বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘোষিত কমপ্লিট শাটডাউন অর্থাৎ সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচির প্রথম দিন ছিল গত ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই। সেদিন রাজধানী ঢাকা ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভে উত্তাল।
সেদিন সংঘাত ছড়িয়েছিল শহরের অলি-গলিতে। ঠিক সন্ধ্যে নামার আগে উত্তরার আজমপুর এলাকায় ক্লান্ত শিক্ষার্থীদের মাঝে পানি বিতরণ করছিলেন জ্বলজ্বলে সাহসী তরুণ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ। তার কণ্ঠে ছিল, ‘পানি লাগবে কারো, পানি!’
মুগ্ধ যে হাতে পানি বিলিয়ে যাচ্ছিলেন, সে হাতেই ধরা ছিল দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ। কিন্তু মুহূর্তেই একটি গুলি থামিয়ে দেয় তার সব স্বপ্ন, পরিবার, ভবিষ্যৎ সবকিছু। মুগ্ধর রক্তে যখন ভেসে যাচ্ছিল রাস্তা, তখন তার বন্ধুরা বহু সংগ্রাম করেও সঙ্গে সঙ্গে নিতে পারেননি হাসপাতালে।
এক বছর কেটে গেছে। মুগ্ধর আরও অনেক স্মৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরে তাদের বাড়িতে। যেখানে তার বাবা-মা ভাই-সবাই রয়েছেন, নেই শুধু মুগ্ধই।
মুগ্ধর ভাই মীর মাহমুদুর রহমান দীপ্ত বলেন, ‘আমাদের শুধু একটাই কথা ছিল, ন্যায্য বিচারটুকু চাই। সে সময় আমাদের কাছে ব্ল্যাংক চেক আনা হয়েছিল, যা প্রত্যাহার করি।’
মুগ্ধর বাবা মীর মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘গণহত্যাকারীদের বিচারে সরকার চেষ্টা করছে। কিন্তু আগের যারা নিয়োগপ্রাপ্ত রয়েছেন তারা যদি আন্তরিকভাবে কাজ না করে তাহলে দৃশ্যমান বিচার প্রক্রিয়া আমরা আশা করতে পারি না।’
পড়ার টেবিলে সারি সারি বই। ধুলো জমে গেছে টেবিলে রাখা বই-খাতায়। বোঝাই যায়, অনেক দিন কারও হাত পড়ে না বইগুলোতে। স্বপ্ন ছিল বিদেশ গিয়ে উচ্চতর শিক্ষা নিয়ে ফিরে বাংলাদেশকে তুলে ধরবেন বিশ্বের বুকে। সেই স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল, ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ফারহান ফাইয়াজের।
১৮ই জুলাই, ২০২৪-এ কোটা সংস্কার আন্দোলনে দেশ হারায় আরও এক বীর সন্তানকে। সেদিন দুপুরে ফারহান ফাইয়াজ তার বন্ধুদের সঙ্গে যোগ দেন আন্দোলনে। হঠাৎ করেই পুলিশ ও সশস্ত্র ক্যাডারদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার মাঝে পড়ে যান তারা। চারপাশে রাবার বুলেট, টিয়ারশেল ও গুলির শব্দে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পুরো এলাকা। একপর্যায়ে গুলি ছুড়তে থাকে পুলিশ।
আর এ সময়ই গুলিবিদ্ধ হন ফাইয়াজ। অ্যাম্বুলেন্সে তোলার পর শুয়ে থাকা ফাইয়াজ শেষবারের মতো বন্ধুর দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করেন চিরতরে। তার বিচারের অপেক্ষায় কাটে পরিবারের প্রতিটি মুহূর্ত।
টাকা বাড়ানোর সহজ ও ঝুঁকিমুক্ত উপায়, মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র এখনই ক্রয় করুন
ফাইয়াজের বাবা শহীদুল ইসলাম দীপন বলেন, ‘ফাইয়াজ শান্তশিষ্ট একটা ছেলে, মেধাবী ছাত্র ছিল। অথচ আন্দোলনে সে নেতৃত্ব দিয়ে সবাইকে রাস্তায় জড়ো করবে- এটা আমরা কল্পনাও করতে পারিনি। আমি নীরবে নামাজে বসে কাঁদি। আল্লাহকে বলি, হত্যাকারীদের বিচার দুনিয়াতে না হলেও তোমার কাছে বিচার দিয়ে রাখলাম।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।