সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই মোবাইল হাতে নিলেন সুমাইয়া। চোখ আটকে গেল ব্যাংক অ্যাপে। একেবারে শূন্য অ্যাকাউন্ট! গত রাতে এক অজানা নাম্বার থেকে এসেছিল একটা লিংক, “আপনার ডেলিভারি ট্র্যাক করুন” – শুধু তাই ট্যাপ করেছিলেন। কিন্তু সেই ট্যাপটাই তাকে ফাঁদে ফেলল। লাখ টাকা উধাও। চোখে জল, হাত কাঁপছে, মনে হচ্ছিল পুরো দুনিয়া অন্ধকার। সুমাইয়ার মতো প্রতিদিন হাজারো বাংলাদেশি শিকার হচ্ছেন মোবাইল হ্যাকিংয়ের। আপনার প্রিয় স্মার্টফোনটিই কি পরিণত হতে যাচ্ছে আপনার সবচেয়ে বড় শত্রুতে? না, তা হতে দেবেন না। এই গাইডে জানুন হ্যাকিং থেকে মোবাইল বাঁচানোর উপায়, যেন আপনার ডিজিটাল জীবন হয় সুরক্ষিত, নিশ্চিন্ত।
মোবাইল হ্যাকিং: কেন আজকের যুগে এটি আপনার সবচেয়ে বড় শত্রু?
আমাদের হাতের মুঠোয় থাকা এই যন্ত্রটি এখন শুধু ফোন নয়; এটি আমাদের ব্যাংক, ব্যক্তিগত ডায়েরি, ছবির অ্যালবাম, ব্যবসার নথি, এমনকি বাড়ির দরজার চাবিও! সাইবার অপরাধীরা ভালো করেই জানে এই শক্তির কেন্দ্রবিন্দু কোথায়। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (BTRC) এর সাম্প্রতিক তথ্য (২০২৪) অনুযায়ী, দেশে প্রতিদিন গড়ে ৫০০+ মোবাইল হ্যাকিং সংক্রান্ত অভিযোগ রেকর্ড করা হয়, যার প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক গুণ বেশি। সাইবার সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ এবং ডিজিসেক ল্যাবস-এর প্রতিষ্ঠাতা, জুনায়েদ কবিরের মতে, “২০২৩-২০২৪ সালে বাংলাদেশে মোবাইল ভিত্তিক ফিশিং আক্রমণ ৭০% বৃদ্ধি পেয়েছে। হ্যাকাররা এখন অত্যন্ত পরিশীলিত টার্গেটেড আক্রমণ চালাচ্ছে, যেখানে সাধারণ ইউজারনেম-পাসওয়ার্ড চুরির দিন প্রায় শেষ।”
মোবাইল হ্যাকিংয়ের চিত্র:
হ্যাকিং পদ্ধতি | বাংলাদেশে প্রভাব (%) | প্রাথমিক লক্ষ্য | সাধারণ ফলাফল |
---|---|---|---|
ফিশিং লিংক/এসএমএস | ৪৫% | ব্যাংকিং তথ্য, লগইন ক্রেডেনশিয়াল | আর্থিক ক্ষতি, অ্যাকাউন্ট হাইজ্যাক |
দূষিত অ্যাপ (ম্যালওয়্যার) | ৩০% | পার্সোনাল ডেটা, লোকেশন, কন্ট্যাক্ট | ডেটা চুরি, স্পাইওয়্যার কার্যকলাপ |
পাবলিক Wi-Fi স্নিফিং | ১৫% | অনলাইন অ্যাক্টিভিটি, লগইন তথ্য | আইডেন্টিটি থেফ্ট, ডেটা ইন্টারসেপশন |
সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং | ১০% | ব্যক্তিগত তথ্য, ট্রাস্ট অপব্যবহার | টার্গেটেড স্ক্যাম, ব্ল্যাকমেইল |
আপনার ফোনে কি অজানা অ্যাপ ইনস্টল আছে? কখনো কি অপরিচিত Wi-Fi নেটওয়ার্কে কানেক্ট করেছেন? মাঝেমধ্যেই কি আপনার ফোন অতিরিক্ত গরম হয় বা ব্যাটারি দ্রুত শেষ হয়? এগুলোই হতে পারে বিপদের প্রথম সংকেত।
হ্যাকিং থেকে মোবাইল বাঁচানোর ১০টি বিজ্ঞানসম্মত ও ব্যবহারিক উপায়
১. সফটওয়্যার আপডেট: আপনার ফোনের প্রথম সুরক্ষা প্রাচীর
আপনার অ্যান্ড্রয়েড বা iOS ডিভাইসের জন্য নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেট শুধু নতুন ফিচার আনে না, এটি প্যাচ করে গুরুত্বপূর্ণ সিকিউরিটি ভালনারেবিলিটি। হ্যাকাররা পুরনো সফটওয়্যারের দুর্বলতা খুঁজে বের করে তাকেই টার্গেট করে।
- কী করবেন?
