সাইফুল ইসলাম : মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার তরা ব্রিজ থেকে ঢাকা–আরিচা মহাসড়কের ধামরাই উপজেলার নয়ারহাট পর্যন্ত এলাকায় চলাচলকারী বিভিন্ন যানবাহন থেকে গোলড়া হাইওয়ে থানার নামে নিয়মিত মাসিক চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

প্রাপ্ত একটি তালিকা অনুযায়ী, এই সীমানার মধ্যে চলাচলকারী পরিবহন, সিএনজি, লেগুনা, পোশাকশিল্পের শ্রমিক পরিবহন, ড্রাম ট্রাক ও কুরিয়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন যানবাহন থেকে প্রতি মাসে প্রায় ৮ লাখ টাকা চাঁদা তোলা হয়।
তালিকায় দেখা যায়, পরিবহন কোম্পানি ও রুটভেদে সর্বনিম্ন এক হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২৭ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করা হয়। এই চাঁদা গোলড়া হাইওয়ে পুলিশের কাছে পৌছে দেন দেড় শতাধিক ব্যক্তি। তাঁদের অধিকাংশই সরাসরি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে টাকা পৌঁছে দেন এবং বাকিরা টাকা দেন থানার মুন্সির কাছে।
ওই তালিকায় কোন পরিবহন বা রুটে, কে, কত টাকা চাঁদা দেন, কার মাধ্যমে দেন, তাঁদের মোবাইল নম্বরসহ বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। পুলিশের গোয়েন্দা শাখার এক কর্মকর্তার কাছ থেকে এই তালিকা পেয়েছেন এই প্রতিবেদক।
পরিচয় গোপন রেখে তালিকাভুক্ত ১৬২ জনের মধ্যে অন্তত ৫০ জনের সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তাঁরা সবাই চাঁদা দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। কেউ কেউ জানিয়েছেন, বর্তমানে তাঁদের স্থানে অন্য ব্যক্তি দায়িত্ব পালন করছেন। যেমন, আগে রোজিনা পরিবহন থেকে সাড়ে ১১ হাজার টাকা চাঁদা পৌঁছে দিতেন শামীম নামের এক লাইনম্যান। বর্তমানে তাঁর স্থলে দায়িত্ব পালন করছেন রকি। সিএনজি রুটে মোতালেবের পরিবর্তে দায়িত্বে আছেন ফায়াজ। যাত্রীসেবা পরিবহনে আগে দায়িত্বে থাকা হারেজের জায়গায় এখন মোকসেদ দায়িত্ব পালন করছেন। তবে অধিকাংশরাই এখনো চাঁদা দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
চাঁদা প্রদানের তালিকা অনুযায়ী, ৪৫টি পরিবহন কোম্পানি, ১০টি ট্রান্সপোর্ট কোম্পানি, সিএনজি ও লেগুনার ১০টি লাইন, পোশাকশিল্প ও কারখানার শ্রমিক পরিবহনে নিয়োজিত ১২টি কোম্পানি, ১৮টি ড্রাম ট্রাক কোম্পানি এবং কয়েকটি কুরিয়ার সার্ভিস ও ভাঙারি ব্যবসায়ী এই চাঁদা ব্যবস্থার আওতায় রয়েছে।
তালিকায় উল্লেখ রয়েছে, ওয়েলকাম, রাবেয়া রাখী, সাতক্ষীরা লাইন, স্টার লাইন ও সেবা গ্রীন লাইনের পক্ষ থেকে মাসে ৪ হাজার ৫০০ টাকা করে চাঁদা পৌঁছে দেন রকি নামের এক ব্যক্তি। তাঁর মোবাইল নম্বর ০১৭১ দিয়ে শুরু হয়ে ৩১৯ দিয়ে শেষ হয়েছে।
রোজিনা, গ্রীন বাংলা, লালন, ঠিকানা ও সৌদিয়া পরিবহনের মাসিক ৫ হাজার টাকা করে চাঁদা পৌঁছে দেন শাহিন নামে এক লাইনম্যান। সৌদিয়া পরিবহন দেয় মাত্র এক হাজার টাকা। তাঁর মোবাইল নম্বর ০১৭১ দিয়ে শুরু হয়ে শেষ ৮১০ দিয়ে।
এছাড়া যাত্রীসেবা পরিবহন থেকে ১৫ হাজার টাকা, সেলফি পরিবহন থেকে ১০ হাজার টাকা, শুভযাত্রা থেকে ৮ হাজার টাকা, ভিলেজ লাইন থেকে ৫ হাজার টাকা, স্বপ্ন পরিবহন থেকে ২৫ হাজার টাকা, দর্শনা ডিলাক্স থেকে সর্বোচ্চ ২৭ হাজার টাকা, লেগুনা ও সিএনজি বিভিন্ন রুট থেকে ৬ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায়ের তথ্য রয়েছে তালিকায়।
বর্তমানে গোলড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন দেওয়ান কউসিক আহম্মেদ। মাসিক চাঁদা আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এটা আগে ছিল। গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে বন্ধ রয়েছে। তবে একেবারে বন্ধ হয়েছে, তা বলা যাবে না। একবারে তো সবাই সাধু হয়ে যায়নি।”
তিনি আরও বলেন, থানায় যোগদানের ৫–৬ দিনের মাথায় মসজিদের সামনে এক ব্যক্তি তাঁকে জানান, তিনি মুন্সির কাছে দুই হাজার টাকা দিয়েছেন। বিষয়টি জানতে চাইলে ওই ব্যক্তি বলেন, আগের ওসি সোহেল সরোয়ারকে নিয়মিত টাকা দিতেন। পরে মুন্সিকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, টাকা আগের ওসির কাছে পাঠানো হয়েছে।
ওসি দেওয়ান কওসিক আহম্মেদ দাবি করেন, বর্তমানে কোনো ‘মান্থলি সিস্টেম’ নেই। তাঁর ভাষায়, “মান্থলি থাকলে শুধু গোলড়া নয়, শিবালয়ের উথুলি ও সাভার হাইওয়ে থানাতেও থাকতো। তাই এখন আর এটা নেই।”
তবে কথোপকথনের একপর্যায়ে তিনি এই প্রতিবেদককে মাসিক ‘সম্মানি’ দেওয়ার প্রস্তাব দেন এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমের কয়েকজন সাংবাদিককে মাসিক চাঁদা দেওয়ার একটি তালিকাও দেখান।
এ বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশের গাজীপুর রিজিয়নের পুলিশ সুপারের বক্তব্য জানতে তার সরকারি মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



