জুমবাংলা ডেস্ক : ঈদের ছুটি শেষে আজ রবিবার খোলার কথা ছিল দেশের সব স্কুল। কিন্তু আগের দিন শনিবার তীব্র তাপদাহের কারণে সকল স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে সব শিক্ষার্থীকে স্কুল কর্তৃপক্ষ এ খবর জানায়নি। কোনো কোনো স্কুল থেকে শিক্ষার্থীদের ফোনও করা হয় ক্লাসে যথাসময়ে উপস্থিত হতে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে অভিভাবকরা কোমলমতি এসব শিশু শিক্ষার্থীকে স্কুলে নিয়ে আসার পর জানতে পারেন ক্লাস হবে না, স্কুল বন্ধ থাকবে গরমের কারণে।
এদিকে সকালে অভিভাবকদের কাছ থেকে খবর পেয়ে পশ্চিম রামপুরার উলন রোডের বর্ণমালা আদর্শ বিদ্যাপীঠ নামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের ক্লাসে বসানো হচ্ছে। চলছে কিছুক্ষণ পর ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি। এসময় এ প্রতিবেদক জানতে চাইলে উপস্থিত শিক্ষকরা জানান, প্রধান শিক্ষক খোলা রাখতে বলেছেন। সে সময়ও প্রধান শিক্ষক আসেননি। যোগাযোগ করা হলে প্রধান শিক্ষক এই প্রতিবেদককে অপেক্ষা করতে বলেন। এ সময় স্কুলটি কখন থেকে খোলা সেই তথ্য নিশ্চিত হতে পাশের দোকানে গিয়ে মালিক ও কর্মচারীদের সাক্ষাৎকার নিয়ে ফিরে দেখেন স্কুলে তালা। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক কেউ নেই। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সরকার বন্ধ ঘোষণার পর স্কুল খোলা রাখার বিষয়টি এ প্রতিবেদক সরেজমিনে দেখে ফেলায় তড়িঘড়ি করে তালাবদ্ধ করে চলে যান প্রধান শিক্ষক ও অন্যরা। এরপর প্রধান শিক্ষক জোসনা রানী মল্লিককে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এছাড়া সকাল পৌনে ৮টার দিকে রামপুরা একরামুন্নেছা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের গেটে দাঁড়িয়ে দেখা যায় কয়েকজন শিক্ষার্থী স্কুলে প্রবেশ করছে। এরপর স্কুল থেকে বাইরে বের হতে দেখা যায়। এ সময় ক্ষোভ প্রকাশ করে অভিভাবকরা বলেন, গরমের কারণে সরকার স্কুল বন্ধ দিয়েছে, কিন্তু আমাদের তা জানায়নি স্কুল কর্তৃপক্ষ। এ জন্য সকালে এত ভোগান্তিতে পড়তে হলো। আসতে হলো এখন আবার যাচ্ছি এই রোদের মধ্যে।
একরামুন্নেছা স্কুল থেকে বেরিয়ে আসার কারণ জানতে চাইলে ৭ম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী (নাম প্রকাশ করা হলো না) বলে, ‘স্কুলে আসছিলাম। ভেতরে যাওয়ার পরে দেখলাম সব ক্লাসরুমে তালা দেওয়া। আমাদের স্কুলের অফিস পিয়ন কাশেম মামা বললেন বাসায় চলে যাও। গরমের কারণে ক্লাস করতে অসুবিধা হওয়ায় সরকার সাত দিনের ছুটি দিয়েছে।’
পরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
৮টা ৩০ মিনিটে পশ্চিম রামপুরার উলন রোডে অবস্থিত বর্ণমালা আদর্শ বিদ্যাপীঠ বিদ্যালয়টি খোলা রাখা হয়েছে। অভিভাবকরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে স্কুলে দিয়ে চলে যাচ্ছেন।
সরকার কর্তৃক স্কুল বন্ধের ব্যাপারে জানেন কি না এমন প্রশ্ন করা হলে অভিভাবক ইয়াসমিন আক্তার বলেন, আমার বাচ্চাকে নিয়ে ঈদ ও পহেলা বৈশাখের ছুটি কাটিয়ে আজকেই স্কুলে দিয়ে গেলাম। যদিও গতকাল টিভিতে খবরে দেখেছি সরকার গরমের কারণে স্কুল বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু স্কুল যে বন্ধ তা জানায়নি আমাদের। জানালে স্কুলে আসতাম না।’
৮টা ৪৩ মিনিটে বিদ্যালয়টি খুলে রাখার ব্যাপারে জানতে চেয়ে প্রিন্সিপাল জোৎস্না রানী মল্লিককে ফোন করলে তিনি বলেন, ‘আজকে ক্লাস হয়ে নোটিশটা আমরা দিয়ে দেব। আমরা তো নোটিশ দিতে পারি নাই বন্ধের। তো আজকে ক্লাস হয়ে নোটিশটা দিয়ে দেব। আমরা সরকারি আদেশ তো মানতেছি। নোটিশ যে দেব অভিভাবকদের সাথে আমাদের যোগাযোগের কোনো মাধ্যম তো নাই ফোন ছাড়া। আর বাচ্চারা স্কুলে আসছে সেই হিসাবে তাদের ডায়েরিটা লিখে দিতাম। আমাদের ম্যাসেজের কোনো মাধ্যম নাই কারণ এরা লো কোয়ালিটির গার্ডিয়ান। তারা ম্যাসেজ পড়তেও অনেকে পারে না। তাদের অনেকের বাসায় ইন্টারনেট নাই। আমাদের ছুটির পরে আজকেই স্কুল খুলবে। নির্দেশটা রাতে দিয়েছে। আর সবাইকে ম্যাসেজ দিয়ে তো বলা সম্ভব না।’
