স্পোর্টস ডেস্ক : চট্টগ্রামের রোমাঞ্চকর বুধবারের রাতের সেরা দৃশ্যপট কোনটা? বাংলাদেশি বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে শ্রীলঙ্কাকে ২৫৫ রানের আটকে দেওয়া নাকি সেঞ্চুরি হাকানো নাজমুল হোসেনের সঙ্গে অর্ধশতক করা মুশফিকুর রহিমের অবিচ্ছেদ্য ১৬৫ রানের জুটি! যেটাকেই বেছে নেন না কেন, জয়ের কৃতিত্বে কোনো অংশে কোনটা পিছিয়ে থাকার কথা নয়।
তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে শুরুর ছন্দটা বুনে দেন বোলাররা, সেই ধারাবাহিকতায় বাকি কাজটুকু সারেন ব্যাটাররা। আরো নির্দিষ্ট করে বললে নাজমুল ও মুশফিক। দুই বিভাগের দায়িত্বশীলতায় প্রথম ওয়ানডেতে ৬ উইকেটের বড় জয় বাংলাদেশের।
টস রিপোর্টে লঙ্কান ধারাভাষ্যকার রাসেল আরনন্ড বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় আগে ব্যাট করে এই উইকেটে ২৭৫-২৮০ রান জয়ের জন্য যথেষ্ঠ।’ জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের পরিসংখ্যান বলছে, এই মাঠে জেতা ম্যাচে প্রথম ইনিংসে গড় স্কোর ২৮৬ রান। যদিও গতকালের ম্যাচের আগে এখানে ২৯টি ওয়ানডের মধ্যে আগে ব্যাটিং করা দল জয় পায় ১১ বার, হারে ১৭ বার। তানজিম হাসান, তাসকিন আহমেদদের তোপে ২৮৬ তো দূর, ২৬০ রানের গণ্ডিও টপকাতে পারেনি সফরকারীরা।
কোনরকম আড়াই শ পার করে থামে ২৫৫ রানে। রাতের শিশির ভেজা উইকেটে শ্রীলঙ্কার এই রান মোটেও যথেষ্ঠ ছিল নাজমুল, মুশফিকদের সামনে।
অথচ টস জিতে কী দুর্দান্ত শুরু পেয়েছিল শ্রীলঙ্কা। সর্বশেষ আফগানিস্তান সিরিজে দারুণ শুরু এনে দেওয়া আভিষ্কা ফার্নান্দো ও পাথুম নিশাঙ্কা গতকালও সেই ধারাবাহিকতা দেখান।
পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে জুটি ভাঙার আগে আসে ৭১ রান। এরপর তানজিমের আঘাতে এলোমেলো লঙ্কান ইনিংস। ফার্নান্দো ৩৩ রানে আউট হওয়ার পর নিশাঙ্কা ফেরেন ৩৬ করে। ১২ রান পর তানজিদের তৃতীয় শিকার সাদিরা সামারাবিক্রমা, ৩ রান করেন তিনি। এরপর ৪৪ রানের জুটিতে সফরকারীদের খেলায় ফেরান অধিনায়ক কুশল মেন্ডিস ও চারিথ আসালাঙ্কা।
১৮ রান করা আসালাঙ্কা মেহেদী হাসান মিরাজের শিকার হন।
পরে জানিথ লিয়ানাগের সঙ্গে জুটিতে দলকে এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি ফিফটি তুলে নেন কুশল। ৭৫ বলে ৫৯ করে তাসকিন আহমেদের প্রথন শিকার হন তিনি। এরপর অল্প সময়ের ব্যবধানে তাসকিন ফেরান ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা (১২) ও মহেশ থিকশানাকে (১)। অপর প্রান্তে ধরে খেলে ফিফটি তুলে নেন লিয়ানাগে। ইনিংস সর্বোচ্চ ৬৭ রান করেন তিনি। লঙ্কানদের শেষ তিন ব্যাটারকে ফেরান শরিফুল ইসলাম। এক ওভার এক বল আগে তারা গুটিয়ে যায় ২৫৫ রানে। ৯ উইকেট নেন বাংলাদেশের তিন পেসার।
বোলারদের বেধে দেওয়া ছন্দে সুর মেলাতে পারেননি চার নম্বর থেকে আবার ওপেনিংয়ে উঠে আসা লিটন দাস। বাঁহাতি পেসার দিলশান মাদুসঙ্কার অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ইনসাইড এজ হয়ে লেগ স্টাম্প উপড়ে যায় ডানহাতি ব্যাটারের। গোল্ডেন ডাকে ফেরেন তিনি। ক্যারিয়ারে এটি ষষ্ঠ বার গোল্ডেন ডাক তার। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে গোল্ডেন ডাকে লিটনের ওপর আছেন শুধু হাবিবুল বাশার (৭ বার)। সুবিধা করতে পারেনি সৌম্য সরকার (৩) ও তাওহিদ হৃদয় (৩)। ২৩ রানে বাংলাদেশের ৩ উইকেট হারানো দেখে হাতে গোনা যে কজন সমর্থক খেলা দেখতে এসেছিলেন, তাদের অনেকে বাড়ির পথ ধরেন।
তবে যার ব্যাটে রান নেই বলে দুয়োধ্বনি উঠেছিল, সেই নাজমুল চতুর্থ উইকেটে মাহমুদ উল্লাহর (৩৭) সঙ্গে ৬৯ রানের জুটি গড়ে ম্যাচে ফেরান দলকে। এরপর মুশফিককে নিয়ে লঙ্কা শাসন করেন নাজমুল। পঞ্চম উইকেটে দুজনের ১৬৫ রানের অবিচ্ছেদ্য জুটির ফাকে ওয়ানডেতে তৃতীয় সেঞ্চুরির সঙ্গে ক্যারিয়ারসেরা ১২২ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন নাজমুল। ১২৯ বলের ইনিংসটি সাজান ১৩টি চার ও ২টি ছয়ে। অর্ধশতক করা মুশফিক অপরাজিত থাকেন ৮৪ বলে ৭৩ রানে। ৩২ বলে হাতে রেখে পাওয়া জয়ে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।