জুমবাংলা ডেস্ক : লাল সেরোয়ানিতে সাজে ঘোড়ায় চরে বর গেলেন বিয়ে করতে। সব আয়োজন শেষে নববধূ বহনকারী পালকি ছুটছে গ্রামের পথে। ঘোড়ায় চড়া বর আর বেহারার কাঁধের পালকিতে বউ। লাল ঘোমটার লাজুক বধূর রাঙা মুখটা দেখতে গ্রামীণ সড়কে মানুষের অন্ত নেই।
গ্রাম বাংলার চিরায়ত প্রথার পালকি চরে সোমবার শ্বশুর বাড়ি গেছেন নাটোরের গুরুদাসপুরের এক নববধূ। মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) ছিল তিনদিনব্যাপী এই বিয়ের শেষ দিন। আদি বাংলার পুরনো সাজে এই বিয়ের আনুষ্ঠানিকতায় উচ্ছ্বাসের কমতি ছিল না। মাথায় লাল গামছা বেঁধে, গায়ে সাদা গেঞ্জির সঙ্গে সাদা ধবধবে লুঙ্গি পরে বেহারা সেজেছিলেন বরের চার বন্ধু। বেহারাদের মুখে ‘হুন হুনা হুন’ ধ্বনি না থাকলেও ছিল দারুণ হাসি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গুরুদাসপুর পৌর সদরের দক্ষিণ নারিবাড়ি মহল্লার আফাজ উদ্দিনের ছেলে মো. সাগর আলী (২৬) এই বিয়ের বর। কনে একই মহল্লার মো. আলাল উদ্দিন সরদারের কন্যা সুমাইয়া আক্তার তুইশি (২০)। নিজেদের মধ্যে প্রেম থাকলেও পারিবারিকভাবে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ সোমবার। বিয়ের আয়োজন শুরু হয়েছিল রোববার। শেষ হয়েছে মঙ্গলবার।
বরের বাবা আফাজ উদ্দিন ও কনের বাবা আলাল উদ্দিন জানান, তাদের ছেলে-মেয়ে ছোট থাকতেই পরিকল্পনা করেছিলেন বিয়ের। বিয়েটিও হবে পালকি আর ঘোড়ায় চড়ে। মূলত সন্তানের বিয়ের দিনটি স্বরণীয় করে রাখা এবং গ্রাম বাংলার চিরায়ত এই প্রথা আধুনিক সভ্যতার সামনে আরেকবার তুলে ধরাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। এ কারণে বর পক্ষ বাড়িতেই পালকিটি নির্মাণ করেছিলেন। তারা ছেলে মেয়ের মঙ্গল কামনা করেছেন।
এই বিয়েতে অতিথি হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন নাটোর-৪ আসন থেকে মনোয়ন প্রত্যাশী নেতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম। তিনি জানালেন, ইট-পাথরের প্রাচুর্য্য আর আধুনিক চলাচল ব্যবস্থাকে ছাপিয়ে ঘোড়া আর পালকি চড়ে বিয়ে হলো। এই বিয়ে তাকে ৫০ বছরের পুড়নো স্মৃতিতে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে।
বিয়ের বহরে যা দেখা গেল, শক্তিশালী এক ঘোড়ার পিটে বিয়ের সাজে বর। ডান-বাম আর পিছনে বরযাত্রী। অদ্ভুত মজার এক দৃশ্য। নববধূ নিয়ে যখন বর ফিরছিলেন, তখন পালকিতে ছিলেন বউ। এ সময় উৎসুখ মানুষ ঘোমটা পড়া নববধূকে দেখার জন্য সড়কে ছুটে আসেন।
উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে নবদম্পতি জানান, পালকি আর ঘোড়ায় চড়ে বিয়ে। এমন অনেক গল্প তারা শুনেছেন। পালকি আর স্বচোক্ষে দেখা হয়নি। দুই একবার যা দেখেছেন, তা সিনেমার পর্দায়। কিন্তু ঘোড়ায় চড়ে বিয়ে করতে যাওয়া আর পালকি করে বউ আনা সত্যি নান্দনিক। চলমান সভ্যতায় বাস-প্রাইভেটকারে চেপে বিয়ের সঙ্গে ঘোড়া আর পালকির মধ্যে বিস্তার তফাত রয়েছে। তারা নিজেদের বিয়েটি ভিন্নভাবে উপভোগ করেছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।