আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় গিয়ে প্রথমে দীর্ঘদিনের পরিচিত গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। সেখান থেকে তিনি ওঠেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক আক্তারুজ্জামানের ভাড়া করা ফ্ল্যাটে। আর এ ফ্ল্যাটেই আনার খুন হয়েছেন বলে ধারণা করছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ।
আজ বুধবার পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) মহাপরিদর্শক (আইজি) অখিলেশ চতুর্বেদী সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আনোয়ারুল আজিমকে খুন করা হয়েছে বলে আমরা গোয়েন্দা তথ্য পেয়েছি। কিন্তু আমরা তদন্তে এসে শনাক্ত করা ফ্ল্যাটে তার মরদেহ পাইনি।’
অখিলেশ চতুর্বেদী বলেন, ‘বাংলাদেশের এমপি আনোয়ারুল আজিম ব্যক্তিগত সফরে এখানে এসেছিলেন। তারপর থেকে তিনি নিখোঁজ হয়ে যান। ১৮ মে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটে একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন তার পরিচিত গোপাল বিশ্বাস। এই অভিযোগের ভিত্তিতেই আমরা তদন্ত করতে শুরু করি।’
তিনি বলেন, ‘এর জন্য ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট থেকে একটি বিশেষ তদন্ত দল গঠন করা হয়। আমরা ২০ মে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এই মামলাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখার জন্য নির্দেশ পাই। এখানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারও মামলাটি গুরুত্ব দিয়ে দেখার নির্দেশ দেয়। পরে আজ ২২ তারিখে আমরা গোয়েন্দা তথ্য পাই যে, হয়তো তাকে খুন করা হয়েছে। তারপর আমরা কেস রেজিস্টার করেছি। আর এই কেসের তদন্তভার পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি নিয়েছে। তারপর আমাদের পুলিশ এই ফ্ল্যাটের অবস্থান শনাক্ত করেছে, যেখানে তাকে সর্বশেষ দেখা গেছে।’
পশ্চিমবঙ্গ সিআইডিপ্রধান বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত যে তথ্য পেয়েছি তাতে সাংসদ আনোয়ারুল আজিম ১২ মে কলকাতায় এসেছেন। পরে এখানে এসে একটি ভাড়া ফ্ল্যাটে ওঠেন। তবে এখানে এখন পর্যন্ত কোনো মরদেহ পাওয়া যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আনোয়ারুল আজিম ১২ মে এখানে এসেছিলেন। তবে তার আগে এসেছিলেন কি না, সেটি পরিষ্কার নয়। এই বিষয়ে আরও কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে সেসব তথ্য প্রকাশ করা যাচ্ছে না।’
আজীমের মরদেহ খণ্ড-বিখণ্ড করা হয়েছে বলে বাংলাদেশের পুলিশ জানিয়েছে, এক সাংবাদিক এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে অখিলেশ চতুর্বেদী বলেন, ‘আমরা মাত্রই তদন্তভার গ্রহণ করেছি। আমাদের এসএসএল আছে, ফিঙ্গার প্রিন্ট ব্যুরো আছে, ফটোগ্রাফি টিম আছে, তারা সবগুলো দেখছে। এই বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া গেলে তা জানিয়ে দেওয়া হবে।’
পশ্চিমবঙ্গের পুলিশের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কী ঢাকা থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে বাংলাদেশ পুলিশ- এক সাংবাদিকের করা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই।’ ওই তিন ব্যক্তির সঙ্গে কী সম্পর্ক ছিল, প্রশ্নের জবাবে অখিলেশ চতুর্বেদী বলেন, ‘আমাদের তদন্তে সব বেরিয়ে আসবে।’
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) মহাপরিদর্শক (আইজি) অখিলেশ চতুর্বেদী
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের অন্যতম শীর্ষ এ পুলি কর্মকর্তা বলেন, ‘ওই সংসদ সদস্য সন্দীপ রায় নামের এক ব্যক্তির ফ্ল্যাটে উঠেছিলেন। তিনি (ফ্ল্যাটের মালিক) পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আবগারি দপ্তরে চাকরি করেন।’ তিনি কাকে ফ্ল্যা ভাড়া দিয়েছিলেন, জানতে চাইলে অখিলেশ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা আখতারুজ্জামান নামের এক ব্যক্তিকে।’
আক্তারুজ্জামানের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সম্পর্ক আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই বিষয়ে আর বিস্তারিত বলা যাবে না। তদন্তের বিষয় আছে।’
উল্লেখ্য, গত ১১ মে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। এরপর তার পরিবারের সদস্যরা তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পারেননি।
ভারতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বরানগর থানার ১৭/৩ মণ্ডল পাড়া লেনের বাসিন্দা গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন আনার। গোপাল বিশ্বাস তার দীর্ঘদিনের পরিচিত। মূলত ডাক্তার দেখানোর উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ থেকে ভারতে যান আনার। পরদিন ১৩ মে দুপুরে ডাক্তার দেখানোর উদ্দেশ্যে বের হন এই সংসদ সদস্য। সন্ধ্যায় ফেরার কথা থাকলেও তিনি আর ফিরে আসেননি। পরে ১৮ মে বরাহনগর থানায় একটি নিখোঁজের অভিযোগ করেন গোপাল বিশ্বাস।
আজ পশ্চিমবঙ্গের বিধাননগরের নিউটাউন এলাকায় সঞ্জিভা গার্ডেন থেকে নিউটাউনের একটি ফ্ল্যাট থেকে রক্তমাখা কাপড় উদ্ধার করে কলকাতা পুলিশ। এই ফ্ল্যাটেই তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা তাদের।
এদিকে, আজ সন্ধ্যায় রাজধানীর শেরে বাংলা নগর থানায় মামলা করেছেন এমপি আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। পরিকল্পিতভাবে খুন করার উদ্দেশ্যে অপহরণের অভিযোগে মামলাটি করেছেন তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।