রঞ্জু খন্দকার : দেশীয় আমের মৌসুম এখন শেষের দিকে। কিন্তু চাঁদপুর সদরের শাহতলী এলাকার একটি বাগানে আমের মৌসুম কেবল শুরু। এ বাগানে বিদেশি ৫১ জাতের আমের চাষ করেছেন কৃষি উদ্যোক্তা হেলাল উদ্দিন। তাঁর বাগানের আমের সুবাস এখন ছড়িয়ে পড়ছে দেশজুড়েই।
তিনি জুমবাংলাকে জানান, যেকোনো মৌসুমী ফল সাধারণত বাজারে প্রচুর পাওয়া যায়। ফলে এর দাম কম থাকে। এ কারণে তিনি মৌসুমের বাইরে ফলে এমন আম চাষ করেছেন। যা পাওয়া যাবে নভেম্বর-ডিসেম্বর পর্যন্ত। এগুলো বিশ্বের সবচেয়ে দামি জাতের আম। এসব চাষ করে কৃষক অনেক লাভবান হতে পারবেন।
পেশায় সাংবাদিক হেলাল উদ্দিন যে জমিতে বাগান করেছেন সেটি ছিল পরিবেশবিধ্বংসী ইটের ভাটা। ভাটার কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যেত চারপাশ। আশপাশের মাঠে ভালো ফসল ফলত না।
হেলাল জানান, তিনি সেই ভাটা ভরাট করেন বালি দিয়ে। বিদেশ থেকে আনা নানা জাতের ফল এনে সেখানে চাষ করতে শুরু করেন।
মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে সেখানে যেন ফলের উপত্যকা গড়ে তুলেছেন তিনি। নাম দিয়েছেন ফ্রুটস ভ্যালি এগ্রো। এটি ডাকাতিয়ার তীরে অবস্থিত।
ফ্রুটস ভ্যালি এগ্রোর একটি ফেসবুক পাতা রয়েছে। সেখানে দেখা যায়, হেলাল কোনো ছবিতে হাত দিয়ে মেপে দেখাচ্ছেন আম। আকার– এক বিঘতেরও বেশি। কোনো ছবিতে ঝুলন্ত আমের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি। কোথাও-বা আমের ঝুড়ি সামনে নিয়ে করছেন এর গুণাগুণ বর্ণনা। কোথাও সাংবাদিকের সামনে দিচ্ছেন সাক্ষাৎকার।
হেলাল জানান, তাঁর আমবাগানের খোঁজ পেয়ে দেশের বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিকেরা ছুটে আসছেন। তিনি নিজেও যেহেতু পেশায় সাংবাদিক, ফলে অনেকেই তাঁর বাগানের আদ্যোপান্ত জানতে চাচ্ছেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি কী করে কৃষি উদ্যোক্তা হলেন– সেসব জানতে চাচ্ছেন। তিনিও হাসিমুখে সব বলছেন।
কর্মজীবনে হেলাল দৈনিক যুগান্তরের বাণিজ্য ও অনলাইন বিভাগের প্রধানসহ বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকার গুরুত্বপূর্ণ পদ অলঙ্কৃত করেছেন।
সাংবাদিকতা থেকে কৃষিউদ্যোক্তা কীভাবে– এমন প্রশ্নের জবাবে হেলাল জানান, তিনি ছোটবেলা থেকে কৃষির প্রতি অনুরক্ত ছিলেন। বিশেষ করে ফুল-ফল তাঁর বিশেষ পছন্দের। ঢাকায় তাঁর বাসায়ও ছাদবাগান রয়েছে। এর মধ্যে সাংবাদিকতা করতে গিয়ে তিনি একপর্যায়ে বাণিজ্য বিভাগের দায়িত্ব পান। এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি দেশের বিভিন্ন এলাকার কৃষিউদ্যোক্তাদের খবরাখবর আরও নিবিড়ভাবে অনুসরণ করার সুযোগ পান। এতে একপর্যায়ে তাঁর মধ্যে ঘুমিয়ে থাকা কৃষিউদ্যোক্তা সত্তাটি জেগে ওঠে। তিনি কৃষি নিয়ে কিছু করার তাগিদ খুঁজে পান।
