জুমবাংলা ডেস্ক : প্রতি বছরের মতো এবারও সুনামগঞ্জের হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজের অগ্রগতি কম থাকায় দুশ্চিন্তায় কৃষকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষের দাবি, নির্বাচনের কারণে পিআইসি গঠন বিলম্বিত হয়েছে। এ ছাড়াও একটি পক্ষ চায়নি নির্বাচনের আগে কাজ শুরু হোক। তারা বিভিন্নভাবে বাধার সৃষ্টি করেছে। তাছাড়া পিআইসি গঠনের পর ফের নানান অভিযোগ তোলা হয়। এসব কারণে কাজ যথাসময়ে শুরু করা যায়নি বলে জানিয়েছেন পাউবো প্রকৌশলী ও দায়িত্বশীলরা।
তবে এখন বাঁধ নির্মাণের কাজ দ্রুত চলছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) প্রকৌশলীরা।
এদিকে হাওর নিয়ে যারা কাজ করেন তারা দাবি করছেন পিআইসি গঠনে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। অর্থের বিনিময়ে পিআইসি পেয়েছেন অনেকেই। তাদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের কাছে।
নীতিমালা অনুযায়ী বাঁধের কাজ ১৫ ডিসেম্বর থেকে শুরু করে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা রয়েছে। হাওরের কৃষকদের উৎপাদিত একমাত্র এই ফসল অকাল বন্যার কবল থেকে রক্ষা করতে প্রতি বছরের মতো এবারও ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ করছে সরকার। কিন্তু সঠিক সময়ে বাঁধের কাজ না করায় উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় আছে হাওর পাড়ের কৃষকরা।
এদিকে জেলা হাওর রক্ষা বাঁধ বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক জেলার ১২ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা, পাউবো প্রকৌশলীরাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দ্রুত সব কয়টি হাওর রক্ষা বাঁধের কাজ সঠিকভাবে শেষ করার তাগিদ দিয়েছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানান, এ বছর এক হাজার ৭১৮ কিলোমিটার হাওর রক্ষা বাঁধের মধ্যে ৭৩৩টি অংশে ৫৯১ কিলোমিটার বাঁধের কাজ হবে। এজন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন হবে ৭৩৩টি, এর মধ্যে ৬৮৬টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি রবিবার পর্যন্ত গঠন হয়েছে।
কাজের অগ্রগতির বিষয়ে জানা যায়, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় অনুমোদিত ২৮টি প্রকল্পের মধ্যে ১৭টি, বিশ্বম্ভরপুরে ৩১টির মধ্যে ১৪টি, জামালগঞ্জ উপজেলায় ৪৪টির মধ্যে ১৪টি, তাহিরপুরে ৮২টির মধ্যে ৫০টি, ধর্মপাশায় ৯৬টির মধ্যে ৫৫টি, মধ্যনগরে ৩২টির মধ্যে ২০টি, শান্তিগঞ্জে ৬৬টির মধ্যে ২৬টি, জগন্নাথপুরে ৩১টির মধ্যে ১৫টি, দিরাইয়ে ১১০টির মধ্যে ৩০টি, শাল্লায় ১৩১টির মধ্যে ৩৫টি, দোয়ারাবাজারে ৫১টির মধ্যে ৩৫টি, ছাতক উপজেলায় ৩১টির মধ্যে ১৫টি বাঁধে কাজ শুরু হয়েছে।
কাজের অগ্রগতি তিন থেকে ১৫ শতাংশ দেখানো হয়েছে। সবচেয়ে বেশি দোয়ারাবাজারে এবং সবচেয়ে কম অগ্রগতি তাহিরপুর উপজেলায়। কাজের অগ্রগতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন সচেতন মহল।
তবে এসব পিআইসি গঠনে নিয়মনীতি মানা হয়নি। এছাড়াও অর্থ লেনদেনেরও অভিযোগ তুলেছেন কৃষকসহ হাওর নিয়ে কাজ করা সংশ্লিষ্টরা।
মাটিয়ান হাওর পাড়ে কৃষক আরিফ মিয়া জানান, বাঁধের কাজ দেরিতে করায় এক ফসল বোরো ধান অকাল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হবার আশংকায় আছি। সরকার টাকা দেয় কিন্তু সঠিক ভাবে সঠিক সময়ে বাঁধের কাজ হয় না আর পাহাড়ী ঢল আসে তখন পিআইসিদের খোঁজে পাওয়া যায় না। তখন আমাদেরকে বাঁধ পাহাড়া দিতে হয়।
হাওর বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় জানান,কাগজে আর ফাইলে যে পরিমান কাজের অগ্রগতি যা দেখানো হয়েছে বাস্তবে অগ্রগতি আরও কম দাবি করে তিনি জানান,বাঁধে দুই ভাগের বেশি কাজ হয়নি।
তাহিরপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা পারভিন জানান,পিআইসি গঠনে স্থানীয় ভাবে নানা বিভক্তি ছিল এছাড়াও জনপ্রতিনিধি পরিবর্তন হওয়ার পর পিআইসি গঠনসহ কাজ বন্ধ রাখার দাবিও করে একপক্ষ। এ কারণেও কাজ শুরু করতে বিলম্বিত হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানিয়েছেন,সুনামগঞ্জের প্রায় সাড়ে তিন লাখ কৃষক এবার দুই লাখ ২৩ হাজার ২৪৫ হেক্টর জমিতে বোর চাষাবাদ করবেন। এই জমিতে ১৩ লাখ ৭০ হাজার ২০২ মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হবে, যার মূল্য ৪ হাজার একশ দশ কোটি টাকা।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বললেন, এখন কাজ দ্রুত না করলে বিপদে পড়তে হবে সকলকে। অপ্রয়োজনীয় বাঁধ এবং পিআইসির মধ্যে কে এলো আর কে এলো না এই নিয়ে আলোচনা করে সময় নষ্ট হয়েছে আগেও। পিআইসিদের প্রথম কিস্তির অর্থ ছাড় দিয়ে কাজ শুরুর তাগিদ দেওয়া হয়েছে বলে এবং যেসব উপজেলার এখনও পিআইসি গঠন হয়নি। পিআইসি গঠন করে দ্রুত করে কাজ শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।