লাইফস্টাইল ডেস্ক: আপনি হয়তো প্রায়ই আপনার আশেপাশের এমন লোকদেরকে দেখে ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়েন যারা খুব সহজে অসুস্থ হন না। যখন আপনি আপনার অসুস্থতাজনিত ছুটির কোটা শেষ করে ফেলেছেন তখনও তাদের ছুটিগুলো মজুদ রয়েছে। আমরা হয়তো আমাদের জিনগত বৈশিষ্ট্য বা বংশগতিকে দোষ দিতে পারি কিন্তু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শুধু জিনগত ব্যাপার নয়। এমনকি প্রকৃতপক্ষে এর প্রধান অংশই নির্ভর করে আপনার জীবন-যাপনের ধরনের ওপর।
সুতরাং এখানে রইল এমন ২১টি বিষয়ের বিবরণ যা এই কখনো অসুস্থ না হওয়া লোকরা করেন। আপনিও এই অভ্যাসগুলো রপ্ত করতে পারলে অসুস্থ হবেন না।
১. তারা ইতিবাচক চিন্তা করেন
একটি শক্তিশালী দেহের ভিত্তি হলো ইতিবাচক চিন্তা। আপনি যদি বিশ্বাস করেন কাশি হয়েছে এমন কারো পাশে বসলেই আপনি অসুস্থ হয়ে পড়বেন তাহলে আপনি সত্যিই তা হবেন। আর আপনি যদি আপনার দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পর্কে এর চেয়ে ভালো ভাবে ভাবেন তাহলে তা তেমনই হবে। এমনকি গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, আপনি যদি ইতিবাচক মনোভাব লালন করেন তাহলে আপনার ঠাণ্ডা সর্দি হওয়ার ঝুঁকি চারগুন কমে যাবে।
২. তারা পর্যাপ্ত পানি পান করেন
প্রতিদিন ৮ গ্লাস পানি পান করতে হবে এমন কোনো কথা নেই। প্রতিটি মানুষেরই চাহিদা আলাদা। সাধারণত আপনার প্রতি ২০ কেজি ওজনের জন্য আপনি ১ লিটার পানি পান করতে পারেন। সুতরাং আপনার ওজন যদি হয় ৬০ কেজি তাহলে সুস্থ থাকার জন্য আপনাকে ৩ লিটার পানি পান করতে হবে।
৩. তারা গরম পানি পান করেন
আর্দ্র থাকার চেয়েও বরং ফ্লু জাতীয় রোগ থেকে দূরে থাকার জন্য স্বাস্থ্যবান লোকরা গরম পানি পান করেন। গরম পানি পান করলে সাইনাসের সমস্যা দূর হয় এবং নাসারন্ধ্র পরিষ্কার থাকে।
৪. তার পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি খান
ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বেশ কার্যকর। প্রতিদিন অন্তত ৬০ থেকে ৯০ গ্রাম ভিটামিন সি খাওয়া উচিত। কুচি করে কাটা আধা কাপ বেল পিপার বা ক্যাপসিকাম থেকে আপনি এই পরিমাণ ভিটামিন সি পেতে পারেন।
৫. নাকে পানি সেচন করেন
আসলে লবণযুক্ত পানি দিয়ে নাসারন্ধ্র পরিষ্কার করে বিষাক্ত বর্জ্যকে বের করে দেওয়ার পদ্ধতিকে বলা হয় ন্যাসাল ইরিগেশন বা নাকে পানি সেচন। এর ফলে নাকে কোনো সংক্রমণ হয় না।
৬. তারা পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান
ঘুমের ঘাটতির সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার সরাসরি যোগ রয়েছে। আপনি যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে না ঘুমান তাহলে আপনি ঠাণ্ডা ও ফ্লু জাতীয় রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকবেন বেশি।
৭. আশেপাশে কেউ অসুস্থ হলে তারা সংক্রমণ প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেন
যখন কোনো পরিবারের একজন সদস্য অসুস্থ হন তখন অন্যরাও অসুস্থ হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে থাকেন। এই ঝুঁকি এড়াতে পানির কল, দরজার নব, বাতির সুইচ, রিমোট কন্ট্রোল এবং টয়লেটের ফ্লাশার সংক্রমণ মুক্ত রাখুন।
৮. তারা ফোনকে সংক্রমিত করেন না
মোবাইল ফোন হলো ব্যাকটেরিয়াদের আখড়া। মোবাইল ফোনে সব ধরনের ব্যাকটেরিয়ারা বাস করে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে কাজটি করতে হবে তা হলো প্রতিদিন অন্তত দুবার মোবাইল ফোনটি ব্রাশ দিয়ে ঝেটিয়ে পরিষ্কার করুন।
৯. ফ্লুর টিকা নেন
ঠাণ্ডা ও ফ্লু-র সঙ্গে লড়াই করার এটাই সেরা পদ্ধতিটি। সম্ভব হলে প্রতিবছর টিকা নিন এবং নানা ধরনের টিকার হালনাগাদ রাখুন। এতে হয়তো আপনি একেবারে সব ধরনের ফ্লু থেকে রক্ষা পাবেন না কিন্তু বেশিরভাগ থেকেই সুরক্ষিত থাকবেন।
১০. তারা হাসতে ভালোবাসেন
আপনার ফেভারিট শো যদি হয় সাসপেন্স, রহস্য, হরর এবং ক্রাইম। তাহলে এখনই সময় আপনার তালিকাটি নতুন করে তৈরি করুন। কমেডি শো দেখা শুরু করুন। কারণ গবেষণায় দেখা গেছে, যে নারীরা কমেডি শো দেখেন তাদের দেহে সংক্রমণের সঙ্গে লড়াইকারী কোষ বেশি।
১১. সময় পেলেই তারা প্রায়ই পুরো হাত ধোন
