জুমবাংলা ডেস্ক : পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগতে শুরু করেছে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। সেবার মানে দীর্ঘদিনের অসন্তোষ কিছুটা হলেও প্রথম ১০০ দিনে দূর করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। যাত্রীসেবায় চমক দেখিয়েছে বেবিচক। দ্রুত লাগেজ পাওয়া, প্রবাসীদের জন্য লাউঞ্জ স্থাপন, ফ্রি ফোনকল, ওয়াইফাইয়ের ব্যবস্থায় যাত্রীরা সন্তুষ্ট।
সেবাগ্রহণকারীরা বলছেন, বিমানবন্দরে লাগেজ পাওয়া নিয়ে হয়রানি দীর্ঘদিনের অভিযোগ ছিল। গত ৫ আগস্টের পর এই ভোগান্তি অনেক কমেছে। যথাসময়ে লাগেজ পাচ্ছেন যাত্রীরা। এছাড়া ‘প্রবাসী লাউঞ্জ’ প্রবাসীদের জন্য বড় একটি উপহার। সেখানে কম মূল্যে খাবারসহ অন্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। এভাবে বিমানবন্দরে যাত্রীসেবা বাড়তে থাকলে দেশ-বিদেশে আরও সুনাম অর্জন করবে বেবিচক।
বিমানবন্দরে বেল্টে অল্প সময়ে লাগেজ সরবরাহ ও প্রবাসী লাউঞ্জ চালুর পর প্রবাসী যাত্রীদের ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। আমাদের এই পরিবর্তন অব্যাহত থাকবে। এখন শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে বিশ্বমানের সেবা পাবেন যাত্রীরা।- বেবিচক চেয়ারম্যান
বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মনজুর কবির ভূঁইয়া জাগো নিউজকে বলেন, গত ৫ আগস্টের পর বেবিচকের দায়িত্ব নিয়েছি। এরপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি যাত্রীসেবা নিশ্চিতে। এ উদ্যোগে বিমানবন্দরে ৪০টিরও বেশি এয়ারলাইন্স, সরকারের মন্ত্রণালয় এবং বেসরকারি সংস্থাকে এ রূপান্তরে সম্পৃক্ত করেছি।
তিনি বলেন, বিমানবন্দরে বেল্টে অল্প সময়ে লাগেজ সরবরাহ ও প্রবাসী লাউঞ্জ চালুর পর প্রবাসী যাত্রীদের ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। আমাদের এই পরিবর্তন অব্যাহত থাকবে। এখন শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে বিশ্বমানের সেবা পাবেন যাত্রীরা।
প্রবাসী লাউঞ্জ
বেবিচকের সবচেয়ে আন্তরিক উদ্যোগগুলোর মধ্যে একটি প্রবাসী লাউঞ্জ চালু করা। গত ১৫ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আনুষ্ঠানিকভাবে এটির উদ্বোধন করেন। বিমানবন্দরে আগত ও বহির্গামী অভিবাসী শ্রমিকদের আরামদায়ক এবং সম্মানজনক পরিষেবা দিতে লাউঞ্জটি চালু করা হয়। লাউঞ্জে যাত্রীদের জন্য বিশ্রামের জায়গা, ভর্তুকি মূল্যে খাবার সুবিধা এবং উন্নত ভ্রমণ সংক্রান্ত সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
গত আগস্ট থেকে বিমানবন্দরে যাত্রীসেবায় যে পরিবর্তন লেগেছে, তা যেন অব্যাহত থাকে। সেজন্য প্রায় প্রতিদিনই বিমানবন্দর পরিদর্শন করি। বিমানবন্দরে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলি, যাতে তারা যাত্রীদের পর্যাপ্ত সেবা দেন।- মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া
বেবিচক সূত্র জানায়, এ লাউঞ্জের মূল উদ্দেশ্য প্রবাসী কর্মী ও তাদের সঙ্গী বিশেষ করে যারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসেন এবং যারা প্রায়ই তাদের নির্ধারিত ফ্লাইটের সময়ের আগে বিমানবন্দরে পৌঁছান, তাদের জন্য আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা দেওয়া। নতুন ওয়েটিং লাউঞ্জে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা রয়েছে, যার মধ্যে ডেডিকেটেড ওয়েটিং এরিয়া, শিশুযত্ন কক্ষ, পুরুষ ও নারীদের জন্য আলাদা নামাজের জায়গা এবং সুলভ মূল্যের ক্যাফেটেরিয়া অন্যতম।
গত ২২ নভেম্বর শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে মালয়েশিয়া যান কুমিল্লার খায়রুল কবির। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, বিমানবন্দরে ঢুকে লাউঞ্জ ব্যবহার করেছি। সেখানে খাবারের মান খুবই ভালো। অল্প টাকায় ভালো মানের খাবার পাওয়া যায়। বেবিচকের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।
লাউঞ্জ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘সরকার অভিবাসী শ্রমিকদের অবদানকে সম্মান করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ এসময় তিনি আরও কিছু উদ্যোগের ওপর জোর দেন। যেমন প্রবাসীদের জন্য ই-পাসপোর্ট প্রবর্তন, অভিবাসন প্রক্রিয়া সহজ করতে পরিকল্পিত পদক্ষেপ, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমানো এবং ভ্রমণ সহজ করা।
দ্রুত লাগেজ ডেলিভারি
শাহজালাল বিমানবন্দর সূত্র জানায়, গত ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর শাহজালাল বিমানবন্দরে বেবিচক কর্মকর্তাদের রদবদল হয়। মূলত তখন থেকেই বিমানবন্দরে যাত্রীসেবা বাড়তে থাকে। এখন এ ধারা অব্যাহত রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া।
বেবিচক সূত্র জানায়, শাহজালাল বিমানবন্দরের গৃহীত নতুন ব্যবস্থায় ১৫ থেকে ৫৫ মিনিটের মধ্যে ৮৮ শতাংশের বেশি লাগেজ ডেলিভারি নিশ্চিত করা হয়েছে। ফ্লাইট আগমনের ১৮ মিনিটের মধ্যে কনভেয়ার বেল্টে লাগেজ উপস্থিত হচ্ছে। এছাড়া উন্নততর সমন্বয় ও রিসোর্স অপ্টিমাইজেশন পরিষেবাগুলোর কার্যদক্ষতা উন্নত করেছে এবং লাগেজ পড়ে থাকার ঘটনা ৯৯ দশমিক ৮ শতাংশ সাফল্যের সঙ্গে উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।
২২ নভেম্বর সৌদি আরব থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে শাহজালাল বিমানবন্দরে নামেন চাঁদপুরের মোতালেব হোসেন। ফ্লাইট থেকে নেমে দ্বিতীয় টার্মিনাল দিয়ে বের হতে তার সময় লেগেছে ৪০ মিনিট। আলাপকালে মোতালেব হোসেন বলেন, আগে প্লেন থেকে নেমে ইমিগ্রেশন, লাগেজ সংগ্রহসহ অন্য ফর্মালিটি মেনে বের হতে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা সময় লাগতো। এখন কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই বিমানবন্দর থেকে বের হতে পেরেছি। ইমিগ্রেশন শেষ করে বেল্টে আসার পরপরই লাগেজও পেয়েছি। যেটা আগে সম্ভবই ছিল না বলা চলে।
মুসা আহমেদ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।