হাদিসের আলোকে রজব মাসের ফজিলত মর্যাদা ও আমল

islamic

ধর্ম ডেস্ক : প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি রজব মাসে ইবাদতের মাধ্যমে অন্তরের জমিন চাষাবাদ করল না, আর শাবান মাসের ইবাদতের মাধ্যমে মনের জমিনের আগাছা মুক্ত করল না, সে শুধু রমজান মাসের ইবাদত দিয়ে তার ফসল তুলতে পারবে না। (বাইহাকি)।

islamic

রজব শব্দের অর্থ হলো- সম্ভ্রান্ত, মহান, সুবিশাল, প্রাচুর্যময়। অর্থাৎ প্রাচুর্যময় সম্মানিত মাস। মহান এ মাসটির মর্যাদাকে উপলক্ষ্য করে আল্লাহতায়ালা এ মাসে যাবতীয় যুদ্ধবিগ্রহ, হানাহানি ও রক্তপাত নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন। প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মহান রাব্বুল আলামিন আসমান ও জমিন সৃষ্টি করার দিন থেকেই ১২ মাসে বছর হবে, তা নির্ধারণ করে দেন। আর তা থেকে মোট চারটি মাস সর্বোচ্চ সম্মানিত, অর্থাৎ জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও চতুর্থটি হলো রজব। মর্যাদাপূর্ণ এ মাসটি মূলত প্রতিটি মুমিন মুসলমানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের মাস। বরকত ও ফজিলত লাভের মাস। কেননা প্রিয় নবীজি (সা.) এ মাসে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে ইবাদত বন্দেগিতে নিয়োজিত হতেন। রোজা রাখতেন, নফল নামাজ বেশি বেশি আদায় করতেন ও রহমত বরকতের জন্য বেশি বেশি দোয়া করতেন। তাই তো তিনি তাঁর উম্মতকে এ দোয়াটি শিক্ষা দিয়েছেন।

আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রাজাবা ওয়া শাবান ওয়া বাল্লিগনা রমজান।’ অর্থাৎ হে আল্লাহ রজব ও শাবান মাস আমাদের জন্য বরকতময় করুন। এবং রমজান মাস আমাদের নসিব করুন। (বুখারি ও মুসলিম)। পবিত্র রমজানুল মোবারকের আগে নিজেদের পূর্ণাঙ্গ আমল ও ইবাদতের পূর্ব প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে এ পবিত্র মাস। প্রিয় নবীজি (সা.) ইরশাদ করেন, রজব হলো আল্লাহর মাস, শাবান হলো আমার মাস, আর রমজান হলো আমার উম্মতের মাস। (তিরমিজি)। প্রিয় নবীজি (সা.)-এর সহধর্মিণীগণ বর্ণনা করেন, রজব ও শাবান মাসে আল্লাহর রসুল অত্যধিক ইবাদত বন্দেগিতে এবং রমজানের প্রস্তুতিতে সর্বাত্মক আত্মনিয়োগ করতেন। হজরত উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, ‘রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান মাস ছাড়া সবচেয়ে বেশি রোজা পালন করতেন শাবান মাসে, অতঃপর রজব মাসে।’ হজরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, ‘যখন রজব মাস আসত রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমলের আধিক্যতা দেখেই আমরা তা বুঝতে পারতাম।’

হাদিসের বিভিন্ন কিতাবের বর্ণনায় পাওয়া যায়, প্রিয় নবীজি (সা.) রজব মাসে ১০টি রোজা রাখতেন, শাবান মাসে ২০টি রোজা রাখতেন এবং রমজান মাসে পূর্ণাঙ্গ ৩০টি রোজা আদায় করতেন। বিশেষ করে প্রিয় নবীজি (সা.)-এর রজব মাসের আমলগুলোর মধ্যে সর্বাধিক নফল রোজা, নফল নামাজ, দানসদকা ও বেশি বেশি নেক আমলের গুরুত্ব দিতেন। এ ছাড়াও সারা বছরে প্রতি মাসে চাঁদের ১৩-১৪ ও ১৫ তারিখের রোজা ও প্রতি সপ্তাহে সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা পালন করতেন।

