মানবসভ্যতার ইতিহাসে সোনা শুধু একটি ধাতু নয়; এটি আস্থা, মূল্য ও মর্যাদার প্রতীক। যুগ যুগ ধরে রাজা-মহারাজা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত সোনা ব্যবহার করেছে সম্পদ সংরক্ষণ ও সামাজিক মর্যাদা প্রদর্শনের উপায় হিসেবে। আজও সোনার দর বাড়া-কমা নিয়ে প্রতিদিন খবর আসে—কখনো ‘স্বর্ণের দাম বেড়েছে’, কখনো ‘সোনার বাজারে ধস’। কিন্তু আসলে কীভাবে প্রতিগ্রাম বা প্রতি ভরির সোনার দাম ঠিক হয়? জেনে নেওয়া যাক সোনার দামের নির্ধারণ প্রক্রিয়া।

আন্তর্জাতিক বাজারে শুরু হয় সোনার মূল দাম
সোনার দাম প্রথম নির্ধারিত হয় আন্তর্জাতিক বাজারে, বিশেষ করে লন্ডন বুলিয়ন মার্কেট অ্যাসোসিয়েশন (LBMA) এবং কমেক্স (COMEX) – এই দুই বৃহৎ স্বর্ণবাজারে। প্রতিদিন এসব বাজারে টনকে টন সোনার লেনদেন হয়, এবং সেখানকার দরই বৈশ্বিকভাবে মূল নির্দেশক হিসেবে কাজ করে।
লন্ডন ফিক্সিং সিস্টেমের মাধ্যমে প্রতিদিন দুইবার – বাংলাদেশ সময় বিকেল ও রাতে – আন্তর্জাতিকভাবে সোনার দাম ঠিক হয়। এই দামকে ভিত্তি করেই আমদানি, লেনদেন, রিজার্ভ এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
ডলারের মান ও সোনার দামের সম্পর্ক
স্বর্ণের বৈশ্বিক দাম নির্ধারণের প্রধান মুদ্রা হলো মার্কিন ডলার। তাই ডলারের মান কমলে সাধারণত সোনার দাম বাড়ে। আর ডলার শক্তিশালী হলে সোনার দাম কমে যেতে পারে। কারণ ডলারের মান কমে গেলে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ বিকল্প সম্পদ হিসেবে সোনা কেনায় ঝোঁকেন।
চাহিদা ও সরবরাহ: দামের স্বাভাবিক নিয়ামক
অন্যান্য পণ্যের মতো সোনার দামও নির্ভর করে চাহিদা ও সরবরাহের ওপর।
- উৎসব বা বিয়ের মৌসুমে চাহিদা বাড়লে দাম বাড়তে পারে
- বিনিয়োগকারীরা অন্য বাজারে ঝুঁকলে স্বর্ণের চাহিদা কমে, দামও পড়ে
- নতুন খনি আবিষ্কার বা উৎপাদন বৃদ্ধিতে সরবরাহ বাড়লে দাম কমতে পারে
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বৈশ্বিক রাজনীতির প্রভাব
বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো বিপুল পরিমাণ সোনা মজুত রাখে। তারা যদি দ্রুতগতিতে সোনা কেনা শুরু করে বা বিক্রি করে, বাজারে উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়ে। পাশাপাশি যুদ্ধ, রাজনৈতিক অস্থিরতা বা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের সময় নিরাপদ সম্পদ হিসেবে সোনার প্রতি ঝোঁক বাড়ে, ফলে দাম দ্রুত বাড়ে।
বাংলাদেশে সোনার দাম যেভাবে নির্ধারিত হয়
বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক বাজারের মূল্যকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বাজারে স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। আন্তর্জাতিক দামের ওঠানামা, ডলারের বিনিময় হার, আমদানি খরচ ও স্থানীয় চাহিদা—সব বিবেচনায় রেখে বাজুস ভরিপ্রতি দাম সমন্বয় করে ঘোষণা দেয়।
সোনার দামে প্রভাব ফেলে:
- আন্তর্জাতিক স্বর্ণমূল্য
- ডলারের বিনিময় হার
- আমদানি শুল্ক ও ট্যাক্স
- স্থানীয় চাহিদা ও সরবরাহ
সোনার দাম তাই একটি জটিল সমীকরণের ফলাফল। আন্তর্জাতিক বাজার, ডলার, বিনিয়োগকারীদের মানসিকতা, বৈশ্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি—সবকিছু মিলেই তৈরি হয় সোনার দৈনিক দর।
তবুও, হাজার বছরের পুরোনো এই ধাতুটি এখনো বিশ্বের অন্যতম নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য বিনিয়োগ হিসেবে মানুষের আস্থা ধরে রেখেছে। সোনার ঝলক তাই শুধু অলঙ্কারে নয়, বিশ্ব অর্থনীতির প্রতিটি স্তরেই সমান উজ্জ্বল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



