জুমবাংলা ডেস্ক : প্রযুক্তির যুগে প্রতিটি মানুষ মোবাইলের সঙ্গে বেশ পরিচিত। প্রয়োজনীয় এই জিনিসটি নিত্যদিনের সঙ্গী। ইলেকট্রনিক এই ডিভাইসে প্রায়শই নানা যান্ত্রিক ত্রুটিও দেখা যায়। আর তা সারাতে ছুটতে হয় সার্ভিসিং সেন্টারে। আর এসব জায়গায় প্রতারণার শিকার হয় অনেকেই। খারাপ মানের পণ্য দেয়া, অতিরিক্ত টাকা আদায় করে থাকে সার্ভিসিং সেন্টার।
ঠিক একইভাবে নিজের মোবাইল ফোন সার্ভিসিং করতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছিলেন ‘সামছুল ইসলাম’। মোবাইলের সামান্য যন্ত্রাংশ মেরামতের জন্য অতিরিক্ত টাকা আদায় করে সার্ভিসিং সেন্টার। বিষয়টি বুঝতে পেরে সেদিন মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেন আর কোনোদিন এমন প্রতারণার শিকার হবেন না। সেই প্রতিজ্ঞা থেকেই নিজের চেষ্টায় শিখেন মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কাজ। এখন মোবাইলের যেকোনো হার্ডওয়ার ও সফটওয়্যারের কাজ অনায়াসে করতে পারেন তিনি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সামছুল ইসলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতিহার হলের ১৫৯ নম্বর কক্ষে থাকেন। নিজের কক্ষকেই বানিয়েছেন মোবাইল সার্ভিসিং সেন্টার। পড়ালেখার ফাঁকে ফাঁকে করেন মোবাইল সার্ভিসিং। তার এমন কাজে বেশ সাড়া ফেলেছে পুরো ক্যাম্পাসে। মোবাইল সার্ভিসিং করে বর্তমানে প্রতি মাসে তার আয় ৬০ হাজারের অধিক। পাশাপাশি হলের অনেকের কাছেই তিনি সুনাম কুড়িয়েছেন ‘মানবিক ইঞ্জিনিয়ার’ হিসেবে।
শুরুর গল্প জানতে চাইলে সামছুল ইসলাম জানান, ছোটবেলা থেকেই তার প্রবল শেখার আগ্রহ ছিল। হাতের কাছে খেলনা গাড়ি, গাড়ির রিমোট, টিভির রিমোট বা মোবাইল ফোন থাকলে সেটি খুলে দেখতেন। এসবের ভিতরের যন্ত্রাংশগুলোর কার্যপ্রণালী সম্পর্কে সবসময় বোঝার চেষ্টা করতেন। আর এসব কাজের কারণে বকাও খেয়েছেন অনেক, তাতেও থেমে যাননি। এখন বাসার সব প্রকার ইলেকট্রিক যন্ত্রাংশ নিজেই মেরামত করেন।
সার্ভিসিং শেখার বিষয়ে সামছুল বলেন, একবার নিজের মোবাইল সার্ভিসিং করতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হই। পরে আক্ষেপ নিয়ে করোনার ছুটিতে নারায়ণগঞ্জের একটি সার্ভিসিং সেন্টারে থেকে এবং ইউটিউবে ভিডিও দেখে মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কাজ শিখি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হওয়া সত্ত্বেও এই কাজ শেখার বিষয়টি নিয়ে অনেকে তিরস্কার করেছিলেন। তবে আমি তাদের কথায় কখনও কান দেইনি। বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন থাকলেও আমি সবসময় সার্ভিসিংয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকব। আমি চাই আমার মতো যাতে কেউ প্রতারণার শিকার না হয়।
সামছুল ইসলাম আরো বলেন, প্রথমে মোবাইল সার্ভিসিং কাজের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্ট করি। বর্তমানে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। মোবাইলের ছোট-খাটো সমস্যা হলে বিনামূল্যেই ঠিক করে দিই। গ্রাহকদের থেকে এ পর্যন্ত খারাপ মন্তব্য পাইনি। প্রতিদিন কাজ করে ২-৩ হাজার টাকা আয় হয়। কয়েক মাস আগে বাসায় দেড় লাখ টাকা পাঠিয়েছি। এ মাসেও ১০ হাজার টাকা দিয়েছি।
কোনো শিক্ষার্থী চাইলে বিনামূল্যে কাজ শেখাবেন সামছুল। তিনি বলেন, আজকে ইউরোপে শিল্প বিপ্লব হয়, বাংলাদেশে কেনো হয় না? কারণ, বাংলাদেশের মানুষের শেখার ও জানার ক্ষেত্রে প্রযুক্তির দিকে আগ্রহ কম। প্রযুক্তির দিকে যদি আগ্রহ থাকত, তাহলে বাংলাদেশেও ফেসবুক,
গুগল এবং আমাজনের মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠত। আমি চাই আমাদের দেশের তরুণরা প্রযুক্তির দিকে আগ্রহী হোক। আমার কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী সার্ভিসিংয়ের কাজ শিখতে চাইলে, আমি বিনামূল্যে শেখাব। তবে তাকে সময় ও শ্রম দিতে হবে।
সামছুলের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম। তিনি বলেন, পড়ালেখার পাশাপাশি কোনো শিক্ষার্থী যদি নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য ভিন্নধর্মী কিছু করে তাহলে সেটি অবশ্যই ভালো উদ্যোগ। নিজের বাবা-মায়ের থেকে সবসময় টাকা নিয়ে অনেক কিছুই করা যায় না। শিক্ষার্থীরা যদি পড়ালেখার ফাঁকে ফাঁকে নিজের অবসর সময়গুলো আয়ের পথে ব্যয় করতে পারে তাহলে পরিবারের চাপ কমবে, পাশাপাশি সেই শিক্ষার্থী দক্ষতাও অর্জন করবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।