লাইফস্টাইল ডেস্ক : শরীরের যেসব অংশ বেশি ঘর্ষণ ও চাপের মুখে পড়ে, সেসব অংশে কড়া পড়ে থাকে। কালচে বা হলুদ হয়ে ত্বকের উপর শক্ত স্তর তৈরি হয়। দীর্ঘদিনের কড়া আরো বেশি শক্ত ও হলুদ হয়ে থাকে। পায়ে, হাতের আঙুল বা কনুইতে বেশি কড়া পড়ে থাকে।
পায়ের তলাসহ অন্যান্য অংশ অনেক সময় শক্ত হয়ে যায়। চলতি ভাষায় একে কড়া বলা হয়। বিভিন্ন কাঁটায় আঘাত পেলেও পরবর্তী সময়ে এমন কড়া পড়তে পারে। ইংরেজিতে একে বলা হয় কর্ন। পায়ের যেসব অংশে ক্রমাগত চাপ পড়ে বা ঘষা লাগে, দীর্ঘদিন পরে সেসব অংশের ত্বক শক্ত হয়ে যায়। একে বলা হয় ক্যালাস।
যদি কড়া পড়ার কারণে আপনার শারীরিক কোনো সমস্যা হবে না, তবে এটি ত্বকের সৌন্দর্য নষ্ট করে। কড়া পড়ার শুরুর দিকে লক্ষ্য করবেন, সাধারণত আকারে গোলাকার হয়ে থাকে এগুলো। আক্রান্ত স্কানটি শক্ত, ভারি ও কালচে বা হলদে হওয়া শুরু করে।
পায়ে ক্রমাগত চাপ পড়া বন্ধ হলে ধীরে ধীরে ক্যালাস সেরে যায়। তবে জুতা পরিবর্তনের পরেও সমস্যা না কমলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। পায়ের ত্বকে কখনো কোনো কিছু ঢুকে গেলে নিজে থেকে সেটি বের করার চেষ্টা করবেন না, এতে কড়া পড়ার আশঙ্কা বাড়ে।
ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে এ বিষয়ে অতিরিক্ত সতর্ক থাকা উচিত। কারণ পায়ে রক্তের প্রবাহ কম থাকায় জটিলতার ঝুঁকি বাড়তে পারে। কর্ন এবং ক্যালাস ঘরোয়া উপায়েও প্রতিকার এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া যায়। জেনে নিন সেই উপায়গুলো-
>> পায়ে বা হাতের যে স্থানে কড়া পড়েছে, সেখানে নিয়মিত লেবুর রস ব্যবহার করতে পারেন। কর্ন যে স্থানে হয়ে থাকে সেখানে মাঝে মাঝে ব্যথা হয় ও ফুলে যায়। এজন্য লেবুর রস কর্নের স্থানে নিয়মিত ব্যবহার করলে ধীরে ধীরে তা দূর হয়ে যাবে।
>> রসুনের উপকারিতা সম্পর্কে সবারই কমবেশি ধারণা আছে। রসুন অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ। যা ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাক সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে। কড়া দূর করার জন্য কয়েকটি রসুন বেটে তার সঙ্গে লবঙ্গের গুঁড়া মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে আক্রান্ত স্থানে ব্যবহার করুন। সারারাত ত্বকে রেখে দিন, সকালে ধুয়ে ফেলবেন। নিয়মিত এ মিশ্রণটি ত্বকে ব্যবহার করলে কর্নগুলো উধাও হয়ে যাবে।
>> ত্বক ও চুলের জন্য ভিটামিন ই অয়েল অনেক উপকারী। এতে থাকা পুষ্টিগুণ ত্বক আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে। শক্ত ত্বক নরম করার ক্ষেত্রে ও কড়ার চিকিৎসায় এ তেলের কোনো বিকল্প নেই। প্রতিদিন রাতে ভিটামিন ই অয়েল কড়ার স্থানে ব্যবহার করুন। ধীরে ধীরে কড়ার স্থানটি পরিষ্কার হয়ে যাবে।
>> পেঁয়াজ তো সবার রান্নাঘরেই থাকে। এ উপদানে রয়েছে শক্তিশালী প্রাকৃতিক অ্যাসিড। যা বিভিন্ন সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে। শরীরের যেসব স্থানে কর্ন বা ক্যালাস আছে, সেখানে পেঁয়াজের পেস্ট ব্যবহার করলে মৃত কোষ দূর হবে। পেঁয়াজের রস এতোটাই শক্তিশালী যে, এটি ত্বকের শক্ত স্তরটিকে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক করে দেয়। পেঁয়াজের রস ব্যবহার করে স্থানটি মোজা বা কাপড় দিয়ে বেঁধে রাখুন।
>> বেকিং সোডা ত্বকের জন্য বেশ উপকারী। এটি প্রাকৃতিক স্ক্রাবার হিসেবে কাজ করে। ত্বকের যেসব স্থানে কর্ন আছে, সেখানে মৃত ত্বকের কোষ দূর করতে ব্যবহার করুন বেকিং সোডা। সামান্য গরম পানিতে বেকিং সোডা মিশিয়ে ১৫ মিনিট ত্বকের কর্নের স্থানে রাখুন। এরপর পিউমিস পাথর দিয়ে এক্সফোলিয়েট করুন। বেকিং সোডায় অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়া এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল এজেন্ট রয়েছে, যা সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
>> ক্যাস্টর অয়েল শক্ত ত্বককে নরম করতে সাহায্য করে। ত্বকের যেসব স্থানে কড়া পড়ে থাকে; হোক সে হলুদ বা কালচে সেসব স্থানে ক্যাস্টর অয়েল নিয়মিত ব্যবহার উপকার মেলে।
>> আনারস তো সবাই কমবেশি খেয়ে থাকেন। এর খোসাগুলো নিশ্চয়ই ফেলে দেন! অবাক করা বিষয় হলেও সত্যিই, আনারসের খোসা ব্যবহারে কর্ন ও ক্যালাস নিরাময় করা সম্ভব। এতে প্রচুর পরিমাণে ওষুধি গুণ আছে। এজন্য এক টুকরো আনারসের খোসা আপনার কর্নে ব্যবহার করে ব্যান্ডেজ করে রাখুন সারারাত। সকাল হলে ব্যান্ডেজ খুলে স্থানটি ধুয়ে ফেলুন।
নিয়মিত আরো যেসব ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহারে কড়া দূর করতে পারেন
>> হাত বা পায়ে কড়া পড়লে গরম পানিতে আক্রান্ত স্থান ভিজিয়ে রাখুন ১০-১৫ মিনিট। পরে ত্বক স্ক্রাব করুন।
>> যে স্থানে কড়া পড়ে, সেখানে ঘন ঘন লোশন লাগানোর অভ্যাস করুন। শুষ্ক ত্বক ক্যালাস এবং কর্ন আরো শক্ত করে দেয়। এজন্য ত্বককে আর্দ্র রাখুন।
>> আক্রান্ত স্থান স্ক্রাব করার জন্য একটি পিউমিস পাথর, ফাইলার বা ওয়াশকোথ ব্যবহার করুন।
>> আরামদায়ক জুতা পরুন। এতে কর্ন বাড়বে না। নিয়মিত পায়ে মোজা পড়ার অভ্যাস করুন।
>> আপনার পায়ের নখ সবসময় ছোট রাখুন। এসব ছোট ছোট ভুল এড়িয়ে চললেই কর্ন বা ক্যালাসের মতো সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।