টাকার জোরে কিংবা তদবির করে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হওয়ার দিন শেষ হয়ে আসছে। এখন থেকে থানার ওসি হিসেবে পদায়ন করতে সংশ্লিষ্ট পুলিশ ইন্সপেক্টরের সততা, মেধা, জ্যেষ্ঠতা, প্রশিক্ষণ ও সন্তোষজনক চাকরির বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে আমলে নেবেন সংশ্লিষ্টরা। ৫৪ বছরের ঊর্ধ্ব বয়সী কোনো ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) এখন থেকে আর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসেবে নিয়োগ পাবেন না।
এ ছাড়া আর্থিক অনিয়ম ও নৈতিক স্খলনজনিত কারণে কোনো ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) সমগ্র চাকরিজীবনে ১টি গুরুদ-প্রাপ্ত হলে তিনি ওসি হিসেবে পদায়নের অযোগ্য হবেন। এ ছাড়া ওসি হিসেবে সর্বোচ্চ ৪টি থানা বা ৬ বছর দায়িত্ব পালন করলে (যেটি আগে ঘটে) পরবর্তী সময়ে তিনি আর থানার ওসি হিসেবে পদায়নের জন্য বিবেচিত হবেন না। আবার টানা তিন বছরের বেশি কোনো ইন্সপেক্টর একই থানায় ওসি হিসেবে থাকতে পারবেন না। পুলিশ সদর দপ্তরের জারি করা থানার অফিসার ইনচার্জ হিসেবে পদায়নে নীতিমালায় এসব বিষয় যুক্ত করা হয়েছে।
দেশের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক ‘আমাদের সময়’-এর আজকের শেষ পাতায় প্রকাশিত সাংবাদিক শাহজাহান আকন্দ শুভের একটি বিশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
গত ৩ জুলাই এ নীতিমালাটি জারি করেন ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ বাহারুল আলম। নীতিমালা অনুযায়ী থানার ওসি পদায়নে পুলিশের সব রেঞ্জ ডিআইজি, পুলিশ কমিশনারসহ ইউনিট প্রধানদের লিখিত নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে। এখন থেকে ওসি হিসেবে পদায়নের আগে নীতিমালা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা ওসি হওয়ার যোগ্য কি না তা খতিয়ে দেখা হবে।
২০১৫ সালের ৬ এপ্রিল পুলিশ সদর দপ্তরে পলিসি গ্রুপের সভায় ৯ দফা নির্দেশনা-সংক্রান্ত ওসি পদায়ন নীতিমালা প্রস্তুত করা হয়। বিষয়গুলো
যাচাই-বাছাই শেষে একই বছরের ১৮ মে তৎকালীন আইজিপি একেএম শহীদুল হক স্বাক্ষরিত এক পরিপত্রে ওসি পদায়ন নির্দেশনা জারি করা হয়। কিন্তু পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ওই নির্দেশিকা অনুসরণ করেননি দায়িত্বশীল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। অভিযোগ রয়েছে, তখন ওসি পদায়নে জোরালো তদবির এবং অর্থ লেনদেন প্রাধান্য দেওয়া হয়। সামনের দিনগুলোতেও নতুন নীতিমালা অনুসরণ করা হবে কিনা তা নিয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন।
ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ বাহারুল আলম গতকাল আমাদের সময়কে বলেন, তদবির করে আর থানার ওসি হওয়া যাবে না। কোনো ইন্সপেক্টর ওসি হতে চাইলে তাকে নীতিমালা অনুযায়ী ফিট হতে হবে। এরপরই কেবল ওসি হওয়ার জন্য যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের জারি করা নীতিমালা অনুযায়ী, ওসি হিসেবে পদায়নের ক্ষেত্রে এইচএসসি/সমমান বা তদূর্ধ্ব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ইন্সপেক্টরদের (নিরস্ত্র) অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ওসি হিসেবে ফিটলিস্টভুক্তির জন্য ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) পদে ন্যূনতম ৩ বছর চাকরি সম্পন্ন করতে হবে। এই ফিটলিস্ট প্রণয়নের ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতার বিষয়ে পিএএলের অনুসৃত নীতিমালা অনুসরণ করা হবে। ফিটলিস্টভুক্ত কর্মকর্তাদের জ্যেষ্ঠতার ক্রমানুসারে ওসি হিসেবে পদায়ন করা হবে। ফিটলিস্টর্ভুক্ত কর্মকর্তাকে নিজ ও স্পাউজের জেলা ছাড়া অন্য জেলায় ওসি হিসেবে পদায়ন করা হবে।
