আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পৃথিবীতে এমন কিছু উপাদান আছে, যেগুলো অদৃশ্যভাবে মানবজীবনে প্রভাব ফেলে। তেমনই একটি ধাতু হলো রোডিয়াম। এই দুর্লভ ধাতুর নাম হয়তো অনেকেই জানেন না, কিন্তু এটি আমাদের পরিবেশ রক্ষায় নীরব ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, রোডিয়ামের দাম স্বর্ণ কিংবা প্ল্যাটিনামের চেয়েও বেশি!
Table of Contents
রোডিয়াম ধাতু কী?
রোডিয়াম (Rhodium) একটি রূপালি-সাদা, চকচকে ও দুর্লভ ধাতু যার প্রতীক Rh এবং পারমাণবিক সংখ্যা ৪৫। ১৮০৩ সালে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী উইলিয়াম হাইড ওলাস্টন এটি আবিষ্কার করেন। এটি মূলত প্ল্যাটিনাম গ্রুপের অন্তর্গত, এবং উচ্চ তাপমাত্রা ও ক্ষয়ের বিরুদ্ধে অতি প্রতিরোধী।
গাড়ির ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণে রোডিয়ামের প্রধান ব্যবহার
বর্তমানে রোডিয়াম ধাতুর ৯০ শতাংশ ব্যবহার হয় অটোমোবাইল শিল্পে, বিশেষ করে ক্যাটালিটিক কনভার্টারে। এই যন্ত্র গাড়ির ইঞ্জিন থেকে নির্গত ক্ষতিকর নাইট্রোজেন অক্সাইড (NOx) গ্যাসকে অক্সিজেন ও নাইট্রোজেনে পরিণত করে পরিবেশবান্ধব করে তোলে।
বিশ্বজুড়ে যখন দূষণ রোধে কঠোর আইন কার্যকর হচ্ছে, তখন রোডিয়ামকে ‘মিরাকল মেটাল’ বলার যথেষ্ট কারণ আছে।
রোডিয়ামের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার
গয়না শিল্পে
হোয়াইট গোল্ড ও রুপার গয়নায় রোডিয়ামের প্রলেপ দিলে তা আরও বেশি চকচকে ও টেকসই হয়।
কাচ ও আয়না শিল্পে
ফাইবারগ্লাস ও উন্নত মানের আয়না তৈরিতে রোডিয়াম ব্যবহৃত হয়।
ইলেকট্রনিকস খাতে
সংযোগ পয়েন্টের উপর রোডিয়ামের প্রলেপ দীর্ঘস্থায়িত্ব নিশ্চিত করে।
সরবরাহ বনাম চাহিদা: কোন দিকে ভারী?
বিশ্বের ৮০ শতাংশ রোডিয়াম উৎপাদন হয় দক্ষিণ আফ্রিকায়। বাকি অংশ আসে রাশিয়া ও উত্তর আমেরিকা থেকে। দক্ষিণ আফ্রিকায় রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিদ্যুৎ সংকট বা শ্রমিক ধর্মঘটের মতো ঘটনায় রোডিয়ামের সরবরাহে বড় ধরনের প্রভাব পড়ে।
অন্যদিকে, চীন, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে দূষণ নিয়ন্ত্রণে কঠোর আইন জারির ফলে রোডিয়ামের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এই ধাতুর বাজার তাই অত্যন্ত সংবেদনশীল ও অস্থির।
দাম শুনে চমকে যাবেন!
বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ট্রয় আউন্স (৩১.১ গ্রাম) রোডিয়ামের দাম ৪,০০০ থেকে ৪,৫০০ মার্কিন ডলার। অর্থাৎ প্রতি গ্রামের দাম প্রায় ১৩০ থেকে ১৪৫ ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১৪,০০০ থেকে ১৬,০০০ টাকা।
তুলনায়, স্বর্ণের দাম প্রতি আউন্সে প্রায় ২,০০০ ডলার। ২০২১ সালে রোডিয়ামের দাম একসময় ৩০,০০০ ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল, যা স্বর্ণের প্রায় ১৫ গুণ বেশি!
ভবিষ্যতের পথে রোডিয়াম
বিশ্ব ধীরে ধীরে ইলেকট্রিক গাড়ির দিকে এগোচ্ছে, যেখানে ক্যাটালিটিক কনভার্টার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু এখনো হাইব্রিড ও ফুয়েলচালিত গাড়ির চাহিদা থাকায় রোডিয়ামের ব্যবহার সহসা কমছে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বল্প ও মধ্যম মেয়াদে রোডিয়ামের বাজার স্থিতিশীল থাকবে। তবে দীর্ঘমেয়াদে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে এই ধাতুর চাহিদা কমে যেতে পারে।
আকাশযুদ্ধে ইতিহাস : প্রথমবারের মতো AI দ্বারা নিয়ন্ত্রিত গ্রিপেন ই যুদ্ধবিমান সফল মিশনে অংশগ্রহণ
রোডিয়াম শুধুমাত্র একটি ধাতু নয়, এটি আধুনিক প্রযুক্তির এক নির্ভরযোগ্য অংশীদার। এর সীমিত সরবরাহ, উচ্চ চাহিদা এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণে অপরিহার্য ভূমিকা এটিকে করেছে বিশ্বের অন্যতম দামি ও দুষ্প্রাপ্য ধাতু।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।