স্পোর্টস ডেস্ক : অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট বিশ্বে এক অবাক করা ঘোষণা এসেছে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের কাছ থেকে। হঠাৎ করেই ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন এই ৩৬ বছর বয়সী অলরাউন্ডার। ২ জুন ‘দ্য ফাইনাল ওয়ার্ড’ পডকাস্টে এই সংবাদ জানান ম্যাক্সওয়েল। তাঁর মতে, ২০২২ সালে পা ভাঙার পর ওয়ানডে ফরম্যাট তার শরীরের ওপর বাড়তি চাপ ফেলছে, যা তাঁকে ক্রমাগত ব্যথা ও শারীরিক সমস্যায় ফেলছে। এই সিদ্ধান্ত এসেছে অনেক ভেবেচিন্তে ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে।
Table of Contents
গ্লেন ম্যাক্সওয়েল: অসাধারণ এক ক্যারিয়ারের শেষ অধ্যায়
গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ওয়ানডে ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল ২০১২ সালের আগস্টে। এই দীর্ঘ একযুগের পথচলায় তিনি ১৪৯টি ম্যাচ খেলেছেন, করেছেন চারটি সেঞ্চুরি, একটি ডাবল সেঞ্চুরি এবং উইকেট নিয়েছেন ৭৭টি। বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে ২০২৩ বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তাঁর ১২৮ বলে ২০১ রানের অসাধারণ ইনিংসটি। একক নৈপুণ্যে দলকে জয় এনে দেওয়া এমন ইনিংস ক্রিকেট ইতিহাসে বিরল।
এই ফরম্যাটে তিনি দুইটি বিশ্বকাপ জয়ের অংশ হয়েছেন—২০১৫ এবং ২০২৩ সালে। তার ব্যাটিংয়ের ধাঁচ ছিল আক্রমণাত্মক, তবুও ছিল পরিণত বুদ্ধি ও কৌশলের মিশেল। বল হাতেও কার্যকরী, প্রয়োজনে দলকে বাঁচাতে পারদর্শী ছিলেন। তাঁর ক্যারিয়ারকে স্মরণ করে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রধান নির্বাহী টড গ্রিনবার্গ বলেন, “গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ব্যাটিং ছিল বিস্ফোরক ও দর্শকপ্রিয়। তিনি শুধু ম্যাচই জেতাননি, বিশ্বজুড়ে তরুণদের অনুপ্রাণিত করেছেন।”
অবসরের পেছনের কারণ ও ম্যাক্সওয়েলের উপলব্ধি
পডকাস্টে ম্যাক্সওয়েল খোলাখুলি জানিয়েছেন, শরীরের অবস্থা দেখে মনে হয়েছে তিনি দলের জন্য বোঝা হয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচক জর্জ বেইলির সঙ্গে আলোচনার পরেই সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে, ২০২৭ বিশ্বকাপ তাঁর নাগালের বাইরে। তিনি কখনোই নিজের জন্য দলের একটি জায়গা ধরে রাখতে চাননি। তাঁর মতে, এখন সময় নতুন কাউকে গড়ে তোলার।
এই সততা ও আত্মবিশ্লেষণের মানসিকতা প্রশংসাযোগ্য। তিনি বলেন, “আমি বুঝতে পারছিলাম শরীর আর আগের মতো কাজ করছে না। দীর্ঘ ফরম্যাটগুলো এখন অনেক কঠিন মনে হচ্ছে।”
লাল বলের ক্রিকেটে ভবিষ্যৎ ও টি-টোয়েন্টিতে ধারা অব্যাহত
যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেননি, তবে তাঁর টেস্টে ফেরার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্ট খেলার পর আর কোনো লাল বলের ম্যাচ খেলেননি তিনি।
অন্যদিকে, টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ম্যাক্সওয়েল অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম শক্তি হিসেবে রয়ে যাচ্ছেন। ২০২৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ভারতে ও শ্রীলঙ্কায় যৌথভাবে অনুষ্ঠিত হবে, এবং সেখানেই চোখ রাখছেন তিনি।
গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের প্রভাব ও পরবর্তী প্রজন্মের অনুপ্রেরণা
ম্যাক্সওয়েলের ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং তিনটি ক্ষেত্রেই ছিল দারুণ দক্ষতা। তাঁর উপস্থিতি মাঠে ছিল এক অতুলনীয় উদ্দীপনা। তাঁর মতো খেলোয়াড় কেবল একটি প্রজন্মে একবারই আসে। প্রধান নির্বাচক জর্জ বেইলি বলেন, “তিনি ওডিআই ইতিহাসের অন্যতম সেরা ডায়নামিক খেলোয়াড়। দুইটি বিশ্বকাপে তাঁর ভূমিকা ছিল অপরিসীম।”
এই ধরণের খেলোয়াড়ের অবসর শুধু একটি দলের জন্য নয়, পুরো ক্রিকেট বিশ্বে একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি নির্দেশ করে। তরুণ খেলোয়াড়দের জন্য তিনি অনুকরণীয় আদর্শ হয়ে থাকবেন।
ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে: অস্ট্রেলিয়ার পরিকল্পনা
ম্যাক্সওয়েলের অবসরের পর অস্ট্রেলিয়া দল নিশ্চয়ই নতুন প্রজন্মের খেলোয়াড়দের দিকে মনোযোগ দেবে। নির্বাচকেরা ইতিমধ্যে বলছেন, এই ফাঁকা জায়গা পূরণে প্রস্তুত কয়েকজন উদীয়মান প্রতিভাবান ক্রিকেটার রয়েছেন। তবে ম্যাক্সওয়েলের মত একজন অভিজ্ঞ অলরাউন্ডারের অনুপস্থিতি পূরণ করা সহজ হবে না।
তাঁর নেতৃত্বগুণ, অভিজ্ঞতা ও ক্রাইসিস মোমেন্টে পারফর্ম করার ক্ষমতা অনেক সময় দলকে কাঙ্ক্ষিত জয় এনে দিয়েছে। ভবিষ্যতের খেলোয়াড়দের মধ্যে এমন দক্ষতা ও মানসিকতা গড়ে তোলাই হবে এখন প্রধান লক্ষ্য।
FAQs
গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ওয়ানডে থেকে কেন অবসর নিয়েছেন?
তিনি উল্লেখ করেছেন যে শরীর আর আগের মতো সাড়া দিচ্ছে না এবং ব্যথা বাড়ছে, বিশেষ করে পা ভাঙার পর থেকে। এই কারণে তিনি মনে করছেন এটি সঠিক সময় অবসর নেওয়ার।
ম্যাক্সওয়েল কি এখনও অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলবেন?
হ্যাঁ, তিনি টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলা চালিয়ে যাবেন।
কোন ম্যাচটি ম্যাক্সওয়েলের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে স্মরণীয়?
২০২৩ বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২০১ রান করার ইনিংসটি সবচেয়ে স্মরণীয় বলে ধরা হয়।
ম্যাক্সওয়েল টেস্ট ক্রিকেটে ফিরবেন কি?
সর্বশেষ ২০১৭ সালে টেস্ট খেলেছেন এবং ফেরার সম্ভাবনা খুবই কম।
তিন সন্তানের মাকে আন্টি বলে ডাকত যুবক, অবশেষে তার সঙ্গেই ধরা বেডরুমে!
কে হতে পারে ম্যাক্সওয়েলের উত্তরসূরি?
নির্বাচকেরা তরুণ খেলোয়াড়দের মধ্যে নতুন প্রতিভা খুঁজছেন, যারা ম্যাক্সওয়েলের জায়গা পূরণ করতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।