মাথার চুল পাতলা বা ফাঁকা থাকলে সেটা বেশিরভাগের জন্যই মানসিক চাপের কারণ। মাথার কিছু অংশে চুল কমে এক এক করে ফাঁকা হয়ে যাওয়া মোটেও আকাঙ্ক্ষিত নয়। টাকের সমস্যা নিয়ে ভোগান্তি অনেকেরই। তাই চুল প্রতিস্থাপন ও চুল বৃদ্ধির নানা পদ্ধতি চলছেই। বাজারে রয়েছে নানা ধরনের ওষুধ, জেল বা ক্রিম, তবে সেগুলি সবসময় কার্যকর হয় না। তাই বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে টাক কমানোর নতুন সমাধান নিয়ে গবেষণা চলছে। অনেকেই স্বপ্ন দেখেন, এমন একটি ওষুধ থাকলে যা খেলে টাক পড়া বন্ধ হবে বা নতুন চুল গজাবে। এবার সেই স্বপ্ন বাস্তব হতে পারে।
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি এমন একটি নতুন ওষুধ তৈরি করেছেন, যার নাম পিপি৪০৫। এই ওষুধ চুল পড়ার সমস্যা প্রতিরোধ করতে সক্ষম বলে দাবি করেছেন গবেষকরা। বিশেষভাবে, এটি একটি হরমোন ‘ডাইহাইড্রোটেস্টোস্টেরন’ এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে টাক পড়ার সমস্যা কমাবে। এই হরমোনের অতিরিক্ত কার্যকারিতা চুলের গোড়াকে দুর্বল করে দেয়, যার ফলে মাথার বিভিন্ন অংশে চুল ওঠা বন্ধ হয়ে যায়। অ্যালোপেসিয়া অ্যারেটার সমস্যার মূল কারণও এই হরমোন।
চুল ও টাক বিষয়টি বুঝতে হলে চুলের জীবনচক্র জানা প্রয়োজন। জন্মের সময় মানুষের মাথায় প্রায় এক লাখ চুলের গোড়া থাকে। প্রতিটি চুলের তিনটি দশা থাকে –
১. অ্যানাজেন: নতুন চুল জন্মের সময় (প্রায় ৩ বছর)
২. ক্যাটাজেন: সংক্ষিপ্ত বিশ্রামকাল (২–৪ সপ্তাহ)
৩. টেলোজেন: চুল পড়ার সময় (৩–৪ মাস)
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অ্যানাজেন পর্যায়ের সময় কমে যায় এবং দুই চক্রের মধ্যবর্তী সময় দীর্ঘ হয়। তাই একজন প্রৌঢ় ব্যক্তি কিশোর বয়সের মতো চুলের ঘনত্ব আশা করতে পারেন না। কিন্তু বয়সের আগেই চুল পড়ে গেলে বা কোনও শারীরিক অসুবিধা ছাড়া হঠাৎ চুল কমতে শুরু করলে তা উদ্বেগজনক। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এই অস্বাভাবিক চুল পড়াকে অ্যালোপেসিয়া বলা হয়, যা এখন কমবয়সিদেরও সমস্যা।
সাধারণত অ্যান্ড্রোজেন হরমোন এবং ডাইহাইড্রোটেস্টোস্টেরন হরমোনের পরিবর্তনের কারণে চুল পড়ার সমস্যা বাড়ে। প্রথমে কপালের দু’ধার প্রশস্ত হয়, এরপর মাথার উপরের অংশে চুল কমতে থাকে। একে বলা হয় অ্যান্ড্রোজেনিক অ্যালোপেসিয়া। বর্তমানে এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণে মিনোক্সিডিল ও ফিনেস্টেরাইল নামের ওষুধ ব্যবহৃত হয়। তবে এগুলোর অতিরিক্ত ব্যবহারে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, যেমন মুখে ও শরীরে অতিরিক্ত লোম, যৌন সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, পিপি৪০৫ হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করবে, তবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ঘটাবে না। পরীক্ষায় দেখা গেছে, ৮–৯ সপ্তাহের মধ্যে নতুন চুল গজানো শুরু হয়। তবে ওষুধটির কার্যকারিতা যাচাই করতে এখনও গবেষণা চলছে। যদি বহু মানুষের পরীক্ষায় ভালো ফলাফল পাওয়া যায়, তখনই এটি ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।