দিদার আদর্শ কিন্ডারগার্টেন
সকাল ৯টায় পূর্ব রামপুরা দিদার আদর্শ কিন্ডারগার্টেনের প্রধান গেট দিয়ে শিক্ষার্থীদের ঢুকতে দেখা যায়। সরকারি নির্দেশনা না মেনে খোলা ছিল স্কুলটি।
৯টা ১৩ মিনিটের দিকে স্কুলের এক ছাত্রকে রাস্তার বাম পাশে ব্যাগ কাঁধে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। কথা হয় তার সঙ্গে। এই শিক্ষার্থী বলছিল, ‘আমি স্কুলে যাব না। খবরে দেখেছি সরকার স্কুল বন্ধ ঘোষণা করেছে। আমি ক্লাস করতে যাব না। তাই দাঁড়িয়ে দেখছি আমার ক্লাসের বন্ধুরা কেউ আসছে কি না। তারা যদি আসে তাহলে আমি ক্লাস করব নয়তো আমি চলে যাব।’
পরে ৯টা ২০ মিনিটে কিন্ডারগার্টেনটির ভেতরে প্রবেশ করে শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা এবিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। এমনকি কিন্ডারগার্টেনের প্রধান শিক্ষককে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
গ্রীন গার্ডেন ল্যাবরেটরী হাই স্কুল
দিদার আদর্শ কিন্ডারগার্টেনের পাশেই অবস্থিত এই স্কুলটি। সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে পূর্ব রামপুরা পুরান পুলিশ ফাঁড়ির গলির মাথায় অবস্থিত স্কুলটি খোলা রাখতে দেখা যায়। এমনকি স্কুলটিতে শিক্ষার্থীদেরকে দিতে আসেন অভিভাবকরা।
৯টা ৩৪ মিনিটে স্কুলটির এক শিক্ষককে স্কুল খোলা রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের কোনো কিছু করার নেই বা বলার নেই। স্কুল কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই আমরা স্কুলটি খোলা রেখেছি। বন্ধ করতে বললে বন্ধ করে ফেলব।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেন, যখন সরকারি সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমে চলে আসে তখন এটা না জানার কোনো সুযোগ নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষার নীতি নির্ধারণের সর্বোচ্চ অথরিটি। রাষ্ট্রের অনুমোদন নিয়েই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে ভিন্ন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই। যদি এর ব্যত্যয় কেউ করে সেটি দেখবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে যেসব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে সেগুলোর বিষয়ে দেখভাল করছি। এর বাইরে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেমন কিন্ডারগার্টেনে যদি নিয়মের ব্যত্যয় হয় সেটি শিক্ষা মন্ত্রণালয় দেখবে।
সারাদেশের হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত রাখার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর
চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা বিবেচনায় আগামী ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সব সরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং কলেজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পবিত্র রমজান মাস, স্বাধীনতা দিবস, ঈদুল ফিতরের ছুটি সমন্বয় করে গত ২৬ মার্চ থেকে দেশের নিম্নমাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। শুক্রবার ও শনিবার বন্ধ থাকায় রবিবার থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়মিত পাঠদান শুরুর কথা ছিল। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছুটি আরও আগে থেকে শুরু হলেও একই দিন খোলার কথা ছিল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।