সেটিংস > সিস্টেম > সফটওয়্যার আপডেট
-এ গিয়ে ‘অটো-আপডেট অন’ করুন।- মাসে অন্তত একবার ম্যানুয়ালি চেক করুন।
- শুধু অপারেটিং সিস্টেম নয়, সমস্ত অ্যাপ আপ টু ডেট রাখুন (Play Store/App Store-এ গিয়ে ‘Update All’)।
- কেন জরুরি? গুগল ও অ্যাপল প্রতিটি আপডেটে আগের সংস্করণের জানা নিরাপত্তা ফাঁক বন্ধ করে।
২. অ্যাপের অনুমতি: ‘অবশ্যই প্রয়োজন’ নীতি মেনে চলুন
অনেক অ্যাপ অহেতুক অনুমতি চায়। একটি টর্চলাইট অ্যাপের কি আপনার লোকেশন বা কন্ট্যাক্ট লিস্ট এক্সেসের দরকার?
- কী করবেন?
সেটিংস > অ্যাপস > পারমিশন ম্যানেজার
-এ যান।- প্রতিটি অ্যাপের জন্য অনুমতি রিভিউ করুন (লোকেশন, মাইক্রোফোন, ক্যামেরা, কন্ট্যাক্টস, স্টোরেজ ইত্যাদি)।
- শুধুমাত্র অত্যাবশ্যকীয় অনুমতিগুলো দিন। ‘Deny’ বা ‘Ask Every Time’ সিলেক্ট করুন।
- অ্যাপ ব্যবহার শেষে ব্যাকগ্রাউন্ডে চলা বন্ধ করুন।
- বাংলাদেশি প্রেক্ষাপট: ঢাকার একজন আইটি বিশেষজ্ঞ তানভীর আহমেদের মতে, “৮০% ক্ষেত্রেই ম্যালওয়্যার আক্রান্ত অ্যাপগুলো অতিরিক্ত পারমিশন দাবি করে, যা ব্যবহারকারীরা অসতর্কতায় মঞ্জুর করে ফেলেন।”
৩. শক্তিশালী, অনন্য পাসওয়ার্ড ও টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন (2FA)
‘password123’, ‘জন্মতারিখ’, ‘নাম123’ – এগুলো এখন হ্যাকারদের জন্য উন্মুক্ত দরজা!
- কী করবেন?
- পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করুন: LastPass, Bitwarden (ফ্রি), 1Password-এর মতো টুলস শক্তিশালী, জটিল এবং প্রতিটি অ্যাকাউন্টের জন্য ভিন্ন পাসওয়ার্ড জেনারেট ও স্টোর করে। মুখে রাখার চাপ নেই!
- টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন (2FA) চালু করুন: শুধু পাসওয়ার্ড নয়, দ্বিতীয় একটি স্তর যোগ করুন। এটি হতে পারে:
- SMS কোড (কম নিরাপদ, কিন্তু না থাকার চেয়ে ভালো)।
- অথেন্টিকেটর অ্যাপ (Google Authenticator, Microsoft Authenticator – বেশি নিরাপদ)।
- হার্ডওয়্যার সিকিউরিটি কি (সর্বোচ্চ নিরাপত্তা, ব্যাংকিং/বড় অ্যাকাউন্টের জন্য)।
- বায়োমেট্রিক্স ব্যবহার করুন: ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা ফেস আনলক (যদি ডিভাইস সাপোর্ট করে) পিন/প্যাটার্নের চেয়ে সাধারণত বেশি সুরক্ষিত।
- গুরুত্বপূর্ণ: Google অ্যাকাউন্ট, Apple ID, ব্যাংকিং অ্যাপস এবং সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে 2FA অবশ্যই চালু করুন। এটি হ্যাকিং থেকে মোবাইল বাঁচানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায়গুলোর একটি।
৪. ফিশিং ও স্ক্যাম সনাক্তকরণ: ক্লিক করার আগে দশবার ভাবুন
সুমাইয়ার ঘটনাটি ফিশিংয়ের ক্লাসিক উদাহরণ। হ্যাকাররা আপনাকে জরুরি, লোভনীয় বা ভীতিকর বার্তা দিয়ে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিতে প্ররোচিত করে।
- সতর্কতার লক্ষণ:
- অজানা প্রেরক: নাম্বার বা ইমেইল ঠিকানা চিনতে না পারা।
- ভুল বানান ও ব্যাকরণ: পেশাদার প্রতিষ্ঠানগুলোতে এগুলো বিরল।
- তাড়াহুড়ো ও হুমকি: “আপনার অ্যাকাউন্ট বন্ধ হবে!”, “জরুরি! এখনই ক্লিক করুন!”
- অস্বাভাবিক লিংক: হোভার করলেই (লিংকের উপর কার্সর রাখলে) আসল ঠিকানা না দেখালে সতর্ক হন।
- অনুরোধ: পাসওয়ার্ড, ওটিপি, কার্ড নম্বর, ব্যক্তিগত তথ্য চাওয়া।
- কী করবেন?
- কখনোই অজানা লিংকে ক্লিক করবেন না বা অ্যাটাচমেন্ট ওপেন করবেন না।
- সরাসরি যাচাই করুন: ব্যাংকের লিংক এল বলে? অ্যাপ বা ব্রাউজারে সরাসরি ব্যাংকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে লগ ইন করুন।
- রিপোর্ট করুন: সন্দেহজনক এসএমএস/ইমেইলকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান (ব্যাংক, ক্যারিয়ার) বা
www.cybercrime.gov.bd
-এ রিপোর্ট করুন।
৫. অ্যাপ সোর্স: শুধুমাত্র বিশ্বস্ত স্টোর থেকে ইনস্টল করুন
দূষিত অ্যাপ হ্যাকিং থেকে মোবাইল বাঁচানোর পথে প্রধান বাধা।
- কী করবেন?
- শুধুমাত্র অফিসিয়াল স্টোর ব্যবহার করুন: Google Play Store (Android), Apple App Store (iOS)।
- ‘Unknown Sources’ বন্ধ রাখুন: Android-এ
সেটিংস > সিকিউরিটি
-তে গিয়ে এটি নিশ্চিত করুন। - অ্যাপ রিভিউ ও ডেভেলপার চেক করুন: হাজারো ডাউনলোড, ভালো রেটিং, বিশ্বস্ত ডেভেলপার (যেমন: প্রতিষ্ঠানের নাম) আছে কি?
- অতিরিক্ত সতর্কতা: Play Protect (Android) চালু রাখুন (
Play Store সেটিংস > Play Protect
). iOS ডিভাইসে ডিফল্ট সিকিউরিটি বেশি কঠোর।
- বাংলাদেশে ঝুঁকি: APK ফাইল শেয়ারিং (WhatsApp/টেলিগ্রামের মাধ্যমে) বা পাইরেটেড অ্যাপ/গেম ডাউনলোড করার প্রবণতা এখানে ব্যাপক, যা ম্যালওয়্যার ইনস্টলেশনের প্রধান পথ।
৬. পাবলিক Wi-Fi: মুক্ত নেটওয়ার্ক, বিপদ সংকুল পথ
শপিং মল, ক্যাফে, বিমানবন্দরের ফ্রি Wi-Fi ব্যবহার করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। হ্যাকাররা সহজেই এই নেটওয়ার্কে ডেটা আটকাতে (Sniff) ও দেখতে পারে।
- কী করবেন?
