জুমবাংলা ডেস্ক: অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা মামলায় ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজি সেলিমকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
রবিবার (২২ মে) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭ এর বিচারক শহিদুল ইসলাম এ আদেশ দেন।
এদিন বিকেল ৩টার দিকে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭ এর বিচারক শহিদুল ইসলামের আদালতে তিনি আত্মসমর্পণ করেন। আত্মসমর্পণ করে আইনজীবী শ্রী প্রান নাথের মাধ্যমে যেকোনো শর্তে জামিনের আবেদন করেন হাজী সেলিম।
আবেদনে উল্লেখ করেন, ২০১৬ সালে হার্ড সার্জারির সময় মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হওয়ার কারণে দীর্ঘদিন ধরে বাক-শক্তিহীন অবস্থায় রয়েছেন হাজী সেলিম। তিনি দেশ ও বিদেশে চিকিৎসা নিয়েছেন। জেলে থাকলে চিকিৎসার অভাবে ও বাক-শক্তিহীনের কারণে যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ কারণে যেকোনো শর্তে তার জামিন আবেদন করছি। জামিন পেলে তিনি পলাতক হবেন না। তাই আপিল শর্তে আত্মসমর্পণ পূর্বক তার জামিন আবেদন করছি। শুনানি শেষে আদালত জামিনের আবেতন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর অনেক আগেই গাড়িতে করে আদালত পাড়ায় আসেন তিনি। সিগনাল পেয়ে প্রবেশ করেন আদালতের ভেতরে। তার আত্মসমর্পণের আগে আদালতের বাইরে তার সমর্থক ও নেতাকর্মীরা ভিড় করছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্যের উপস্থিতি রয়েছে আদালতের মূল ফটকে।
এর আগে, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিচারক শহিদুল ইসলামের আদালতে আত্মসমর্পণের আবেদন করেন তিনি।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি এ মামলায় হাজী সেলিমের ১০ বছরের কারাদণ্ড বহাল রেখে হাইকোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। হাইকোর্ট রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে তাকে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭-এ আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়।
এই মামলায় ১৩ বছর আগে বিচারিক আদালতের রায়ের পর তাকে মাসখানেক কারাগারে থাকতে হয়েছিল। পরে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে জামিনে বের হন তিনি। মাঝের এই সময়ে তিনি দু’বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
হাজী সেলিম ও তার স্ত্রী গুলশান আরার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বিচারিক আদালত ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল রায় দেন। রায়ে হাজী সেলিমের ১৩ বছরের কারাদণ্ড হয়। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের দায়ে তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পাশাপাশি তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ১ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আর সম্পদের তথ্য গোপনের দায়ে তাকে ৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। উভয় দণ্ড একসঙ্গে চলবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
অবৈধ সম্পদ অর্জনে হাজী সেলিমকে সহযোগিতা করার দায়ে তার স্ত্রী গুলশান আরাকে ৩ বছরের কারাদণ্ড, ১ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
একই সঙ্গে এই দম্পতির অবৈধভাবে অর্জিত প্রায় ২৭ কোটি টাকার সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দেওয়া হয়।
বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে হাজী সেলিম এবং ২০১৩ সালে তার স্ত্রী পৃথক আপিল করেন।
হাজী সেলিমের আপিলের ওপর শুনানি শেষে ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি তার সাজা বাতিল করে রায় দেন হাইকোর্ট। এই রায়ের বিরুদ্ধে দুদক আপিল বিভাগে আবেদন করে।
দুদকের আপিলের শুনানি নিয়ে ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করেন আপিল বিভাগ। সেই সঙ্গে হাইকোর্টে হাজী সেলিমের আপিলের ওপর আবার শুনানি করতে বলা হয়।
হাজী সেলিমের স্ত্রী গুলশান আরা ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর মারা যান।
গত বছরের ৩১ জানুয়ারি হাজী সেলিমের আপিলের ওপর হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়। সঙ্গে তার স্ত্রীর করা আপিলটিও হাইকোর্টে শুনানির জন্য ওঠে।
হাজী সেলিম দম্পতির করা পৃথক আপিলের ওপর শুনানি শেষে গত বছরের ৯ মার্চ হাইকোর্ট রায় ঘোষণা করেন।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের দায়ে হাজী সেলিমকে বিচারিক আদালতের দেওয়া ১০ বছরের সাজা বহাল রাখেন হাইকোর্ট। তবে সম্পদের তথ্য গোপনের জন্য বিচারিক আদালতের দেওয়া তিন বছরের কারাদণ্ড থেকে তাকে খালাস দেওয়া হয়। হাজী সেলিমের স্ত্রী গুলশান আরা মারা যাওয়ায় তার আপিলটি বাতিল (অ্যাবেট) করা হয়।
হাজী সেলিম সম্প্রতি কঠোর গোপনীয়তায় দেশ ছেড়েছিলেন। তার এই দেশত্যাগ নিয়ে নানা মহলে সমালোচনা হয়। দণ্ড নিয়ে তাকে দেশত্যাগে যারা সহযোগিতা করেছিলেন, তাদের শাস্তির দাবি ওঠে। পরে তিনি দেশে ফেরেন।
ভাইরাসজনিত বিরল রোগ মাংকিপক্স নিয়ে দেশের সব বন্দরে সতর্কতা জারি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।