জুমবাংলা ডেস্ক : নিজের সন্তানের সামনেই তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য সৈয়দ সাদাত আহমেদকে। হোটেল রেডিসন এর বিপরীত পাশের সড়ক থেকে তুলে নেওয়া হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথম এক সপ্তাহ পরে আমি ধরেই নিয়েছি আমার আর ফেরত নাই, এটাই শেষ। যেরকম আমাকে ইন্টারপ্রিটেশন বলাই হতো যে আপনি কিন্তু এখান থেকে আর কোথাও যাচ্ছেন না। আপনার যা বলার এখানে বলে দেন। কারণ, আপনি বললেও শেষ না বললেও আপনি শেষ। মাইক্রোবাসে দরজা বন্ধ যখন হচ্ছিল বাচ্চার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। তো বাচ্চাটা তখন খুব প্যানিক ছিল, ট্রমায় ছিল। তো দরজা যখন বন্ধ হলো ওটাই তাকে লাস্ট দেখেছি। তারপর পেছনে যিনি ছিল, তিনি পিছে কাপড় দিয়ে চোখটা বেঁধে দিল। আরেকটা কাপড় দিয়ে হয়তো মাথা কাভার পেত। সামনে যিনি ছিলেন উনি বললেন আপনি হাত পা সিটের উপরে রাখেন। তো হাতটা সিটের উপরে রাখার সাথে সাথে হ্যান্ডকাপ করে ফেলে।’
সাদাত আহমেদ বলেন, ‘তারপর গাড়িটা অনেক দূর চলে। আমরা যেহেতু নিজেরা গাড়ি চালাই আমরা একটা সেন্স অফ ডাইরেকশন আছে যে গাড়ি কোনদিকে যাচ্ছে? এই জন্য তারা গাড়িটা প্রায় ঘণ্টাখানেকের মতো এদিক ওদিক ঘুরাল। ভাঙা রাস্তা নরমাল রাস্তা এগুলো পার হওয়ার পরে একটা জায়গায় নামাল। নামানোর পরে ভাবলাম যে গাড়ি থেকে নামলে তো এটা মাটি। মাটিতে পা ফেলার সাথে সাথে সিঁড়ি আসলো। ভাবলাম যে হয়তো উপরে যাবে কিন্তু দেখলাম সেটা নিচের দিকে গেল। তখন বুঝলাম যে মাটির নিচের দিকে যাচ্ছি আমি। তো যাওয়ার পর একটা রুমে আনল। রুমে আনার পরে বসাল, চোখ খুলে দিল, হাত খুলে দিল। বাকি তিন চারজন সামনে দাঁড়ানো ছিল। তারা সবাই মাস্ক পড়া কাভার্ড সিভিল ড্রেসে। তারা বলল আমাকে একটা লুঙ্গি গেঞ্জি দিয়ে বলল এখানে লুঙ্গি গেঞ্জি আছে পড়েন। আপনার কাপড়টা খুলে সাইডে রেখে দেন, রিল্যাক্স হন। আমি বললাম যে কেন আমি এটা করবো। আমাদের স্যাররা আপনার সাথে কিছু আলাপ করবে, আলাপ শেষ হওয়া পর্যন্ত আপনি রিল্যাক্স থাকবেন। আলাপ যখন শেষ হয়ে যাবে তখন আপনাকে ছেড়ে দেওয়া হবে।’
কোথায় তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তা আজও তাঁর অজানা। গোপন স্থানে নেওয়ার পর সাদাতের ওপর জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতনও করা হয়। এ কাজে যারা জড়িত ছিল তারা যে এ দেশের নয় সেটা তাদের কথা বলার ভাষায় নিশ্চিত হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে বিএনপির নির্বাহী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘যখন আমাকে কেউ বলবে দাদা জল খাবেন নাকি, গলা শুকিয়ে গেছে। তখন কিন্তু কানে বাজে যে এই লোকটা কে? এই ভাষাটা কে? তখন আমার কানে বেজে ছিল যে এখানে কে? আমি আসলে কোথায় আছি? তারা আমাকে প্রশ্ন করছে।’