- গুরুত্বপূর্ণ কাজ এড়িয়ে চলুন: পাবলিক Wi-Fi-তে ব্যাংকিং, শপিং, বা পাসওয়ার্ড দিয়ে লগ ইন করবেন না।
- VPN ব্যবহার করুন: একটি বিশ্বস্ত ভিপিএন সার্ভিস (যেমন: ProtonVPN, NordVPN – ফ্রি/পেইড) আপনার ইন্টারনেট ট্রাফিক এনক্রিপ্ট করে, স্নিফারদের থেকে রক্ষা করে। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড (BTCL) বা অন্যান্য আইএসপির অফিসিয়াল হটস্পট তুলনামূলক কম ঝুঁকিপূর্ণ, তবুও সতর্কতা প্রয়োজন।
- মোবাইল ডেটা প্রাধান্য দিন: গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য নিজের মোবাইল ডেটা (3G/4G/5G) ব্যবহার করাই নিরাপদ।
ফরগেট নেটওয়ার্ক
করুন: ব্যবহার শেষে Wi-Fi সেটিংস থেকে সেই নেটওয়ার্ক ‘Forget’ করুন যাতে ফোন স্বয়ংক্রিয়ভাবে আবার কানেক্ট না হয়।
৭. ডেটা ব্যাকআপ ও রিমোট ম্যানেজমেন্ট: শেষ হাতিয়ার
ফোন হারানো, চুরি বা র্যানসমওয়্যার আক্রান্ত হলে ব্যাকআপই আপনার তথ্য ফিরে পেতে সাহায্য করবে। রিমোট ম্যানেজমেন্ট ফোনটি নিরাপদ রাখতে বা ডেটা মুছে ফেলতে দেবে।
- কী করবেন?
- নিয়মিত ব্যাকআপ নিন:
- Android: Google Drive-এ ব্যাকআপ চালু করুন (
সেটিংস > Google > Backup
). - iOS: iCloud ব্যাকআপ চালু রাখুন (
সেটিংস > [আপনার নাম] > iCloud > iCloud Backup
).
- Android: Google Drive-এ ব্যাকআপ চালু করুন (
- ফাইন্ড মাই ডিভাইস সক্রিয় রাখুন:
- Android:
সেটিংস > Google > Find My Device
চালু করুন। - iOS:
সেটিংস > [আপনার নাম] > Find My > Find My iPhone
চালু করুন।
- Android:
- এনক্রিপ্টেড ব্যাকআপ (ঐচ্ছিক): অতিসংবেদনশীল ডেটার জন্য পাসওয়ার্ড-প্রোটেক্টেড জিপ ফাইল বা এনক্রিপশন সক্ষম ব্যাকআপ টুল ব্যবহার করুন।
- নিয়মিত ব্যাকআপ নিন:
৮. ফিজিক্যাল সিকিউরিটি: চোখের সামনের হুমকি
ফোনটি আপনার হাতের বাইরে গেলেই বিপদ!
- কী করবেন?
- স্ক্রিন লক সর্বদা চালু রাখুন: পিন, প্যাটার্ন, পাসওয়ার্ড, ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা ফেস আনলক। স্ক্রিন বন্ধ হবার সময় নির্ধারণ করুন (৩০ সেকেন্ড বা ১ মিনিট)।
- নোটিফিকেশন প্রিভিউ সীমিত করুন: লক স্ক্রিনে ব্যাংক OTP বা সংবেদনশীল মেসেজের কন্টেন্ট দেখাবেন না (
সেটিংস > নোটিফিকেশন > লক স্ক্রিন নোটিফিকেশন
). - অচেনা লোকের হাতে ফোন দেবেন না: বিশেষ করে ATM বুথে বা কোথাও পাসওয়ার্ড/OTP লিখতে বলা হলে।
- অ্যাপ লক ব্যবহার করুন (ঐচ্ছিক): ব্যাংকিং বা গ্যালারি অ্যাপের জন্য অতিরিক্ত লেয়ার যোগ করুন।
৯. সাইবার সিকিউরিটি সচেতনতা: নিয়মিত আপডেট থাকুন
হ্যাকারদের কৌশল প্রতিনিয়ত বদলায়। আপনার জ্ঞানও আপ টু ডেট রাখতে হবে।
- কী করবেন?
