আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলার ছয় মাস পেরিয়ে গেছে। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটিতে এমন কোনো স্থান নেই যেখানে ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালায়নি। যুদ্ধ কমে থামবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তবে যুদ্ধ যদি শেষ হয় তবুও গাজায় অনেকেই আর নিজেদের বাড়ি-ঘরে ফিরতে পারবেন না। সেখানকার বেশিরভাগ বাড়ি-ঘর এবং স্থাপনা ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। খবর প্রেস টিভির।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) জানিয়েছে, যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর গাজার অনেক মানুষেরই ফিরে যাওয়ার জন্য আর কোনো নিরাপদ স্থান থাকবে না। সেখানকার ৬২ শতাংশ বাড়ি-ঘর ইতোমধ্যেই ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া গাজার ৭৫ শতাংশের বেশি জনসংখ্যাই এখন বাস্তুহারা হয়ে পড়েছে। সেখানকার লোকজন এখনো জানেন না যে, সংঘাত কবে শেষ হবে।
ইউএনআরডব্লিউএর বিবৃতি অনুসারে, স্যাটেলাইটে তোলা গাজা উপত্যকার ছবি বিশ্লেষণ করে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি জানা গেছে।
সংস্থাটির প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, চলমান যুদ্ধ গাজার সমগ্র স্বাস্থ্য সুবিধার ৮৪ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস করেছে এবং উপত্যকাটির শিক্ষাব্যবস্থাকেও ব্যাপকভাবে ক্ষতি করেছে।
শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় গাজার ৬ লাখ ২৫ হাজার শিশু স্কুলবঞ্চিত রয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
ইউএনআরডব্লিউএ আরো জানিয়েছে, ইসরায়েলি আগ্রাসন গাজার নারী, যুবক ও দুর্বল জনগোষ্ঠীর জন্য গুরুতর সামাজিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের পরিণতিসহ ব্যাপক ধ্বংসলীলা সৃষ্টি করেছে।
সংস্থাটি উল্লেখ করেছে, গাজায় নিবন্ধিত প্রায় ৯৮০টি এনজিওর বেশিরভাগই কার্যক্রম স্থগিত করেছে। সংস্থাগুলোর নিরাপত্তা উদ্বেগ গাজার মানবিক পরিস্থিতি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এতে প্রায় ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি নিহত হোন। এর প্রতিশোধ নিতে ওই দিনই গাজায় বিমান হামলা ও পরে স্থল অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো এ হামলা অব্যাহত আছে।
হামলার পাশাপাশি ইসরায়েল গাজা ভূখণ্ডে ‘সম্পূর্ণ অবরোধ’ আরোপ করেছে, সেখানে বসবাসকারী দুই মিলিয়নেরও বেশি ফিলিস্তিনিদের জ্বালানি, বিদ্যুৎ, খাবার ও পানি বন্ধ করে দিয়েছে।
জাতিসংঘের মতে, খাবার, পানি, ওষুধ ও প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তার অভাবে গাজা উপত্যকার ২৩ লাখেরও বেশি বাসিন্দা চরম ক্ষুধা ও ভয়াবহ অপুষ্টিতে ভুগছেন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ৭ অক্টোবর থেকে চলমান ইসরায়েলি হামলায় গাজায় এখন পর্যন্ত ৩৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আর আহত মানুষের সংখ্যা ৭৬ হাজার ছুঁয়েছে।
গত মাসের শেষের দিকে (২৫ মার্চ) জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ইসলামের পবিত্র রমজান মাসে গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবিতে একটি প্রস্তাব পাস করেছে।
হামাস এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানালেও, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে এবং ফিলিস্তিনি ছিটমহলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে আইসিজে একটি অন্তর্বর্তী রুল জারি করে তেল আবিবকে গণহত্যামূলক কাজ বন্ধ করতে এবং গাজার বেসামরিক নাগরিকদের মানবিক সহায়তা প্রদানের গ্যারান্টি দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।