হাদিসের আলোকে বান্দার হক নষ্ট করার পরিণতি

hoq

ধর্ম ডেস্ক : আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যে হকের ব্যাপারে উদাসীন থাকি, তা হলো বান্দার হক। অথচ কোরআন-হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, যেসব গুনাহ বান্দার হকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, বান্দার সঙ্গে সেই বিষয়ে সুরাহা না করা পর্যন্ত মহান আল্লাহ সে পাপ ক্ষমা করবেন না। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সম্ভ্রমহানি বা অন্য কোনো বিষয়ে জুলুমের জন্য দায়ী থাকে, সে যেন আজই তার কাছ থেকে মাফ করিয়ে নেয়, সেদিন আসার আগে যেদিন তার কোনো দিনার বা দিরহাম থাকবে না। সেদিন তার কোনো সৎকর্ম না থাকলে তার জুলুমের পরিমাণ তার কাছ থেকে নেওয়া হবে আর তার কোনো সৎকর্ম না থাকলে তার প্রতিপক্ষের পাপ থেকে নিয়ে তা তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ২৪৪৯)

hoq

এই হাদিসটিতে নবিজি (সা.) তার উম্মতদের বান্দার হকের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। বান্দার হক এতটাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যদি কোনো ব্যক্তি কারো হক নষ্ট করে তার কোনো রকম সুরাহা না করেই দুনিয়া থেকে চলে যায়, তাহলে পরকালে তাকে এর চরম মূল্য দিতে হবে। সেদিন মানুষের কাছে এমন কোনো অর্থ-সম্পদ থাকবে না, যা দ্বারা সে তার ভাইয়ের হক আদায় করে দেবে, থাকবে শুধু আমলনামা। কারো কাছে যদি নেক আমল থাকে, তাহলে তার আমলনামা থেকে নেক আমল কেটে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে, আর যদি নেক আমল না থাকে, তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির বদ আমলের বোঝা মাথায় নিতে হবে। (নাউজুবিল্লাহ)

সেদিন কোনো কোনো মানুষের অবস্থা এমন হবে যে তারা অনেক নেক আমল নিয়ে কিয়ামতের ময়দানে উঠেও অন্যের হক আদায় করতে করতে দেউলিয়া হয়ে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।

হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের প্রশ্ন করেন, তোমরা কি জানো, দেউলিয়া কে? তারা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.) আমাদের মধ্যে দেউলিয়া হচ্ছে সেই ব্যক্তি, যার দিরহামও (নগদ অর্থ) নেই, কোনো সম্পদও নেই। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমার উম্মতের মধ্যে সেই ব্যক্তি হচ্ছে দেউলিয়া, যে কিয়ামতের দিন নামাজ, রোজা, জাকাতসহ বহু আমল নিয়ে উপস্থিত হবে এবং এর সঙ্গে সে কাউকে গালি দিয়েছে, কাউকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, কারো সম্পদ আত্মসাৎ করেছে, কারো রক্ত প্রবাহিত (হত্যা) করেছে, কাউকে মারধর করেছে ইত্যাদি অপরাধও নিয়ে আসবে। সে তখন বসবে এবং তার নেক আমল থেকে এই ব্যক্তি কিছু নিয়ে যাবে, অন্য ব্যক্তি কিছু নিয়ে যাবে।

এভাবে সম্পূর্ণ বদলা (বিনিময়) নেওয়ার আগেই তার সৎ আমল নিঃশেষ হয়ে যাবে। অতঃপর তাদের গুনাহ তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে, এরপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৪১৮)

https://inews.zoombangla.com/%e0%a6%a6%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%a8%e0%a7%80%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%b0-%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%ae%e0%a7%87-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%b6%e0%a7%8d%e0%a6%ac/

তাই আমাদের উচিত ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় কারো হক নষ্ট করে ফেললে তার ক্ষতিপূরণ দিয়ে দেওয়া, অন্যথায় তার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া এবং ভবিষ্যতে বান্দার হকের ব্যাপারে সতর্ক থাকা। মহান আল্লাহ সবাইকে তাওফিক দান করুন। আমিন।