বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পরিকল্পনা করছে ঢাকা। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সম্প্রতি আদালত তাঁর বিরুদ্ধে এই রায় দিয়েছেন। কিন্তু এই রায় কার্যকরের পথে সবচেয়ে বড় বাধা এখন ভারত। গত শনিবার এক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, একসময় শেখ হাসিনা ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতীক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি একজন বিপ্লবী নেতার কন্যা। ১৯৭০-এর দশকে বাবার নৃশংস হত্যাকাণ্ডই তাঁর রাজনৈতিক উত্থানের পথ খুলে দিয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিতে শীর্ষে ওঠা শেখ হাসিনার সেই উত্থানের পর এসেছে নাটকীয় পতন।
আর তা ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুতি এবং শেষ পর্যন্ত পালিয়ে ভারতে আত্মগোপন। এখন তাঁর অনুপস্থিতিতে দেওয়া মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে পারে, যদি ভারত তাঁকে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এখন তিনি দুই দেশের রাজনৈতিক টানাপড়েনের কেন্দ্রে রয়েছেন। কারণ তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি বারবার করে চলেছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশি রাজনৈতিক বিশ্লেষক মুবাশ্বের হাসান বলেন, ‘তিনি জনরোষ এড়াতে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। ভারতে লুকিয়ে আছেন, আর মৃত্যুদণ্ড পেলেন। ঘটনাটা সত্যিই ব্যতিক্রমী।’
কিন্তু তাঁর জীবনের পথ বদলে দেয় ১৯৭৫ সালের আগস্টের এক রক্তাক্ত রাত। সে সময় সামরিক অভ্যুত্থানে সেনা কর্মকর্তারা ঢাকায় তাঁর বাবা, মা ও তিন ভাইকে হত্যা করেন।
হাসিনা ও তাঁর বোন তখন পশ্চিম জার্মানিতে থাকায় বেঁচে যান। সে সময় বিশৃঙ্খল নানা ঘটনার পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসেন।
পরিবারের সদস্যদের হত্যাকাণ্ডের পর রাতারাতি নির্বাসিত হন হাসিনা। ছয় বছর ভারতেই কাটান এবং এটিই ভবিষ্যৎ জীবনে ভারতের প্রতি তাঁর আস্থা দৃঢ় করে। ১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর তিনি দেখেন, ‘জনগণ নতুন আশা নিয়ে তাঁর দিকে’ তাকিয়ে আছে।
২০০৮ সালের পর থেকে বাংলাদেশে বাড়তে থাকে দমননীতি। সমালোচকরা সে সময় প্রায়ই অভিযোগ করেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ একদলীয় শাসনের দিকে এগোচ্ছে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস লিখেছে, বাড়তে থাকা চাপের মধ্যে হাসিনা কেবল ‘ভারতের নিঃশর্ত সমর্থনের ওপরই ভরসা রাখতে পারতেন’।
যদিও বহু আন্দোলন ও হত্যাচেষ্টার মধ্যেও হাসিনার ক্ষমতা টলেনি, কিন্তু গত বছরের শিক্ষার্থী আন্দোলন ছিল অন্য রকম। সরকারি চাকরির কোটা নিয়ে আন্দোলন দ্রুত দেশজুড়ে বিক্ষোভে রূপ নেয়। সরকারের কঠোর দমন-পীড়নে জাতিসংঘের হিসাব মতে ১৪০০ মানুষ নিহত হয়।
কিন্তু এই সহিংসতা আন্দোলন থামায়নি। বরং আন্দোলনকে আরো উসকে দেয় এবং শেষ পর্যন্ত হাসিনার সরকারের পতন ঘটে। মুবাশ্বের হাসান বলেন, ‘তিনি দেশ ছাড়লেন, এটিই তাঁর অপরাধের স্বীকারোক্তি। তিনি অনেক বেশি সীমা লঙ্ঘন করেছিলেন।’
ভারত এই রায়কে স্বীকৃতি দিয়ে নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে। হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ বলেন, ‘ভারত সব সময় ভালো বন্ধু। তারা আমার মায়ের জীবন বাঁচিয়েছে।’ ভারতের সাবেক কূটনীতিক অনিল ত্রিগুনায়েত বলেন, ‘ভারত তাঁকে ফেরত পাঠাবে কি না, তাতে আমি খুবই সন্দিহান।’
এদিকে রায়ের পরদিন বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হাসিনাকে দ্রুত ফিরিয়ে দিতে ভারতের কাছে আবারও চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, ‘হাসিনাকে ফিরিয়ে দেওয়া ভারতের দায়িত্ব।’
আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের আগে হাসিনার এই মৃত্যুদণ্ড দেশের রাজনীতিতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আওয়ামী লীগ এখন নিষিদ্ধ, নেতৃত্বেরও ঠিক-ঠিকানা নেই। নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার গভীর রাজনৈতিক বিভাজন দূর করার কঠিন কাজে নেমেছে।
এর সুযোগ নিতে পারে বিএনপি এবং আরো বহু রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগ হয়তো আবার ফিরে আসতে চাইবে, তবে তা হাসিনার নেতৃত্বে নয়। এখন প্রশ্ন, হাসিনার পতন কি বিষাক্ত যুগের সমাপ্তি, নাকি নতুন অনিশ্চয়তার শুরু? সূত্র : সিএনএন
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