ঘুম হওয়ার সপ্তাহখানেক পর সাদাত বুঝতে পারেন, পৃথিবীর খোলা আকাশের নিচে সন্তানের হাত ধরে আর হাঁটা হবে না। আর সময় কাটানো হবে না পরিবারের কোনও সদস্যদের সঙ্গেওভ মনের গভীরে প্রতিনিয়তই প্রবল হতে শুরু করে মৃত্যুভয়। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা মা ধরে নিয়েছে আমি নাই। আমি কোনওদিন আশা করিনি আমি আমার বাপ মাকে দেখব, আশা করিনি আমি আমার বাচ্চাদের দেখব।’
আয়না ঘরে নির্মম নির্যাতনের মুখেও বিএনপির এই নেতাকে দলের বিরুদ্ধে কিছু বলাতে পারেনি। অবশেষে ১৩টি সাদা কাগজ দেওয়া হয়েছিল বক্তব্য লিখে দেওয়ার জন্য। সেখানে তিনি দলের নীতি আদর্শ নিয়ে লিখেছেন, এতে আরও রোষানলে পড়েন তিনি। এ প্রসঙ্গে সাদাত বলেন, ‘আপনাকে একটা সুযোগ দিচ্ছি ১৩টি কাগজ দিলাম, একটি পেন্সিল দিলাম। আপনার যা লেখা লিখে দেন। আপনি সই না করলে সই কইরেন না কিন্তু আপনি লিখে দেন। আমরা জানতে চাচ্ছি আপনি কাগজটা রেখে শুধু শিউর করেন। এতে কনফিডেন্সটা থাকবে আমাদের। আপনার রুমে সময় নিয়ে বসে লেখেন।’
নিখোঁজ হওয়ার পর সাদাতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলত না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউই। পরিবারের সদস্যরাও ধরে নিয়েছিলেন তিনি আর ফিরবেন না। তিনি বলেন, ‘দোষটা কী ছিল? স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা গিয়েছে তাদের পরিবারের সাথে আমরা কি কথা বলি না। আমাদের ঘুম খুন করার সময় আমরা হয়তো একটা আন্দোলন করতে গিয়ে মারাই যেতাম, তাই বলে কি আমার বাপ মার সাথে কথা বলবে না, আমার বউ বাচ্চার সঙ্গে কেউ কথা বলবে না?’
নিখোঁজ থাকার চার মাস ৮ দিন পরে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য সৈয়দ সাদাত আহমেদকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। গণমাধ্যমের সামনে রামপুরা ব্রিজ থেকে তাকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তিনি আরো বলেন, ‘তখন সামনে দেখলাম যে ডিবির গুলশানের এডিসি বসা। আর বাকিরা সব ডিবির জ্যাকেট পরা। তখন বুঝলাম যে আমাকে ডিবির হাতে হ্যান্ডওভার করেছে। এডিসি গুলশান বলল যে আপনি রিল্যাক্স করেন। মুখ ধুয়ে আসেন, চা নাস্তা খান। আপনাকে খানা দেওয়া হবে, একটু রিল্যাক্স করেন। ততক্ষণে বুঝলাম যে সাড়ে চার মাস কেটে গেছে। তারপরে আমি ডিবি অফিসে ডিসির একটা এক্সটেনশন রুমে ছিলাম। ডিবি ডাইরি করা হয়নি বা লকআপে নেওয়া হয়নি। ডিবির ওখানে আমাকে ২৮ দিন রাখা হয়েছিল।’
ছবিটি জুম করে দেখুন লুকিয়ে আছে একটি কুকুর, পারলে খুঁজে বের করুন
গুম কমিশনে লিখত অভিযোগ দিয়েছেন সাদাত। বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আয়না ঘরের মতো কোনো প্রতিহিংসার রাজনীতি এ দেশে যেন ফিরে না আসে। তারেক রহমান এখনো আমাদেরকে বলে যাচ্ছেন তোমরা কোনো রকম অশান্তি, ভাঙচুর, চাঁদাবাজি কিছু করবা না। প্রতিহিংসার রাজনীতি তিনি এবং আমরা বিশ্বাস করিনা।’ সেই সঙ্গে যারা গুম ছিলেন তাদের কাউন্সিলিং দেওয়ার আহ্বান জানান বিএনপির এই নেতা।
সূত্র : জনকণ্ঠ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।