যতবারই টয়লেটে যাবেন ততবারই কাজ সেরে ভালো করে হাত ধোবেন। এমনকি শুধু পেশাব করলেও সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। কেননা আপনি একটি জীবাণুর আখড়ায় স্পর্শ করেছেন। আর খাবার খাওয়ার পরও হাত ধুতে হবে। এই অভ্যাস আপনাকে স্বাস্থ্যবান থাকতে সহায়তা করবে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অটটু রাখবে।
১২. তারা জীবাণু ফোবিয়ায় ভোগেন না
তবে স্বাস্থ্য সচেতনরা আবার এমন নন যে তারা জীবাণু ফোবিয়ায় ভোগেন। এমন নয় যে তারা যে কোনো ধরনের জীবাণু থেকেই দূরে থাকতে চান। ফলে সবকিছুকেই স্যানিটাইজ করার অবসেশনের আক্রান্ত না হয়ে বরং উপকারি জীবাণুদের আপনার শরীরে আসতে দিন। যদি আপনি আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরো শক্তিশালী করতে চান। এমনকি প্রকৃতপক্ষে সব ধরনের জীবাণুর বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলার জন্য সেসবের সংস্পর্শেও আসাটা জরুরি।
১৩. নিয়মিত শরীরচর্চা করেন
যোগ ব্যায়াম হোক আর জিম, জুম্বা, অ্যারোবিকস, তাবাটা বা আর যাই হোক না কেন তারা কিছু না কিছু করে ঘাম ঝরান। অর্থাৎ নিয়মিতই শরীরচর্চা করেন।
১৪. জিঙ্কসমৃদ্ধ খাবার খান
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, জিঙ্কসমৃদ্ধ খাবার খেলে ঠাণ্ডা ভালো হয়ে যায়। তবে জিঙ্ক ন্যাসাল স্প্রে ব্যবহার করবেন না। কারণ তা আপনার গন্ধের ইন্দ্রিয়কে অচল করে দিতে পারে।
১৫. সবুজ শাক-সবজি পছন্দ করেন
সবুজ শাক-সবজি হলো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং নানা ধরনের পুষ্টি উপাদান ও ভিটামিনের পাওয়ার হাউস। এসবে আছে ভিটামিন সি, জিঙ্ক যা আপনাকে ফ্রি র্যাডিক্যালস এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহাজ্য করবে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করবে। সুতরাং সবধরনের সবুজ শাক-সবজির প্রতি হ্যাঁ বলুন।
১৬. তারা নিয়মিত যৌন মিলন করেন
আপনার যৌন জীবন যদি হয় সন্তুষ্টিজনক এবং মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তিদায়ক তাহলে তা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করতে সহায়ক হবে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, যারা পর্যাপ্ত পরিমাণে যৌন সহবাস করেন তাদের লালায় অ্যান্টিবডির পরিমাণ বেশি থাকে।
১৭. বন্ধুদের সঙ্গে বাইরে বেড়াতে যান
মানসিক অবসাদ থেকে মুক্ত থাকার একটি সেরা উপায় হলো সামাজিকভাবে যুক্ত থাকা। একটি সামাজিক সার্কেল থাকা ভালো যাদের সঙ্গে আপনি জীবনের নানা সমস্যা শেয়ার করতে পারবেন এবং হাসিখুশি থাকতে পারবেন। সহায়ক বন্ধু এবং পরিবার স্ট্রেস কমায়। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও শক্তিশালী হয়।
১৮. তারা পরিমিত পরিমাণে ওয়াইন পান করেন
ওয়াইনে আছে রেজভারেট্রল যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং প্রদাহ কমায় বলে প্রমাণ আছে। নারীদের প্রতিদিন চার আউন্সের বেশি ওয়াইন পান উচিত নয় আর পুরুষদের জন্য আট আউন্স।
১৯. মেডিটেশন করেন
মেডিটেশন বা ধ্যান করার অনেক উপকার আছে। আর এর একটি হলো রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার মাত্রা বাড়ানো। আপনি যদি প্রতিদিন অন্তত ২০মিনিটও মেডিটেশন করতে পারেন তাহলে আপনার দেহের স্ট্রেস লেভেল কমে আসবে এবং আপনার মনোযোগ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। ফলে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়বে।
২০. অস্বাস্থ্যকর খাবারকে না বলেন
অতিরিক্ত সুগার, প্রক্রিয়াজাতকৃত খাদ্য, জাঙ্কফুড এবং ক্যালোরিঘন খাদ্য এড়িয়ে চলেন তারা। এবং তারা সাধারণত ঘরে রান্না করা খাবার খান এবং বাইরে খুব কম খান।
২১. হারবাল চা পান করেন
গ্রিন টি-র মতো হারবাল চা-তে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্রি র্যাডিকেলদের হত্যা করে যার ফলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা আরো শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
হুবহু মানুষের ভাষায় কথা বলে তাক লাগাল ক্ষুদে শালিক পাখি, ভাইরাল ভিডিও
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।