বিনোদন ডেস্ক : সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ছাগলকাণ্ড নিয়ে উত্তাল সারাদেশ। ঘটনাটি নিয়ে এখন কমবেশি সবাই অবগত। বাদ নেই শোবিজ অঙ্গনের মানুষেরাও। এরই মধ্যে ছাগলকাণ্ডের ঘটনায় নিন্দা ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন ছোট পর্দার অন্যতম খ্যাতিমান অভিনেতা ফারুক আহমেদ। বিষয়টি নিয়ে বেশ ব্যথিত তিনি। অভিনেতা মনে করেন, যারা বেআইনিভাবে কোটি কোটি টাকা আয় করছেন, তারা সামগ্রিকভাবে দেশের ক্ষতি করছেন। আর এসব অর্থ আত্মসাৎ এর মতো কর্মকাণ্ড কিছু মানুষদের কাছে একটা নিয়মে পরিণত হয়েছে।
এই ছাগলকাণ্ডের ঘটনা অভিনেতা ফারুককে মনে করিয়ে দিয়েছে তার একটি শৈশবের ঘটনা। ফারুকের বয়স যখন ৯ বছর, তখন একটি ছাগলের জন্য বেশ কেঁদেছিলেন অভিনেতা। ওই ছাগলটির দাম ছিল ১৬ টাকা! সম্প্রতি এক গণমাধ্যমে শৈশবকে স্মৃতিচারণ করে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা তুলে ধরেছেন ফারুক আহমেদ।
৯ বছর বয়সী ফারুক ফুফুর সঙ্গে ঢাকায় ফেরার পথে একটি কালো ছাগল দেখতে পায়। এবং সেটি তার খুবই পছন্দ হয়। নাছোড়বান্দা ফারুক বায়না করে বসে ছাগলটা তার লাগবেই। কিন্তু তার বাবা-মা এতে রাজি ছিলো না। কারণ, ঢাকায় ছাগল লালন-পালন করা কঠিন।
সেই স্মৃতি মনে করে অভিনেতা বলেন, ‘তখন আমি ফুফুকে অনুরোধ করি ছাগলটি দেখে রাখতে। তিনি রাজি হন। ছাগলটির দাম চেয়েছিল ২০ টাকা। পরে দর-কষাকষি করে ১৬ টাকায় ঠিক হয়। কিন্তু টাকা পাব কোথায়? মাকে বললাম। মা বললেন, “এত টাকা আমি পাব কোথায়? তোর বাবাকে বল।” আমি আব্বার কাছে গিয়ে ১৬ টাকা চাইলাম। আব্বা বললেন, “বাবা আমি স্কুলশিক্ষক। ১৬ টাকা দিয়ে ছাগল কেনার সামর্থ্য আমার নাই।” আব্বাকে বললাম, আব্বা আমার কাছে ৫ টাকা আছে, আপনি ১১ টাকা আমাকে দেন। আব্বা সন্তানের মনরক্ষার জন্য আমাকে পকেট থেকে ১১ টাকা বের করে দিলেন। কেনা হলো ছাগল।’
এরপর অভিনেতা ফিরে গেলেন সেই ছাগল কেনার পরের ঘটনায়। ছাগলটি কিনে ঢাকায় চলে আসেন ফারুক। কিন্তু সেটি আর তখন তার কাছে নেই। কারণ, ছাগলটি রয়েছে গ্রামের বাড়িতে। ছাগলটাকে নিয়ে অনেক ভাবতেন তিনি। একদিন ফারুকের আবার সুযোগ হয় গ্রামে যাওয়ার।
গ্রামে যাওয়ার পরের ঘটনা তুলে ধরে ফারুক বলেন, ‘গ্রামে গিয়ে মনটা খারাপ হয়ে যায়। ফুফু জানান, আমার ছাগলটা নাকি তিন মাস পরই মারা গেছে। শুনে সঙ্গে সঙ্গে আমার কান্না চলে আসে। আমি কাঁদছি। আব্বা আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছেন, “কেঁদো না বাবা, তোমাকে এবার আরও সুন্দর একটা ছাগল কিনে দিবো।” আমি আব্বার চোখের দিকে তাকালাম। দেখলাম, তার চোখ ভেজা। বাবাও কাঁদছেন। দুচোখ থেকে গড়িয়ে পানি ঝরছে।’
কিন্তু ৯ বছর বয়সী ছোট্ট ফারুক-তার বাবার কান্নার অর্থটা বুঝতে পারেনি। তবে এটা বুঝেছিলেন যে আর কখনওই হয়তো ছাগল কেনার সুযোগ বা সামর্থ্য হবে না।
পরিশেষে ফারুক বলেন, ‘আব্বা আমাকে খুশি করার জন্য মাত্র ১৬ টাকা দিয়ে আরেকটি ছাগলের বাচ্চা কিনে দিতে পারেননি। আমার তাতে কোনো দুঃখ নেই। বরং আমার গর্বে বুক ভরে যায়, আমার আব্বা সৎ জীবনযাপন করেছেন বলে। অন্যের অর্থ আত্মসাৎ করে সন্তানকে ছাগল কেনার ১৬ টাকা দেননি, আমাদের বাস্তবতা শিখিয়েছেন।’
প্রসঙ্গত, এবারের ঈদুল আজহায় রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সাদিক অ্যাগ্রো ১৫ লাখ টাকায় একটি ছাগল কিনতে যান সিফাত নামের এক যুবক। এ ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হলে জানা যায়, সেই সিফাত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা মতিউর রহমানের ছেলে। এর পর থেকে আলোচনা শুরু হলে এক পর্যায়ে বাবা-ছেলের পরিচয় নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়। ছেলে সিফাতকে ছেলে বলে অস্বীকার করেন মতিউর রহমান।
এক পর্যায়ে মতিউর ও সিফাতের বাবা-ছেলে সম্পর্কের সত্যতা প্রমাণিত হয়।
এরপর থেকে মতিউর রহমানের ছেলের দামি ব্র্যান্ডের ঘড়ি, গাড়ি, আলিশান জীবনযাপন; মতিউর রহমান ও পরিবারের সদস্যদের নামে রিসোর্ট, শুটিং স্পট, বাংলো বাড়ি, জমিসহ নামে-বেনামে সম্পত্তি নিয়ে শুরু হয় একের পর এক আলোচনা। এর প্রেক্ষিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় ছাগলকাণ্ডে আলোচিত মতিউর রহমানকে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।