ডা. হাকিম নার্গিস মার্জান : থানকুনি পরিচিত বহুবর্ষজীবী লতানো ভেষজ উদ্ভিদ । অঞ্চলভেদে এটি আদামনি, টেয়ামানিক, আদানগুনি, মানামানি, মানকি ও ঢোলামনি নামেও পরিচিত। থানকুনির রয়েছে বহুবিধ গুণ। ওষুধ হিসেবে পাতা ও সম্পূর্ণ উদ্ভিদ ব্যবহার হয়।
কী আছে
থানকুনিতে এশিয়াটিকোসাইড, এশিয়াটিক অ্যাসিড, ব্রাহ্মোসাইড, ব্রাহ্মিক অ্যাসিড, ম্যাডেক্যাসোসাইড, অ্যামাইনো অ্যাসিড, ফ্যাটি অ্যাসিড, বিটা ক্যারোটিন, পেন্টাসাইক্লিক ট্রাইটারপেনয়েড, সেন্টেলোজ ও সেন্টেলোসাইড বিদ্যমান।
উপকারিতা
ক্ষত সারাতে, পেটের অসুখ ভালো করতে, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে এবং সৌন্দর্যচর্চায় থানকুনি পাতা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সপ্তদশ শতক থেকেই আফ্রিকা, জাভা ও সুমাত্রাতে ওষুধ হিসেবে থানকুনির ব্যবহার শুরু হয়। থানকুনি ডায়রিয়া ও আমাশয় নিরাময়সহ হজমের সমস্যা দূর করে। পাকস্থলী ও মূত্রনালির সংক্রমণ দূর করে । আলসার নিরাময় দুর করে। নিয়মিত থানকুনি সেবনে লিভারের ক্রিয়ার উন্নতি ঘটে। কাশি এবং শ্বাসযন্ত্রের বিভিন্ন অসুখ সারাতে সাহায্য করে। আর্থ্রাইটিস এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি বাড়ায়, অনিদ্রা দূর করে এবং চুল পড়া কমায়। থানকুনি অণুজীবনাশক হওয়ায় অ্যান্টিসেপ্টিক হিসেবে কাজ করে। থানকুনি স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে মানসিক অবসাদ দূর করে। মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়াতে এই পাতা খুবই কার্যকরী। এ জন্য বিশেষজ্ঞরা শিশুদের
থানকুনি পাতার রস খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন। সৌন্দর্যচর্চার অনন্য উপাদান হিসেবেও থানকুনি ব্যবহৃত হচ্ছে। থানকুনি ত্বককে সতেজ ও প্রাণবন্ত রাখতে সহায়তা করে। ব্রণের কমায় এবং ত্বকের দাগ দূর করতে থানকুনির জুড়ি মেলা ভার। ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং কোলাজেনের উৎপাদন বাড়ায়। ত্বকের বলিরেখা রোধ এবং নমনীয়তা বাড়াতে কোলাজেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। থানকুনি ত্বকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি জুগিয়ে ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সহায়তা করে। এতে ত্বক থাকে কোমল এবং ত্বকে বয়সের ছাপ কম দৃশ্যমান হয়। নিয়মিত থানকুনি পাতা গ্রহণ করলে শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং পেন্টাসাইক্লিক ট্রাইটারপেন্স নামের উপাদানের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। ফলে ব্রেনসেল চমৎকারভাবে কাজ করে এবং স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটে।
থানকুনি ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক বিভিন্ন ফর্মুলেশনে ঔষধি উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বহুমুখী ঔষধি গুণাগুণের জন্য থানকুনি পাতা কিংবা সম্পূর্ণ উদ্ভিদ বিভিন্ন ডোজেস ফর্মে বাজারজাত হচ্ছে। যেমন কুরছ পেনিট্যাব, থানকুনি ক্যাপসুল, থানকুনি ট্যাবলেট, থানকুনি পাউডার, থানকুনি চা, থানকুনি অয়েন্টমেন্ট ইত্যাদি।
লেখক- ডা. হাকিম নার্গিস মার্জান, অল্টারনেটিভ মেডিসিন গবেষক, হামদর্দ ল্যাবরেটরিজ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।