারভির বোন বলে পরিচয় দেন এবং জানান, শারভি মারা গেছেন। দিনাজ আরও বলেন, শারভির মৃতদেহ হাসপাতালে, বিল পরিশোধ করতে হবে। শারভি ও বৃদ্ধের মধ্যে হওয়া হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটের স্ক্রিনশট পাঠিয়ে দিনাজ টাকা আদায় করতে থাকেন।
বৃদ্ধের দুর্ভোগ এখানেই শেষ হয়নি। কিছুদিন পর জেসমিন নামের এক নারী তাকে মেসেজ পাঠানো শুরু করেন। তিনি নিজেকে দিনাজের বন্ধু বলে দাবি করে সাহায্যের অনুরোধ জানান। বৃদ্ধ তাকেও টাকা পাঠান।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ওই বৃদ্ধ ৭৩৪টি লেনদেনের মাধ্যমে এই চার নারীর পেছনে ৮ দশমিক ৭ কোটি রুপি খরচ করেন।
সব সঞ্চয় শেষ করে বৃদ্ধ তার পুত্রবধূদের কাছ থেকে ২ লাখ রুপি ধার নেন। তারপর ওই নারীদের দেন। তাতেও টাকা চাওয়া থামেনি। পরে তিনি তার ছেলের থেকে ৫ লাখ রুপি চান।ছেলের সন্দেহ হলে বাবাকে প্রশ্ন করেন। বৃদ্ধ সব খুলে বলেন।
একপর্যায়ে বৃদ্ধ বুঝতে পারেন, সাইবার প্রতারণার ফাঁদে পড়েছেন তিনি। এরপরই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ধরা পড়ে, বৃদ্ধের ডিমেনশিয়া (স্মৃতিক্ষয়) হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।