জুমবাংলা ডেস্ক : বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং একুশে পদকপ্রাপ্ত রফিক আজাদের স্মৃতিবিজড়িত ধানমণ্ডির বাড়িটি আজ গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। দীর্ঘ ২৯ বছর ধরে যেখানে কবি তাঁর পরিবারসহ বসবাস করেছেন, সেই স্মৃতিস্মারক বাড়ি আজ যেন কালের গর্ভে বিলীন হওয়ার পথে।
Table of Contents
ধানমণ্ডির ১ নম্বর সড়কের ১৩৯/৪এ ঠিকানায় অবস্থিত চার ইউনিটের এই বাড়িটি কবি রফিক আজাদ ও তাঁর স্ত্রী দিলারা হাফিজের স্মৃতি বহন করে। আজ বুধবার সকালে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ বাড়িটির পূর্বাংশে থাকা দুটি ইউনিট গুঁড়িয়ে দেওয়ার কাজ শুরু করেছে।
স্মৃতির ছায়া ও বাড়ির ইতিহাস
১৯৮৮ সালে এই বাড়িটি কবি দিলারা হাফিজের নামে সাময়িকভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়। সে সময় তিনি ইডেন কলেজে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এই বাড়িতে বসেই রফিক আজাদ ২০টিরও বেশি কাব্যগ্রন্থ রচনা করেন, যা বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। এটি শুধু একটি বাসস্থান ছিল না, বরং একটি জীবন্ত সাহিত্যঘর ছিল এই বাড়ি।
দিলারা হাফিজ সর্বশেষ সরকারি তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ এবং মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে অবসর গ্রহণ করেছেন। এই দম্পতির দুই সন্তান বর্তমানে প্রবাসে রয়েছেন।
আইনি জটিলতা ও উচ্ছেদ অভিযান
দীর্ঘদিন পর, ২০১২ সালে সৈয়দ নেহাল আহাদ নামের একজন ব্যক্তি বাড়িটির মালিকানা দাবি করেন এবং আদালতের রায় তার পক্ষেই যায়। এরপর দিলারা হাফিজ আদালতে মামলা করলে, আদালত বাড়িটির ওপর স্থিতাবস্থা দেন এবং ২০২৫ সালের ২৫ মে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেন।
তবে মামলাটি চলমান থাকা সত্ত্বেও গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় আজ বাড়িটি উচ্ছেদের অভিযান শুরু করে, যা অনেককেই বিস্মিত করেছে। দিলারা হাফিজ এই ঘটনায় চরম হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “জাতীয় জীবনে একজন অগ্রগণ্য কবি ও বীর মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি, যা সংরক্ষণের দাবি রাখে, সেটি এভাবে গুঁড়িয়ে দেওয়া নিঃসন্দেহে দুঃখজনক।”
স্মৃতি সংরক্ষণের আবেদন
কবি রফিক আজাদের মতো ব্যক্তিত্বের স্মৃতি রক্ষায় রাষ্ট্রের উদ্যোগ থাকা উচিত। তাঁর সাহিত্যকর্ম ও মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তাঁর স্মৃতিবিজড়িত স্থাপনাগুলো সংরক্ষণ প্রয়োজন। দিলারা হাফিজ গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে বাড়ির অংশবিশেষের স্থায়ী বন্দোবস্তের জন্য আবেদন করেও সাড়া পাননি বলে জানান।
এই প্রসঙ্গে আরও পড়ুন: গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে রফিক আজাদের স্মৃতিস্মারক বাড়ি – কালের কণ্ঠ
জনমনে প্রতিক্রিয়া
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ঘটনায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। সাহিত্যপ্রেমী, শিক্ষাবিদ এবং সংস্কৃতি কর্মীরা বাড়িটি রক্ষা এবং স্মৃতিসৌধে রূপান্তরের দাবি তুলেছেন। রফিক আজাদ একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাহিত্যিক হিসেবে বাংলাদেশের ইতিহাসে অমর। তাঁর স্মৃতিগুলো সংরক্ষণ করা আমাদের জাতিগত দায়িত্ব।
এই ঘটনার মাধ্যমে সমাজে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠে এসেছে: আমরা কি আমাদের কৃতিদের যথাযথ সম্মান দিতে পারছি?
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।