বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রযুক্তি বাজারে বড় লোকসানে পড়েছে হুয়াওয়ে। স্মার্টফোনের বাজারে অবস্থান হারানোর পর চীনের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটি গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। খবর অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস।
২০১৯ সালে শেনজেনভিত্তিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়েকে কালো তালিকাভুক্ত করে যুক্তরাষ্ট্র। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে হুয়াওয়ের বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। হুয়াওয়ে তার স্মার্টফোনগুলোয় গুগলের অপারেটিং সিস্টেম ও অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করত। নিষেধাজ্ঞার পর সেটিও বন্ধ হয়ে যায়। একসময়ের শীর্ষ স্মার্টফোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানটি নিষেধাজ্ঞার কারণে ২০২০ সালে শীর্ষ পাঁচ থেকে ছিটকে পড়ে। অন্যদিকে চিপ সংকটের কারণে ২০২১ সালে চীনের বাজারও হারায় হুয়াওয়ে টেকনোলজিস। বাজার হারানোর পর থেকে প্রতিষ্ঠানটি নতুন প্রযুক্তি সংক্রান্ত গবেষণা ও উন্নয়নে ১৪ হাজার ২৭০ কোটি ইউয়ান বিনিয়োগ করেছে। মূলত নতুন ব্যবসায়িক ক্ষেত্র তৈরিতেই এ উদ্যোগ।
গবেষণা ও উন্নয়নে প্রতিষ্ঠানটির ব্যয় ২২ দশমিক ৪ শতাংশ, যা প্রতিযোগী স্যামসাং ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপলের তুলনায় বেশি। চলতি সপ্তাহের শুরুতে বার্ষিক বিশ্লেষক সম্মেলনে হু ক্লাউড কম্পিউটিং, ফাইভজিসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে হুয়াওয়ের অঙ্গীকারের বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেন। যুক্তরাষ্ট্রের কালো তালিকাভুক্ত হওয়ায় গুগলের পরিষেবা ব্যবহার করতে পারছে না হুয়াওয়ে। এজন্য প্রতিষ্ঠানটি নিজস্ব মোবাইল সার্ভিস প্লাটফর্মও তৈরি করেছে।
প্লাটফর্মটি ডেভেলপারদের হুয়াওয়ে ডিভাইসের জন্য অ্যাপ চালুর সুবিধা দিয়ে থাকে। প্লাটফর্মে থাকা শর্টকাটের মাধ্যমে গুগলের বিভিন্ন অ্যাপের পাশাপাশি মোবাইলের জন্য ইউটিউবও ব্যবহার করা যাবে। নিষেধাজ্ঞার কারণে ২০২২ সালের প্রথম প্রান্তিকে হুয়াওয়ের বিক্রি গত বছরের তুলনায় ১৪ শতাংশ কমেছে। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকের বাজার প্রতিবেদন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। হুয়াওয়ে টেকনোলজিস জানায়, ২০২২ সালের প্রথম প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটির মোট রাজস্বের পরিমাণ ১৩ হাজার ১০০ কোটি ইউয়ান। গত বছর যা ছিল ১৫ হাজার ২২০ কোটি ইউয়ান। প্রতিষ্ঠানটির নেট প্রফিট মার্জিন ৪ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০২১ সালে যার হার ছিল ১১ দশমিক ১ শতাংশ। হুয়াওয়ের রোটেটিং চেয়ারম্যান কেন হু বলেন, পরিসংখ্যানটি পূর্বাভাসের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তিনি বলেন, ভোক্তা পর্যায়ে আমাদের ব্যবসা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছে। সেই সঙ্গে আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি অবকাঠামো ব্যবসাও মন্থর গতিতে এগিয়েছে।
২০২০ সালের নভেম্বরে প্রতিষ্ঠানটি তাদের সাশ্রয়ী মূল্যের স্মার্টফোন উৎপাদনকারী সাব ব্র্যান্ড অনরও বিক্রি করে দিয়েছে। হুয়াওয়ের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার প্রভাব থেকে রক্ষার পাশাপাশি বিক্রি বাড়াতেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। স্বতন্ত্র ব্র্যান্ডে পরিণত হওয়ার পর থেকে চীনসহ সারা বিশ্বে হারানো বাজার ফিরে পেতে বিভিন্ন মডেলের স্মার্টফোন বাজারজাত করছে অনর। বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যানালিস প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটি স্মার্টফোন বিক্রির দিক থেকে চীনের বাজারে শীর্ষাবস্থানে চলে এসেছে। ২০২২ সালের প্রথম প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটি ১ কোটি ৫০ লাখ ইউনিট স্মার্টফোন বাজারজাত করেছে এবং ২০৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। ১ কোটি ৩৯ লাখ স্মার্টফোন বাজারজাতের মাধ্যমে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে অপো। অন্যদিকে ১ কোটি ৩৮ লাখ স্মার্টফোন বাজারজাতের মাধ্যমে চীনের বাজারে শীর্ষ তিনে অবস্থান নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।