জুমবাংলা ডেস্ক : পেটে ইট বাঁধা অবস্থায় শীতলক্ষা নদী থেকে ভেসে উঠছিল একের পর এক মৃতদেহ। নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যার পাড় তখন স্বজনদের আহাজারি ও আত্মচিৎকারে ভারী হয়ে উঠেছিল। ডুবুরি দিয়ে একে একে তুলে আনা হয় সাতটি মরদেহ। আর তা দেখে কান্নায় ফেটে পড়ছিলেন খুন হওয়া সেই মানুষগুলোর স্বজনেরা।
এই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ছিলেন আওয়ামী লীগের দোসররা। নারায়ণগঞ্জের সেই চাঞ্চল্যকর সাত খুনের ঘটনা, যা সে সময় নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা বাংলাদেশকে। অথচ সাত খুনের প্রধান কুশিলভ হাসিনার ঘনিষ্ঠ শামীম ওসমান ছিলেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম এবং আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন নিখোঁজ হন। তিনদিন পর, শীতলক্ষা নদী থেকে উদ্ধার করা হয় তাদের লাশ। তদন্তে বেরিয়ে আসে নির্মম হত্যাকাণ্ডের সাথে র্যাবের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা। আটক করা হয় র্যাব ১১ এর অধিনায়ক, তৎকালীন আওয়ামী লীগের প্রতাপশালী মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার জামাতা কর্নেল তারেক সাঈদসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে। ঘটনার পরপরই ভারতে পালিয়ে যায় মামলার আরেক অভিযুক্ত নূর হোসেন, নারায়ণগঞ্জের বেশিরভাগ অবৈধ কাজের গডফাদার।
এটি শামীম ওসমানের ডান হাত হিসেবে পরিচিত ছিল। যদিও সে বছরের জুনে কলকাতা থেকে নূর হোসেনকে গ্রেফতার করে, সেখানকার পুলিশ এক বছর পর ২০১৫ সালের নভেম্বরে তাকে বাংলাদেশ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। পরবর্তীতে আদালতের বিভিন্ন বিচারিক কার্যক্রম শেষে নূর হোসেন, তারেক সাঈদ, মোহাম্মদ ও মেজর আরিফ হোসেনসহ ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয় হাইকোর্ট।
কৌশলে বাদ দেয়া হয় সাত খুনের মাস্টারমাইন্ড হাসিনার ঘনিষ্ঠ শামীম ওসমান, তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এফ রহমান হলের সাবেক সভাপতি নুরুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজনকে। তবে কেন এই হত্যাকাণ্ড, সে বিষয়টি আড়ালে থেকে যায়।
সে উত্তর পরিষ্কার হয় ৫ আগস্টে হাসিনা পতনের পরপরই। সে মামলার তদন্তের দায়িত্ব থাকা একজন কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ পাওয়া যায়, যে সাত খুনের ঘটনার সাথে হাসিনা সরাসরি জড়িত ছিলেন। র্যাবের সাবেক গোয়েন্দা প্রধান মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) জিয়াউল হক ছাত্র জনতার বিপ্লবে হাসিনার পতনের পর আটক হলে, সাত খুনের সাথে জড়িত বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে।
জিয়াউল হকের বয়ানে সরাসরি শামীম ওসমানের সংশ্লিষ্টতার কথাও উঠে আসে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার সরাসরি সংশ্লিষ্টতা বিষয়টি সামনে আসে। ঘটনার শুরু থেকেই শেখ হাসিনা বিষয়টি জানতেন, এমনকি সাতজনকে অপহরণ ও হত্যা করে শীতলক্ষা নদীতে ফেলে দেওয়ার বিষয়ে জানতেন হাসিনা। একই সাথে, হাসিনার নির্দেশে শামীম ওসমানকে মামলা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে, এমন তথ্যও পাওয়া যায়।
বণ্টননামা দলিল ছাড়া ওয়ারিশদের নামজারির আবেদন নামঞ্জুর করা যাবে না
২০১৮ সালে আসামিদের ফাঁসির আদেশ হলেও সেটি ঝুলিয়ে রাখা হয় হাসিনার নির্দেশেই। এরপর কেটে গেছে আরো প্রায় ছয়টি বছর। মামলাটি এখনো অপেক্ষায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের শুনানির জন্য। যে কারণে, এখনো সেই প্রমাণিত আসামিরাও শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেননি।
সূত্র:
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।