যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন ইউনিভার্সিটি ও ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (এমআইটি) ভয়াবহ গুলিবর্ষণের ঘটনার পর ডাইভারসিটি ভিসা (ডিভি) বা গ্রিন কার্ড লটারি কর্মসূচি সাময়িকভাবে স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে জানান, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্দেশে যুক্তরাষ্ট্রের সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস (ইউএসসিআইএস)-কে গ্রিন কার্ড লটারি কর্মসূচি স্থগিত করতে বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার মৃত অবস্থায় পাওয়া সন্দেহভাজন ব্যক্তি পর্তুগালের নাগরিক। তিনি ২০১৭ সালে ‘ডাইভারসিটি ভিসা’ বা গ্রিন কার্ড লটারি কর্মসূচির (ডিবি-১) মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছিলেন এবং পরে গ্রিন কার্ড পান।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোম জানান, ট্রাম্পের নির্দেশে এই ভিসা কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে, যাতে ‘এই ভয়াবহ কর্মসূচির কারণে আর কোনো আমেরিকান ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।’
মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, তারা মনে করছেন ৪৮ বছর বয়সি ক্লাউদিও নেভেস ভালেন্তে চলতি সপ্তাহের শুরুতে এমআইটির পর্তুগিজ অধ্যাপক নুনো লুরেইরোকেও হত্যা করেছেন।
এই কর্মসূচির আওতায় প্রতিবছর সর্বোচ্চ ৫০ হাজার ভিসা দেওয়া হয়। যেসব দেশে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের হার কম, সেসব দেশের নাগরিকদের মধ্য থেকে লটারির মাধ্যমে এই ভিসা দেওয়া হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে ক্রিস্টি নোম বলেন, ২০১৭ সালে নিউইয়র্ক সিটিতে একটি ট্রাক হামলায় আটজন নিহত হওয়ার পর ট্রাম্প আগেও এই কর্মসূচি বন্ধ করার জন্য ‘লড়াই করেছিলেন’।
নোমের ভাষ্যমতে, ওই হামলার দায়ে একাধিক যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত ইসলামিক স্টেট সমর্থক উজবেকিস্তানের নাগরিক সাইফুল্লো সাইপভও ডিবি-১ কর্মসূচির মাধ্যমেই যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছিলেন।
নোমের এই মন্তব্য আসে এমন এক সময়ে, যখন নিউ হ্যাম্পশায়ারের সেলেমে একটি স্টোরেজ থেকে নেভেস ভালেন্তের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পুলিশের ধারণা, তিনি নিজেই গুলিবিদ্ধ হয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
পুলিশ জানায়, ভিডিও ফুটেজ এবং জনসাধারণের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তদন্তকারীরা একটি গাড়ি ভাড়া দেওয়ার স্থানে পৌঁছান। সেখানে তারা সন্দেহভাজনের নাম পান এবং তাকে তাদের প্রধান সন্দেহভাজনের সঙ্গে মিলিয়ে নেন। এর মাধ্যমে ছয় দিন ধরে চলা কয়েকটি রাজ্যজুড়ে অনুসন্ধানের সমাপ্তি ঘটে।
তার কাছে একটি ব্যাগ ও দুটি আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়া যায়। কাছাকাছি একটি গাড়িতে পাওয়া আলামত ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের গুলিবর্ষণের ঘটনার সঙ্গে মিলে গেছে বলে রোড আইল্যান্ডের অ্যাটর্নি জেনারেল পিটার নেরনহা জানিয়েছেন।
ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিনা প্যাকসন বলেন, নেভেস ভালেন্তে ২০০০ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেছিলেন এবং সেখানে পদার্থবিজ্ঞানে পিএইচডি করছিলেন।
তিনি বলেন, বর্তমানে তার সঙ্গে ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কোনো সক্রিয় সম্পর্ক নেই’।
কর্মকর্তারা জানান, তারা বিশ্বাস করেন নেভেস ভালেন্তে সোমবার ম্যাসাচুসেটসের ব্রুকলাইনে নিজের বাড়িতে এমআইটির অধ্যাপক নুনো এফ গোমেজ লুরেইরোকে (৪৭) গুলি করে হত্যা করেন। প্রভিডেন্স থেকে ব্রুকলাইন প্রায় ৫০ মাইল (৮০ কিলোমিটার) দূরে অবস্থিত।
পুলিশ জানিয়েছে, নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে পর্তুগালের একই বিশ্ববিদ্যালয়ে দুজনই পড়াশোনা করেছিলেন।
ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা একটি প্রত্যক্ষদর্শী এবং সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে সন্দেহভাজনের গাড়ি শনাক্ত করার পর দুটি মামলার মধ্যে যোগসূত্র পাওয়া যায় বলে কর্মকর্তারা জানান।
ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের গুলিবর্ষণের ঘটনার মাত্র দুই দিন পর একই গাড়ি অধ্যাপকের হত্যাকান্ডের স্থানের কাছেও দেখা যায়।
কর্তৃপক্ষ এখনো দুই হামলার কোনো সম্ভাব্য উদ্দেশ্য জানায়নি।
গত ১৩ ডিসেম্বর ফাইনাল পরীক্ষার সময় ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ইঞ্জিনিয়ারিং ভবনে এক বন্দুকধারীর গুলিবর্ষণে দুই শিক্ষার্থী নিহত এবং আরও নয়জন আহত হন।
নিহতরা হলেন— আলাবামার বাসিন্দা ১৯ বছর বয়সি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এলা কুক এবং ১৮ বছর বয়সি মুখাম্মাদ আজিজ উমুরজোকভ। তিনি একজন উজবেক-আমেরিকান এবং সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেছিলেন।
সূত্র: বিবিসি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