- বিশ্বস্ত সূত্র ফলো করুন: বাংলাদেশের
ডিজিসেক ল্যাবস
,সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন
, আন্তর্জাতিকভাবেKaspersky Blog
,The Hacker News
(সতর্কতার সাথে)। - সেমিনার/ওয়েবিনারে অংশ নিন: বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিয়মিত ফ্রি সচেতনতামূলক সেশন আয়োজন করে।
- পরিবারের সদস্যদের শেখান: বিশেষ করে বয়স্করা ও শিশুরা যেন ঝুঁকি বুঝতে পারে।
- বিশ্বস্ত সূত্র ফলো করুন: বাংলাদেশের
১০. অ্যান্টি-ভাইরাস/সিকিউরিটি অ্যাপ: একটি অতিরিক্ত স্তর
যদিও অফিসিয়াল অ্যাপ স্টোর ও আপ টু ডেট সিস্টেম প্রধান সুরক্ষা, একটি বিশ্বস্ত মোবাইল সিকিউরিটি অ্যাপ স্ক্যান করে অতিরিক্ত নিরাপত্তা দিতে পারে।
- কী করবেন?
- বিশ্বস্ত ব্র্যান্ড বেছে নিন: Bitdefender Mobile Security, Kaspersky Internet Security for Android, Malwarebytes (iOS-এর জন্য বিল্ট-ইন সিকিউরিটি সাধারণত যথেষ্ট)।
- সাবধান! অনেক ফ্রি “সিকিউরিটি” অ্যাপ নিজেই ম্যালওয়্যার বা অতিরিক্ত বিজ্ঞাপন বহন করে। শুধুমাত্র নামকরা ব্র্যান্ড এবং Play Store/App Store থেকে ডাউনলোড করুন।
হ্যাকিং থেকে মোবাইল বাঁচানোর এই উপায়গুলো কোন জাদুর কাঠি নয়, বরং দৈনিক সতর্ক অভ্যাসের সমষ্টি। আপনার প্রিয় স্মার্টফোনটি শুধু একটি ডিভাইস নয়; এটি আপনার গোপনীয়তা, অর্থ, এবং স্মৃতির ভান্ডার। সামান্য অসতর্কতাই ডেকে আনতে পারে বিপুল ক্ষতি। আজই এই গাইডের পরামর্শগুলো মেনে আপনার ফোনের সিকিউরিটি সেটিংস চেক করুন, অপ্রয়োজনীয় পারমিশন বন্ধ করুন, 2FA চালু করুন, এবং অ্যাপ আপডেট করুন। নিরাপদ থাকুন এই ডিজিটাল যুগে, কারণ আপনার সচেতনতাই হ্যাকারদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে শক্তিশালী ঢাল। আপনার ডিজিটাল নিরাপত্তা নিজের হাতে নিন – এখনই শুরু করুন!
জেনে রাখুন (FAQs)
১. কিভাবে বুঝব আমার মোবাইল হ্যাক হয়েছে?
হ্যাকিংয়ের কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো: ব্যাটারি অস্বাভাবিক দ্রুত শেষ হওয়া, ফোন অতিরিক্ত গরম হওয়া, ধীর গতি, অজানা অ্যাপ বা পপ-আপ দেখা, ডেটা ব্যবহার বেড়ে যাওয়া, পরিচিতজনদের থেকে অদ্ভুত মেসেজ পাওয়া, অ্যাকাউন্ট থেকে অননুমোদিত লেনদেন, অথবা সেটিংসে নিজে থেকে পরিবর্তন। সন্দেহ হলে ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন করে (এয়ারপ্লেন মোড) একটি বিশ্বস্ত অ্যান্টি-ম্যালওয়্যার দিয়ে স্ক্যান করুন এবং পাসওয়ার্ডসমূহ পরিবর্তন করুন।
২. ফ্রি Wi-Fi ব্যবহার করলে কি সত্যিই এত ঝুঁকি?
