স্পোর্টস ডেস্ক : স্তাদে দ্য ফ্রান্সের মুখরিত স্টেডিয়ামের জায়ান্ট স্ক্রিনে যুক্তরাষ্ট্রের গাবি থমাসের চওড়া হাসিটা যেন ওই মুহূর্তের ৭০ হাজার দর্শকের হাসি। ২০০ মিটার স্প্রিন্টের ফিনিশিংটাচ শেষ করে বলছিলেন ভাবিনি কোনো দিন পদক জিতব। ১০০ মিটার স্প্রিন্টের দ্রুততম মানবী সেন্ট লুসিয়ার জুলিয়ান আলফ্রেডকে হারিয়ে গাবি থমাস প্রথম অলিম্পিক স্বর্ণ পদক জয় করলেন।
গাবি থমাসের সময় ছিল ২১.৮৩ সেকেন্ড এবং জুলিয়ান আলফ্রেডের সময় ছিল ২২.৮ সেকেন্ড। ক্যামেরাগুলো গাবির দিকেই ছুটেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের এই অ্যাথলেট স্বপ্ন দেখতেন অলিম্পিকে খেলবেন। সেই স্বপ্ন আগেই পূরণ করেছেন টোকিওতে। পদক জয় করে। কিন্তু প্যারিস অলিম্পিক যেন তার কাছে জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান মঞ্চ। জীবে যতন কষ্ট দুঃখ করে এসেছেন তার সব পরিশ্রম যেন আজ সফল হয়েছে। ‘আমার কাছে জীবনের সবচেয়ে সুখের সময় আজ। আমি বলে বুঝাতে পারব না এই মুহূর্তে আমি কতটা চাপে রয়েছি-বললেন স্বর্ণজয়ী গাবি থামস।
অলিম্পিক গেমস তো থমাসের জন্যই হওয়ার কথা। যেই মেয়েটি আলান্টা অলিম্পিকের শহরে জন্মেছেন, যার ভেতরে অ্যাথলেটিকসের আগুন প্রতিভা উঁকি দিয়ে উঠত সেই মেয়েটি গলায় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গেমসের স্বর্ণ পদক শোভা পাবে, এটাই তো স্বাভাবিক। গাবি থমাসের স্বর্ণ জয়ে শুধুই যুক্তরাষ্ট্রের মানুষই খুশি হননি। তার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় আরও একটু বেশিই খুশি হবে। কারণ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন গাবি থমাস। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৯ সালে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন থমাস। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরও কোনো ডিগ্রি নেওয়া শিক্ষার্থী অলিম্পিক গেমসে স্বর্ণ জয় করেনি।
এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জেমস ব্রেন্ডন কেলোনি ১৮৯৬ সালে প্রথম অলিম্পিক গেমসের অ্যাথলেটিকসের ট্রিপল জাম্পে স্বর্ণ পদক জয় করলেও তিনি গ্র্যাজুয়েশন করা শিক্ষার্থী ছিলেন না। ১২৮ বছর পর হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন করা শিক্ষার্থী গাবি থামস অলিম্পিকে স্বর্ণ জয় করেছেন। গাবির জীবনটা খুব সুখের ছিল না। খুব ছোট্ট বয়সে বাবা মায়ের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে। খেলাধুলা পছন্দ করতে তার মা জেনিফার রেন্ডেল। মেয়ের অ্যাথলেটিকস প্রতিভা দেখে খেলার সুযোগ করে দিয়েছিলেন।
কিন্তু খেলার পাশাপাশি গাবির দুশ্চিন্তা ছিল সংসার নিয়ে। গাবির যমজ অটিজম ছোট ভাই, এডিএইচডিতে আক্রান্ত। তারা নিউরো থেরাপি নিতেন। গাবির মনে তখন থেকেই একটা দুশ্চিন্তা, তখন থেকেই হাবি নিউরোবায়োলজি নিয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত নেন। যেটি তার পরিবারের কাজে আসতে পারে। নিজের জীবনের কাজে আসতে পারে। গাবি বলেছেন, ‘আপনি যখন ট্র্যাকে দৌড়াবেন তখন আপনাকে জিম করতে হবে, ফিজিও থেরাপি নিতে হবে। প্রশিক্ষণের জন্য ভালো স্থান থাকতে হবে। যদি আপনি জীবনের সবচেয়ে সেরা লড়াইয়ে নামতে চান। তাহলে আপনাকে ভালো ঘুম দিতে হবে। ব্রেনটা সুস্থ থাকতে হবে। নিউরোবায়োলজির লেখাপড়াটা শুধু আমার জীবনের জন্যই নয়, গ্লোবাল হেলথ পলিসিতে আপনার এই শিক্ষাটা কাজে লাগবে। মূলত আমার অটিস্টিক ভাইয়ের জন্যই আমি নিউরোবায়োলজি নিয়ে পড়ার অনুপ্রেরণা পাই।’
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় গাবি ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের লন্ড্রির দোকানে কাজ করেছেন। হার্ভাড বিশ্ব বিশ্ববিদ্যালয় গাবির প্রতিভার প্রতি সম্মান দিয়েছিল। অলিম্পিক গেমসের আজকের এই সাফল্যের পেছনে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কথাও তুলে ছিলেন সংবাদ সম্মেলনে। অ্যাথলেটিকস প্রশিক্ষণ নিতে নতুন কৌশল নিয়েছেন। গাবি থমাসের গায়ের রং কালো। তার কাছে মনে পাড়ে সাদাদের সঙ্গে অবস্থান করলে কোনো কারণে হয়তো প্রশিক্ষকের কাছ থেকে সেরটা পাওয়া যাবে না। চিন্তা বদলে ফেললেন। নতুন পরিকল্পনা করলেন।
২০১৯ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে টেক্সাস চলে যান। সেখানে ৯৬ আটলান্টা অলিম্পিক গেমসে ব্রোঞ্জ জয়ী ক্রীড়াবিদ টোনজা বুফোর্ড বেইলি তার নিজের নামে অ্যাথলেটিকস প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুলেন। নাম দেন বুফোর্ড বেইলি ট্রাক ক্লাব। সেখানে প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে তিনটি গ্রুপে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এর মধ্যে একটা গ্রুপ রয়েছে তারা সবাই কালো। একমাত্র কালো নারী ক্রীড়াবিদরাই প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ গ্রুপের নারী কোচও ছিলেন কালো গায়ের রংয়ের। গাবি থমাস ধরে নিয়েছেন ওখানে গেলেই তিনি সফল হতে পারেন।
এ ধরনের প্রশিক্ষণ পরিবেশ খুঁজছিলেন যেটা গাবির জন্য সহায়ক এবং তিনি এই পরিবেশটাই খুঁজছিলেন প্রশিক্ষণের জন্য। আর কোনো কিছু না ভেবে সোজা চলে যান ভর্তি হয়ে যান। সফলতা অর্জন করে তিনি মুখ খুললেন। আবেগ আপ্লুত ২০০ মিটার স্প্রিন্টে স্বর্ণ জয়ি গাবি থমাস। ‘কঠোর পরিশ্রম করে আপনি যখন এই পর্যন্ত আসবেন তখন পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে বলা কঠিন হয়ে যায়। আমি স্বপ্নেও ভাবিনি এক দিন অলিম্পিক স্বর্ণপদক জয়ীদের মঞ্চে আমি দাঁড়াব। সত্যি আমি আজ অলিম্পিক স্বর্ণজয়ীদের একজন।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।