আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম পুরাতন ও খ্যাতনামা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়-এ বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। শুধু নতুন ভর্তিই নয়, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বিদেশি শিক্ষার্থীদের অন্য প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তরের সুযোগও বন্ধ করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তে আন্তর্জাতিক শিক্ষাঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
Table of Contents
প্রশাসনের সিদ্ধান্ত এবং তার পেছনের কারণ
২০২৫ সালের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ (সাবেক টুইটার) পোস্ট দিয়ে জানান,
“হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ স্টুডেন্ট ও এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রামের নিয়ম ভাঙায় তাদের সার্টিফিকেশন বাতিল করা হয়েছে। এটি দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি শক্ত বার্তা।”
এই সিদ্ধান্তের ফলে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এখন থেকে কোনো নতুন বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারবে না। এমনকি বর্তমানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরাও অন্য কোথাও স্থানান্তরিত হতে পারবেন না।
হার্ভার্ড ও ট্রাম্প প্রশাসনের টানাপোড়েন
ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে হার্ভার্ডের সম্পর্ক নতুন করে উত্তপ্ত হয়নি। ২০২৫ সালে ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আদর্শগত পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে আসছেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দাবি,
“যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চরম বামপন্থী, মার্ক্সবাদী ও মার্কিন-বিরোধী আদর্শে প্রভাবিত।”
এই প্রেক্ষাপটে প্রশাসন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গবেষণা তহবিল নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।
হার্ভার্ডের প্রতিক্রিয়া
এই সিদ্ধান্তে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে,
“১৪০টিরও বেশি দেশের শিক্ষার্থী ও গবেষকদের সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে আমরা জাতিকে সমৃদ্ধ করছি। প্রশাসনের এই প্রতিশোধমূলক সিদ্ধান্ত শিক্ষাব্যবস্থা ও গবেষণায় মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।”
তারা এটিকে ‘বেআইনি পদক্ষেপ’ হিসেবে উল্লেখ করেছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে।
বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ
২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬,৭০০-এর বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন, যা মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ২৭ শতাংশ। এই সিদ্ধান্তের পর এসব শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
সারাহ ডেভিস, হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের অস্ট্রেলিয়ান শিক্ষার্থী বলেন,
“আমাদের স্নাতক হওয়ার মাত্র পাঁচ দিন আগে এমন ঘোষণা এলো! এখন বুঝতেই পারছি না পড়াশোনা শেষ করতে পারব কি না।”
লিও গার্ডেন, সুইডিশ শিক্ষার্থী বলেন,
“হার্ভার্ডে ভর্তি হওয়ার দিনটি ছিল আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ দিন। আর এখন স্নাতক হওয়ার এক সপ্তাহ আগে সব কিছু ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আমরা যেন রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের বলি হয়ে যাচ্ছি।”
অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ও নজরদারিতে
শুধু হার্ভার্ড নয়, নিউ ইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ও ট্রাম্প প্রশাসনের তদন্তের আওতায় এসেছে। প্রশাসনের দাবি, এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইহুদিবিদ্বেষ ও বর্ণবৈষম্য মেনে নেওয়া হচ্ছে।
গত কয়েক সপ্তাহে হার্ভার্ডের জন্য বরাদ্দকৃত প্রায় ৩০০ কোটি ডলার ফেডারেল অনুদান জব্দ অথবা বাতিল করা হয়েছে।
সর্বশেষ, যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানবসেবা মন্ত্রণালয় (HHS) হার্ভার্ডের জন্য বরাদ্দ ৬ কোটি ডলার অনুদান বাতিল করেছে।
বৈশ্বিক শিক্ষাব্যবস্থায় প্রভাব
যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী উচ্চশিক্ষার জন্য অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য। এমন পরিস্থিতিতে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানে বিদেশি ভর্তি বন্ধ হওয়া আন্তর্জাতিক শিক্ষাব্যবস্থার উপর প্রভাব ফেলবে বলে মত দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষাবিদরা বলছেন,
“এমন একতরফা সিদ্ধান্ত হাজার হাজার শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করে তুলবে এবং গবেষণায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতার পথ রুদ্ধ করবে।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।