জুমবাংলা ডেস্ক : বঙ্গোপসাগরের ঢালচর ও হাতিয়ার মধ্যবর্তী এলাকায় বরগুনার চারটি মাছধরার ট্রলারে ভয়াবহ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ট্রলারগুলোতে থাকা সাত জেলেকে মারধর ও একজনকে গুলি করে আহত করেছে জলদস্যুরা। এছাড়া চারটি ট্রলার থেকে প্রায় ৬০ লাখ টাকার জাল, ২০ লাখ টাকার মাছ, নগদ ৫০ হাজার টাকা ও জেলেদের ব্যবহৃত ৩০টি মোবাইল ফোন নিয়ে যায় তারা।
বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯টার দিকে বঙ্গোপসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়া ওই চারটি ট্রলারসহ আহত জেলেদের উদ্ধার করে পাথরঘাটা দক্ষিণ জোনের অধীন কোস্ট গার্ড সদস্যরা। পাথরঘাটা কোস্ট গার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা এইচ এম এম হারুন অর রশীদ রাতে জাগোনিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
জলদস্যুদের হামলায় আহত জেলেরা হলেন- পাথরঘাটা উপজেলার বড় টেংরা এলাকার মো. মনির হোসেন মাঝি (৩৫), কালমেঘা এলাকার মো. বেল্লাল (৪০), মো. আবুল কালাম (৫০), ছোনবুনিয়া কালমেঘা এলাকার মো. বেল্লাল (৩১) বরগুনা সদর উপজেলার চরকগাছিয়া এলাকার মো. জাহিদ (২২), নলী এলাকার মো. ইব্রাহিম (৩০), আজোকাঠি এলাকার মো. ইলিয়াস (২০) এবং নলী সাজিপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. মোস্তফা (৬০)।
কোস্ট গার্ড ও জেলেদের সূত্রে জানা যায়, পাথরঘাটা থেকে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যায় এফবি তুফান-২, এফবি মদিনা-১, ‘এফবি মা-১ ও এফবি তারেক-১ ট্রলার। বৃহস্পতিবার রাতে ২৫ থেকে ৩০ জন মুখোশধারী জলদস্যু একে একে চারটি ট্রলারে হামলা চালিয়ে জেলেদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। এসময় দস্যুরা চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলছিল। তাদের সবার হাতে দেশীয় অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র ছিল।
জলদস্যুরা চারটি ট্রলার থেকে প্রায় ৬০ লাখ টাকার জাল, ২০ থেকে ২২ লাখ টাকার মাছ, ৫০-৬০ হাজার টাকা নগদ অর্থ এবং জেলেদের ব্যবহৃত ৩০টি মোবাইল ফোন লুট করে।
ডাকাতির সময় জেলেরা বাধা দিলে সাতজনকে মারধরসহ এক জেলেকে শটগান দিয়ে গুলি করে দস্যুরা। এছাড়াও ডাকাতি শেষে চারটি ট্রলারের ইঞ্জিন বিকল করে পালিয়ে যায় তারা।
এ ঘটনার খবর পেয়ে ডাকাতির শিকার ট্রলার এবং জেলেদের উদ্ধার করে কোস্টগার্ড। আহত জেলেদের পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়। পরে সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য গুলিবিদ্ধ বেল্লাল ও আহত মোস্তফাকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ডাকাতির খবর শুনে তাৎক্ষণিক আমরা পুলিশ, কোস্টগার্ড ও উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করেছি। এছাড়া পাথরঘাটা থেকে উদ্ধারের জন্যে ট্রলার পাঠিয়ে তাদের ঘাটে নিয়ে আসা হয়। আহত ছাড়া বাকি জেলেরা বাড়ি ফিরে গেছেন।
পাথরঘাটা কোস্ট গার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা এইচ এম এম হারুন অর রশীদ বলেন, খবর পেয়ে বঙ্গোপসাগরে ডাকাতির শিকার ৪ ট্রলারসহ জেলেদের উদ্ধার করা হয়েছে। আহতদের চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে পাথরঘাটা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মেহেদী হাসান বলেন, বঙ্গোপসাগরে যে এলাকায় জলদস্যুদের হামলার ঘটনা ঘটেছে, তা আমাদের এলাকায় পড়েনি। এ কারণে ওই এলাকার সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তবে ট্রলারগুলোতে থাকা অধিকাংশ জেলেই পাথরঘাটার বাসিন্দা হওয়ায় যদি কেউ আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়, তাহলে আমরা তা সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অবহিত করবো।
এ বিষয়ে পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান খান বলেন, মালিকদের পক্ষ থেকে ডাকাতির খবর জানতে পেরে আমি নৌবাহিনী, পুলিশ, কোস্ট গার্ডসহ সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে পদক্ষেপ গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছিলাম। এছাড়া মালিক ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখেছিলাম। রাতে তাদের উদ্ধার করে পাথরঘাটা নিয়ে আসা হয়েছে। এদের মধ্যে গুরুতর আহত দুই জেলেকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।