সিপন আহমেদ : দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম জ্বালানি খাত। গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেল এই খাতের অন্তর্ভুক্ত। দৈনন্দিন জীবনে তিনটিই অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কাজেই এই খাত পরিচালনায় দক্ষ, যোগ্য ও অভিজ্ঞ লোক প্রয়োজন।
সম্প্রতি তিতাস গ্যাস পরিচালনা পর্যদ গঠন করা হয়। সেখানে মানবজমিন সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরীকে পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু মানবজমিন সম্পাদক তিতাস গ্যাস পরিচালনা পর্যদের পরিচালকের পদ থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। অন্তবর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ (হাফিযাহুল্লাহ)-এর নাম প্রস্তাব করা হলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।
বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব পাওয়ার পর তা গ্রহণ না করে প্রত্যাহার করার নজির নেই বললেই চলে। ২০০৭ সালে ১১ জানুয়ারির তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রস্তাব দেওয়া হলে তিনিও তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ বিষয়ে বলেছিলেন, ক্ষমতার লোভ আমার ছিল না। আমি যদি চাইতাম, তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হতে পারতাম। আমাকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু আমি তা প্রত্যাখ্যান করেছিলাম।
২০০৭ সালে ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানালেও ২০২৪ এর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর ছাত্ররা তাঁকে প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার প্রস্তাব দিলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করতে পারেননি।
মূল কথায় ফিরে আসি। গ্যাস সেক্টর বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ একটা সেক্টর। বর্তমানে দেখে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা রয়েছে দুই হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু দেশে দৈনিক গ্যাসের সক্ষমতা রয়েছে এক হাজার ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট। সম্প্রতি ভোলা জেলায় একটি গ্যাস ক্ষেত্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। সেখান থেকে ৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব বলে জানা গেছে।
শিল্প কারখানার কারণে আবাসিকে নতুন করে গ্যাস সংযোগ দেওয়া বন্ধ রয়েছে। যেসব বাসায় গ্যাস সংযোগ রয়েছে, তাদের প্রয়োজনীয় গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। বাসা বাড়িতে আমদানিকৃত তরলীকৃত গ্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে। দিনদিন গ্যাসের চাহিদা বাড়ছে। জেলায় জেলায় শিল্প কারখানা গড়ে উঠায় নতুন পাইপলাইন তৈরি করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ, যোগ্য ও অভিজ্ঞ লোক ছাড়া সফলতা কিংবা উন্নতি করা সম্ভব নয়।
তিতাস গ্যাস কোম্পানির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপকালে তিতাস গ্যাস পরিচালনায় এক্সপার্ট লোক নিয়োগের প্রসঙ্গ উঠে আসে। তাঁরা যেমনটি জানালেন, গ্যাস এক্সপার্ট হিসেবে দেশে প্রথমেই যার নাম আসে তিনি হলেন মাহমুদুর রহমান। অষ্টম জাতীয় সংসদে তিনি জ্বালানি উপদেষ্টা ছিলেন। এছাড়াও রয়েছেন তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামসুল আলম।
তিতাস গ্যাসসহ বিভিন্ন সেক্টরে যাদেরকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, দেখতে হবে তাঁরা সেসব সেক্টরে বিশেষজ্ঞ, যোগ্য ও অভিজ্ঞ কি না? এসব ক্ষেত্রে নিয়োগে রাজনৈতিক পরিচয় মূখ্য নয়। দেশের স্বার্থে দল, মতের উর্ধে ব্যক্তির যোগ্যতা প্রাধান্য দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, দক্ষ, যোগ্য, অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিকে যথাযথ সম্মান দিয়ে রাষ্ট্র সংস্কারে ভূমিকা রাখতে হবে। আশা করি, সরকার কাউকে নিয়োগ দেওয়ার আগে এসব বিষয় বিবেচনা করবে।
লেখক- সাংবাদিক
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।