জুমবাংলা ডেস্ক : চলতি আমন মৌসুমে চাষিরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে ধান ঘরে তুলতে শুরু করেছেন। তবে হাসি নেই চাষিদের মুখে।
বিশেষ করে, মৌসুমজুড়ে বৈরী আবহাওয়ার কারণে বৃষ্টি না হওয়ায় মটরে পানি তুলে জমি প্রস্তুত ও চাষ শুরু করে কৃষক। পরে তুলনামূলক উচ্চ মূল্যে সার, শ্রমিক, কীটনাশক খরচ করে যখন ধান পাকার সময় আসলো তখনই অধিকাংশ ক্ষেতে বাদামি গাছ ফড়িংয়ের (কারেন্ট পোকা) আক্রমণ করে। এতে অনেক খরচ করে আবারও কীটনাশক ব্যবহার ও অন্যান্য পদ্ধতিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আসে।
উৎপাদন খরচ ও বাজার দরের বিরাট পার্থক্যের কারণে এবার হতাশাগ্রস্ত কৃষকের মুখে হাসি ফোটেনি। অধিকাংশ চাষি ধান বিক্রির টাকায় সার-বীজ-কীটনাশকের দোকানের দেনাও শোধ করতে পারবেন না। এভাবে লোকশানের কারণে কৃষি কাজে আগ্রহ হারাচ্ছেন অনেকে।
যশোরের চৌগাছা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুমে এ উপজেলায় আমন ধানের আবাদ হয়েছে ১৮ হাজার ২৪০ হেক্টর জমিতে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৯ হাজার ৮৫০ মেট্রিক টন। মৌসুমের শুরুতে আবহাওয়া কিছুটা খারাপ থাকায় উৎপাদন খরচ বাড়লেও ফলনে খুব বেশি প্রভাব পড়েনি। বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারণে কারেন্ট পোকার আক্রমণ বেশি ছিল। এতে বেড়েছে কীটনাশক ব্যয়। গত ১০ দিন আগে থেকে এ অঞ্চলে ধান কাটা শুরু হয়েছে। এলাকার সম্পূর্ণ কাটা ঝাড়া শেষ করতে আরও অন্তত ১০-১৫দিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন চাষিরা।
সরেজমিনে জানা যায়, যে-সব এলাকার ক্ষেতে কারেন্ট পোকার আক্রমণ হয়নি সেসব এলাকার চাষিরা ধানের বাম্পার ফলন পেয়েছেন। তবুও উৎপাদন খরচ ও বাজার দরের পার্থক্যের কারণেই হতাশাগ্রস্ত বেশিরভাগ চাষি। তাদের মুখে নতুন ধান ঘরে তোলার আনন্দ আসেনি। তারপরও ধান বাড়ি ওঠানোকে মাথায় রেখেই ‘সার-কীটনাশকের দোকান আর সেচ পাম্প-ট্রাক্টর মালিকরা’ তাদের বকেয়া আদায়ে হালখাতার তোড়জোড় শুরু করেছেন। এই হালখাতা নামটি হতাশাগ্রস্ত কৃষকের কাছে যেন বিষফোড়া। অধিকাংশ কৃষকের দাবি, ধানের উৎপাদন ভালো হলেও তাদের খরচের টাকা উঠছে না। এটাই এখন বড় সমস্যা।
উপজেলার সিংহঝুলি গ্রামের যুবক কৃষক টনিরাজ খান, সাইফুদ্দিন আহমদ, শিমুল কবিরাজ, কাজল খান, সাইফুল ইসলামসহ কয়েকজন কৃষক জানান, তাদের জায়গা জমি কম থাকায় তারা অন্যের জমি লিজ নিয়ে ধান চাষ করে থাকেন, ফলনও হয়েছে ভালো কিন্তু তারপরও খরচের টাকা উঠছে না।
তারা খরচের হিসেব দিয়ে বলেন, এ বছর এক বিঘা লিজ নিতে জমির মালিককে দিতে হয়েছে সর্বনিম্ন ৮ হাজার টাকা। প্রথমেই এক বিঘা জমির জন্য বীজতলা তৈরি করে চারা উৎপাদন করতে খরচ হয় ২ হাজার টাকা। তারপর জমি চাষ করতে লাগে ১৫শ’ টাকা। জমিতে চারা রোপণ করতে খরচ হয়েছে ২ হাজার টাকা, নিড়ানি বাবদ ব্যয় হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার টাকা, তিনবারে ডিএপি, টিএসপি, এমওপি ও ইউরিয়া সার মিলে কমপক্ষে ২ হাজার টাকার রাসায়নিক সার লাগে। আগাছানাশক, পোকা দমন ও পচন রোগ নিরোধ করতে অন্তত দেড় হাজার টাকার কীটনাশক স্প্রে করতে হয়।
সর্বশেষ এক বিঘা জমির ধান কাটতে, বহন করতে ও মাড়াই করে গোলাজাত করতে ৬ হাজার টাকা খরচ হয়। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে সময়মতো বৃষ্টিপাত না হওয়ার কারণে সেচ বাবদ নলকূপের মালিককে এক হাজার দুইশ’ টাকা দিতে হবে। কোন কোন গ্রামে সেচ বাবদ পাম্প মালিকদের তিন চার হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হয়।
তারা বলেন, সবমিলিয়ে আমরা যদি নিজেদের শ্রমের মজুরির টাকা বাদও দিই তারপরও এক বিঘা জমির ধান উৎপাদন করতে কমপক্ষে বিশ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তারা আরও বলেন, একবিঘা জমিতে গড়ে বিশ মণ ধানও উৎপাদন হয় না, কম বেশি হয়। তারা জানান, বর্তমান বাজারে এক হাজার পঞ্চাশ থেকে ১১শ’ টাকা ধানের মণ বিক্রি হচ্ছে। তাহলে বাম্পার ফলনে কৃষকের লাভ কী হলো?
উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামের কৃষক তুহিন সর্দার বলেন, সরকার ধানের মূল্য নির্ধারণ করেছে এক হাজার দুইশ’ টাকা, সেই হিসেবে একজন কৃষক যদি সর্বোচ্চ বিশ মণ ধান উৎপাদন করতে পারে এবং সরকারের কাছে বিক্রি করতে পারে, তাহলে তার আসল উঠবে কোন লাভ হবে না। এখন তাহলে সংসার চলবে কী করে? তিনি ধানের সরকারি ক্রয়মূল্য কমপক্ষে দেড় হাজার টাকা করার দাবি জানান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোসাব্বির হুসাইন বলেন, এ বছর ধানের ফলন ভালো হয়েছে। উপজেলার আমন চাষিদের প্রণোদনা বীজ ও সার প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া কৃষকদের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষি প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। উপজেলায় আমনের বাম্পার ফলন হওয়ায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন তিনি। তিনি আরও বলেন, প্রতিনিয়ত কৃষকদের প্রণোদনা বাড়াচ্ছে সরকার।
সূত্র : বাংলানিউজ২৪
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।