জুমবাংলা ডেস্ক : সরকারি স্কুলের শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের বদলির নীতিমালা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ‘সরকারি মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষক বা কর্মকর্তা বদলি নীতিমালা-২০২৪’ শিরোনামে নীতিমালার খসড়াও তৈরি হয়েছে। দ্রুতই এটি চূড়ান্ত করা হবে বলে জানা গেছে। এটি চূড়ান্ত হলে আগের মতো বছরব্যাপী নয়, শিক্ষাবর্ষের অক্টোবরে আগ্রহীরা বদলির আবেদন করতে পারবেন।
নীতিমালা অনুযায়ী, অনিবার্য পরিস্থিতিতে শুধু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব বরাবর আবেদন করা যাবে। আবেদনের জন্য বর্তমান কর্মস্থলে চাকরিকাল ৩ বছর পূর্ণ হতে হবে এবং বদলির জন্য উপযুক্ত কারণ থাকতে হবে।
সূত্রে জানা গেছে, সরকারি মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষক বা কর্মকর্তা বদলি নীতিমালা-২০২৩-এর খসড়া চূড়ান্তকরণে গত ৪ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
সভায় জানানো হয়, সরকারি মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষক বা কর্মকর্তাদের বদলির জন্য নীতিমালা না থাকায় ১৯৯৪ সালের পরিপত্র এবং ২০০৫ সালের অফিস আদেশ অনুযায়ী বদলি বা পদায়ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। তাই একটি খসড়া নীতিমালা করা হয়েছে। সভায় জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলি বা পদায়নের দায়িত্ব মন্ত্রণালয়ে রাখার সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া যেসব সরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজে অধ্যক্ষ পদ রয়েছে, সেখানে অধ্যক্ষ পদে বদলি বা পদায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ মন্ত্রণালয় থাকতে পারে।
নীতিমালায় বলা হয়, বদলির আবেদনের ক্ষেত্রে অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী বিষয়ভিত্তিক সহকারী শিক্ষকের শূন্য পদের বিপরীতে অন্য বিষয়ের শিক্ষক বদলি বা পদায়ন করা যাবে না। শর্ত পূরণ না করলে বা আবেদনের বাইরে কাউকে বদলি করা যাবে না; তবে সরকার উপযুক্ত মনে করলে যে কোনো শিক্ষক বা কর্মকর্তাকে যে কোনো সময় বদলি বা পদায়ন করতে পারবে। বদলির ক্ষেত্রে আবেদনকারীর নিজ জেলা বা পার্শ্ববর্তী জেলায় পদায়নের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। কোনো শিক্ষক বা কর্মচারীর বয়স ৫৭ বছরের বেশি হলে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বদলি করা যাবে না। অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে যাওয়ার এক বছর আগে কোনো শিক্ষক বা কর্মচারী অবসরভাতা গ্রহণের সুবিধার্থে সুবিধাজনক কর্মস্থলে বদলির আবেদন করলে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে।
এতে বলা হয়, মহানগরী ও জেলা সদরে অবস্থিত সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় বা স্কুল অ্যান্ড কলেজে কর্মরত শিক্ষকের কর্মকাল একই প্রতিষ্ঠানে একাধারে ৬ বছরের বেশি হলে তাকে তার নিজ জেলায় অথবা পাশের জেলায় বদলি করা যাবে, তবে তার বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি অথবা অন্য অভিযোগ উত্থাপিত হলে প্রমাণিত হওয়া সাপেক্ষে কর্তৃপক্ষ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণসহ তাকে বদলি বা পদায়ন করতে পারবে। সমতলের কোনো শিক্ষক বা কর্মকর্তাকে পার্বত্য অঞ্চল (রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি) এবং দুর্গম, চর ও হাওর অঞ্চলে বদলি করা হলে এক বছর চাকরির পর তিনি ফের বদলির আবেদন করতে পারবেন, এ ক্ষেত্রে তার আবেদন গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।
আরও বলা হয়, কোনো শিক্ষক বা কর্মকর্তাকে বিশেষ কোনো প্রয়োজনে প্রেষণে নিয়োগ/ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব/চলতি দায়িত্ব/অতিরিক্ত দায়িত্ব/সংযুক্ত/সমবেতন গ্রেডে পদায়নের প্রয়োজন হলে মাউশি মহাপরিচালক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে প্রস্তাব পাঠাবেন। এক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় প্রস্তাব বিবেচনা করে যা উপযুক্ত মনে করবে, তেমন আদেশ দেবে।
নীতিমালা অনুযায়ী, আঞ্চলিক শিক্ষা দপ্তরের উপপরিচালক, সহকারী পরিচালক, বিদ্যালয় পরিদর্শক/পরিদর্শিকা, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, সরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ও সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক/পরিদর্শিকা পদে বদলি বা পদায়নের দায়িত্ব মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব বা জ্যেষ্ঠ সচিবের। সহকারী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, সহকারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (আন্তঃঅঞ্চল), সহকারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (একই অঞ্চল), প্রধান শিক্ষক/শিক্ষিকা, সহকারী প্রধান শিক্ষক/শিক্ষিকা (আন্তঃঅঞ্চল), সহকারী প্রধান শিক্ষক/শিক্ষিকা (একই অঞ্চল), জ্যেষ্ঠ শিক্ষক (আন্তঃঅঞ্চল) ও সহকারী শিক্ষক/শিক্ষিকা (আন্তঃঅঞ্চল) এর বদলি বা পদায়নের দায়িত্ব মাউশি মহাপরিচালকের। অন্যদিকে জ্যেষ্ঠ শিক্ষক (একই অঞ্চল) ও সহকারী শিক্ষক/শিক্ষিকা (একই অঞ্চল) এর দায়িত্ব মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের উপ-পরিচালকের।
মাউশির এক কর্মকর্তা বলেন, যে কোনো বিষয়ে নীতিমালা মন্ত্রণালয় থেকে করা হলেও মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন করে মাউশি। তাই, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা পদের বদলি বা পদায়ন মন্ত্রণালয়ের হাতে গেলে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা মাউশির কথা শুনবে না। তাই, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার পদের বদলি বা পদায়নের দায়িত্ব মাউশির কাছে থাকলেই ভালো হবে।
এ বিষয়ে মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের বদলির আবেদন অক্টোবরে নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। যাতে আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই শেষে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে বদলির আদেশ জারি করা যায়। তবে, নীতিমালাটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এটি চূড়ান্ত করতে আরও কয়েকটি সভা করা লাগতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।