সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার আরিচা স্পীডবোট ঘাট থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে ৭০ ভরি স্বর্ণ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি অসিউর রহমান সিকো, উপজেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সেলিম রেজা ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত রকিবসহ আরো কয়েকজনের বিরুদ্ধে।
গত ১৬ জুলাই সকাল সাড়ে সাতটার দিকে শিবালয়ের আরিচা স্পীডবোট ঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী স্বর্ণ ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান জেলার সিংগাইর উপজেলার গোবিন্দল গ্রামের বাদশা মিয়ার ছেলে।
অপহরণ ও স্বর্ণ লুটের ঘটনায় ভুক্তভোগী মিজানুর রহমান গত ১৬ জুলাই রাতে শিবালয় থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে অজ্ঞাতনামা ৫/৬ জন ঘটনার সাথে জড়িত রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। তবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত কয়েকজন ঘটনার সাথে জড়িত থাকায় মামলা রুজু করতে বিলম্ব করে পুলিশ। এরপর মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপে ঘটনার ছয়দিন পর গত ২২ জুলাই মামলা রুজু করে পুলিশ। এদিকে স্বর্ণ লুটের পর ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ১৬ জুলাই পাবনায় সরবরাহের জন্য ৭০ ভরি স্বর্ণ নিয়ে সকাল সাড়ে সাতটার দিকে আরিচা স্পীডবোট ঘাটে যান ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান। সেখানে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে অজ্ঞাত দুই ব্যক্তি মিজানুর রহমানকে থানায় নেয়ার কথা বলে মোটরসাইকেলে বসিয়ে আরিচা ২নং ফেরি ঘাটে নিয়ে যায়। সেখানে থাকা আরও তিনজন দেশীয় ধারালো অস্ত্রের মুখে মিজানুরকে একটি বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে মিজানুরকে দিনভর আটকে রেখে ভয়-ভীতি দেখিয়ে ৭০ ভরি ওজনের সাতটি স্বর্ণের বার ও একটি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় অপহরণকারীরা। এক পর্যায়ে মিজানুর রহমানকে হুমকি-ধামকি দিয়ে পার্শ্ববর্তী উথলী বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় নিয়ে ছেড়ে দেয়।
মামলা রুজু হওয়ার পর থেকে ভুক্তভোগী স্বর্ণ ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান অজ্ঞাত কারণে বাড়িছাড়া রয়েছেন। গত বুধবার দুপুরে মিজানুর রহমানের মুঠোফোনে কল দিলে তার স্ত্রী ফোন রিসিভ করেন। সাংবাদিক পরিচয় দিতেই ফোনের লাইন কেটে দেন তিনি। এরপর একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি।
এদিকে সিংগাইর সদর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও গোবিন্দল স্বর্ণ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান জানান, স্বর্ণ লুট হওয়ার পর মিজানুর রহমানের সাথে থানায় গিয়ে অভিযোগ জমা দিয়ে এসেছি। তখন মিজানুর বলেছে চারজনকে সে চিনতে পেরেছে। তার মধ্যে একজনের নাম অসিউর রহমান সিকো। সে শিবালয় উপজেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি। আর বিশ্বজিতের বাড়িতে নিয়ে মিজানুরকে আটকে রাখা হয়। সেসময় সেলিম রেজা ও রকিবসহ আরো কয়েকজন ছিল।
মিজানুর রহমানের কোথায় আছেন জানা আছে কি’না জানতে চাইলে খলিলুর রহমান বলেন, ঘিওরের উপজেলা চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান জনি, জেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি বাবুল সরকার ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশারসহ সিনিয়র নেতারা অভিযুক্তদের পক্ষ নিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। সিংগাইরের এমপি জাহিদ আহমেদ টুলুও এ ঘটনা মীমাংসার জন্য বিদেশ থেকে আমাদের চেয়ারম্যান সৌরভকে ফোন দিয়েছিলেন।আমি এটুকুই জানি। বাকিসব আমাদের চেয়ারম্যান সাহেবের সাথে কথা বললে জানতে পারবেন।
এ বিষয়ে সিংগাইর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিনুর রহমান সৌরভের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মিজানুর রহমানকে অপহরণ ও স্বর্ণ লুট হওয়ার পর সেদিন রাতেই মিজানুর রহমানের সাথে থানায় গিয়ে অভিযোগ জমা দিয়ে এসেছি। এরপর কি হয়েছে আমার জানা নেই। মিজানুরের সাথে কথা বলে আপনাকে বিস্তারিত জানাতে পারবো।
এদিকে শুক্রবার (২৬ জুলাই) অভিযুক্ত শ্রকিলীগনেতা অসিউর রহমান সিকোর বক্তব্য জানতে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে আওয়ামী লীগ নেতা বিশ্বজিৎ দাস মুঠোফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন, যে ঘটনার কথা বললেন সেটি সম্পর্কে আমি কিছুই জানিনা। ওই সময়ে আমি জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ভর্তি ছিলাম। চারদিন আগে রিলিজ নিয়ে বাড়ি এসেছি।
এ বিষয়ে শিবালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রউফ সরকার বলেন, স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে অপহরণ ও স্বর্ণ লুটের ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। তবে মামলা হওয়ার পর থেকে বাদির সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছেনা। তিনি ফোনও রিসিভ করছেন না, আমাদের সাথেও যোগাযোগও করছেন না। তবে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে এবং দোষীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। জেলার সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ঘটনাটি ধামাচাপা দিয়ে মীমাংসা করার চেষ্টা করছেন কি’না জানতে চাইলে এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি পুলিশের এই কর্মকর্তা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।