নীতিমালা অনুযায়ী, ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) পদে ২ বা ততোধিক দ- এবং সমগ্র চাকরিকালে ৩ বা ততোধিক গুরুদ-প্রাপ্ত হলে ওসি হিসেবে পদায়নের অযোগ্য হবেন। এ ছাড়া কোনো থানায় ওসি পদায়নের আগের ১ বছরের মধ্যে লঘুদ- কিংবা দুই বছরের মধ্যে গুরুদ-প্রাপ্ত হলে তাকেও থানায় পদায়ন করা যাবে না। থানায় ফিটলিস্টভুক্ত একাধিক ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) থাকলে জ্যেষ্ঠতম ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) প্রযোজ্য শর্তাবলি পূরণ করলে তাকে থানার ওসি হিসেবে পদায়ন করা হবে। এ ছাড়া ইন্সপেক্টর (তদন্ত/অপারেশনস্) পদে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাকে ধারাবাহিকভাবে একই থানার ওসি হিসেবে পদায়ন করা যাবে না। তবে অন্য কোনো থানা বা ইউনিটে ন্যূনতম ৬ মাস চাকরি করার পর তাকে পদায়ন করা যাবে। কোনো কর্মকর্তা একবার ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করলে তাকে একই থানায় দ্বিতীয়বার ওসি হিসেবে পদায়ন করা যাবে না।
নীতিমালা অনুযায়ী অফিসার ইনচার্জ হিসেবে ২ বছর চাকরি করার পর অন্যত্র বদলি করা যাবে। এক্ষেত্রে একই থানায় ধারাবাহিকভাবে সর্বোচ্চ ৩ বছর চাকরি করার সুযোগ থাকবে। এ ছাড়া কোনো থানার ওসিকে ১৮ মাসের আগে অন্যত্র বদলির প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট রেঞ্জ ডিআইজি, পুলিশ কমিশনাররা নিজ অধিক্ষেত্রের মধ্যে অন্যত্র বদলি, প্রত্যাহার এবং সংযুক্ত করতে পারবেন। এক্ষেত্রে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের পূর্বানুমতির প্রয়োজন হবে না। একটি থানার কর্মকাল গণনায় ন্যূনতম ছয় মাস ধারাবাহিকভাবে চাকরি করতে হবে। তবে কোনো অভিযোগ বা বিচ্যুতির প্রমাণকসহ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ৬ মাসের আগে প্রত্যাহার হলে ওই থানা গণনার জন্য বিবেচিত হবে। আগের কর্মস্থল, জেলা পুলিশ বা ইউনিটে ওসি হিসেবে পদায়ন বা বদলি করা যাবে না।
নীতিমালা বলছে, থানার ওসি পদে পদায়নে ফিস্টলিস্টভুক্ত হওয়ার পর পুলিশ স্টেশন ম্যানেজমেন্ট কোর্স (পিএসএমসি) সম্পন্ন করাতে হবে। কোনো কর্মকর্তাকে থানার ওসি হিসেবে পদায়নের ক্ষেত্রে তার প্রশিক্ষণের ফলাফল মূল্যায়ন করা হবে। থানার ওসি পদে পদায়নের জন্য পিইটিতে উত্তীর্ণ হওয়ার শর্ত প্রয়োজন নেই। তবে ফিটলিস্টভুক্ত করার ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের শারীরিক সক্ষমতার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। থানার ওসি পদে পদায়নের ক্ষেত্রে বিগত পাঁচ বছরের এসিআরে গড়ে ন্যূনতম ৮০ নম্বর থাকতে হবে। তবে বিগত তিন বছরের এসিআরে কোনো ‘বিরূপ মন্তব্য’ থাকলে ওসি হিসেবে পদায়নের অযোগ্য বিবেচিত হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।