প্রিয় নবীজি (সা.)-এর সাহাবাগণ এ মাসজুড়ে বেশি বেশি ইবাদত করতেন। বিশেষ করে নফল রোজা, নফল নামাজ, তাহাজ্জুদ, আওয়াবীন, ইশরাক ইত্যাদি নামাজের ব্যাপারে অতি যত্নবান হতেন। হজরত সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহু রজব মাসের প্রথম তারিখে ১০ রাকাত নফল নামাজ আদায় করতেন। হজরত ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, পাঁচটি রাত এমন রয়েছে যেগুলোতে বান্দার কোনো দোয়াই আল্লাহতায়ালা ফিরিয়ে দেন না অর্থাৎ মহান রাব্বুল আলামিন অবশ্যই বান্দার সেই দোয়াগুলো কবুল করে নেন।

অতি মহান ও মর্যাদার পাঁচটি রাত হলো- ১. প্রতিটি জুমার রাত, ২. রজব মাসে প্রথম রাত, ৩. শাবান মাসের মধ্য দিবসের রাত (শবেবরাত), ৪. শাওয়াল মাসের প্রথম রাত (ঈদুল ফিতর বা রমজানের ঈদের রাত), ৫. জিলহজ মাসের দশম রাত (ঈদুল আজহা বা কোরবানি ঈদের রাত)।

সুতরাং পৃথিবীর সব মুমিন মুসলমানের উচিত এ পবিত্র রজব মাসের যথাযথ মর্যাদা ও ফজিলতের দিকে লক্ষ করে নিজ নিজ আমলের প্রতি বিশেষ যত্নবান হওয়া এবং হাদিসের আলোকে নিজের জীবনকে পাকপবিত্র ও গুনাহমুক্ত রাখার জন্য আমলের মাধ্যমে রমজানের পরিপূর্ণ ইবাদতের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা। সকাল-সন্ধ্যা বেশি বেশি কোরআনুল কারিমের তেলাওয়াত করা, কোরআনুল কারিমের ফজিলতপূর্ণ সুরাগুলো নিয়মিত তেলাওয়াত করা, ফজরের পর সুরা ইয়াসিন, মাগরিবের পর সুরা ওয়াকিয়া, ইশার পর সুরা মুলক, আসরের পর সুরা নাবা ও জুমার দিন সুরাতুল কাহাফ। নফল নামাজে সুরা কাফিরুন ও সুরা ইখলাস তেলাওয়াত করা। সকাল-সন্ধ্যা আয়াতুল কুরসি ও সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত তিলাওয়াত করা। বেশি বেশি ইস্তিগফার ও দরুদ শরিফ পাঠ করা। সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার ও লা ইলাহা ইল্লাল্লাহসহ অন্যান্য তাসবিহ তাহলিল আদায় করা। বিশেষ করে হাদিসে বর্ণিত ওপরে উল্লেখিত দোয়াটি বেশি বেশি আদায় করা। কেননা আল্লাহতায়ালা সেই পাঠকারীকে পূর্ণাঙ্গ ইবাদত করার সওয়াব দান করবেন। ইবাদত করার তৌফিক দান করবেন।

মোচনী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুনে পুড়ল শতাধিক বসতঘর-স্থাপনা, শিশুর মৃত্যু

আল্লাহতায়ালা আমাদের পবিত্র রজব মাস শাবান মাস ও রমজান মাসের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি গ্রহণ করে এবং যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করে দুনিয়া ও আখেরাতের সর্বোচ্চ সফলতা ও কামিয়াবি যেন হাসিল করতে পারি, মহান রব্বে কারিম আমাদের সেই তৌফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : মুফতি রুহুল আমিন কাসেমী