হ্যাঁ, পাবলিক Wi-Fi নেটওয়ার্কগুলোতে এনক্রিপশন না থাকলে বা দুর্বল থাকলে, একই নেটওয়ার্কে থাকা হ্যাকাররা আপনার ইন্টারনেট ট্রাফিক দেখতে পারে (যেমন: লগইন তথ্য, ব্রাউজিং হিস্ট্রি)। ব্যাংকিং, শপিং বা গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাউন্টে লগ ইন করা এড়িয়ে চলুন। যদি ব্যবহার করতেই হয়, একটি বিশ্বস্ত VPN ব্যবহার করুন, যা আপনার ডেটাকে এনক্রিপ্ট করে।
৩. অ্যান্ড্রয়েড না iOS, কোনটি বেশি নিরাপদ?
সাধারণত, iOS-এর বন্ধ পরিবেশ (ওয়াল্ড গার্ডেন), নিয়ন্ত্রিত অ্যাপ স্টোর এবং দ্রুত সফটওয়্যার আপডেটের কারণে এটি কিছুটা বেশি নিরাপদ বলে বিবেচিত হয়। তবে অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা উপরে উল্লিখিত হ্যাকিং থেকে মোবাইল বাঁচানোর উপায় (সতর্ক অ্যাপ ইন্সটল, পারমিশন ম্যানেজমেন্ট, আপডেট, 2FA) সঠিকভাবে মেনে চললে উচ্চ মাত্রার নিরাপত্তা পেতে পারেন। নিরাপত্তা অনেকটাই ব্যবহারকারীর সচেতনতার উপর নির্ভর করে।
৪. ‘ফ্রি’ অ্যান্টি-ভাইরাস অ্যাপ কি নিরাপদ?
সবসময় নয়। কিছু ফ্রি অ্যাপ নিজেই ম্যালওয়্যার বহন করে, অতিরিক্ত বিজ্ঞাপন দেখায় বা ব্যবহারকারীর ডেটা সংগ্রহ করে। শুধুমাত্র সুপরিচিত, বিশ্বস্ত সাইবার সিকিউরিটি কোম্পানির (Kaspersky, Bitdefender, Malwarebytes ইত্যাদি) অফিসিয়াল অ্যাপ Google Play Store বা Apple App Store থেকে ডাউনলোড করুন। রিভিউ ও রেটিং ভালোভাবে চেক করুন।
৫. OTP (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) চুরি হয় কিভাবে?
OTP চুরির প্রধান কৌশল হলো সিম সোয়াপিং। হ্যাকাররা আপনার মোবাইল কোম্পানিকে প্রতারণা করে আপনার নম্বরটি তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা অন্য একটি সিমে ট্রান্সফার করে ফেলে। এরপর আপনার অ্যাকাউন্টে পাঠানো OTP তাদের কাছে যায়। এটি রোধ করতে মোবাইল অপারেটরের সাথে একটি শক্তিশালী PIN বা পাসওয়ার্ড সেট করুন এবং আপনার নম্বরটি অন্য কারো নামে রেজিস্টার্ড আছে কিনা মাঝেমধ্যে চেক করুন।
৬. ব্যাংকিং অ্যাপ ব্যবহারে বিশেষ সতর্কতা কী?
ব্যাংকিং অ্যাপ ব্যবহারের সময়:
- শুধুমাত্র অফিসিয়াল অ্যাপ স্টোর থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করুন।
- অ্যাপটি আপ টু ডেট রাখুন।
- পাবলিক Wi-Fi বা শেয়ার্ড নেটওয়ার্কে ব্যবহার করবেন না (মোবাইল ডেটা ব্যবহার করুন)।
- ট্রানজাকশনের সময় স্ক্রিন অন্য কেউ দেখতে না পায় তা নিশ্চিত করুন।
- লগ ইন করার পর সর্বদা সঠিকভাবে ‘Log Out’ করুন।
- অ্যাপে ট্রানজাকশন অ্যালার্ট চালু রাখুন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।