কৃষি নিয়ে কাজ করলেও গতানুগতিক উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছে ছিল না হেলালের। তিনি চাইতেন ভিন্ন কিছু করবেন। তিনি খেয়াল করলেন, দেশে বিদেশি ফলের বাজার তৈরি হচ্ছে। প্রতি বছর অনেক ফলফলাদি আমদানি করতে হয়। ফলে হেলাল বিদেশি দামি ফল চাষের ব্যাপারে উৎসাহী হয়ে ওঠেন। বিভিন্ন দেশ ঘোরার কারণে তিনি যেখানে যত দুর্লভ ও উন্নত জাতের চারা পেয়েছেন, তার সমাহার ঘটানোর চেষ্টা করেছেন। এখন এসব ছড়িয়ে দিচ্ছেন।
ফ্রুটস ভ্যালি এগ্রোর ফেসবুক পাতা থেকে জানা যায়, এ প্রকল্পের আমের মধ্যে রয়েছে ভ্যালেন্সিয়া প্রাইড, বেইলি মার্বেল, রোসারোসা, সানসেট, আতাউল্ফ, কারাবাও, আলফানসো, গ্লেন, হাডেন, মায়া, ক্রীমসন প্রাইড, অস্টিন, অস্টিন গোল্ড, লেমনযেস্ট, আর-টু ই-টু, ক্যাংসিংটন প্রাইড, ঝিইল, টমি অ্যাটকিনস, রেড আইভরী, কিং অব চাকাপাত ও জাম্বো রেড চাকাপাত।
এ ছাড়া এ বাগানে ব্ল্যাকস্টোন, থ্রিটেস্ট, কেন্ট, কেইট, পালমার (ফ্লোরিডা), চিলি ম্যাংগো, কেষার, পুষা আম্বিকা, পুষা অরনিমা, পুষা অরনিকা, তোতাপুরি, হানিডিউ, নামডকমাই, নামডকমাই সিমওয়াং, গোল্ডেন নামডকমাই, আপেল ম্যাংগো, সেনসেশান, মহাচানক, চিলতাখাস, ক্যারিই, ওকরংথন (চায়নিজ), এসআর ম্যাংগো, বারি-৪, কাটিমন, হানিডিউ, কিউজাই, ব্রুনাই কিং, পারপল ম্যাংগো, থাই কাচামিঠা, গৌরমতি আম রয়েছে।
হেলাল বলেন, এসব আমের বেশির ভাগই নাবি জাতের, দেরিতে ফলে। দেশের বাজারে যেসব ফল পাওয়া যায়, তার চেয়ে এসব ফলের জাত উন্নত। স্বাদে, গন্ধেও এগুলো ব্যতিক্রমী। ফলে বাজারের সঙ্গে এসব মেলানো যাবে না। এ বছর এরই মধ্যে তিনি প্রায় দেড় লাখ টাকার আম বিক্রি করেছেন। প্রায় সারা বছর তাঁর বাগানে আম পাওয়া যাবে। তিনি বছরে প্রায় ১৫ লাখ টাকার আম বিক্রির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন।
২০২০ সালের নভেম্বরে সাড়ে ৩ একর জমিতে এই বাগান গড়ে তোলেন হেলাল উদ্দিন। এর মধ্যে আমের বাগান প্রায় আড়াই একরে। বাকিটাও বিদেশি নানা ফলের। তাঁর আশা, তাঁর মাধ্যমে এসব ফলের জাত সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ুক। দেশ এসব ফলের আমদানি থেকে সরে এসে উৎপাদন করুক। এতে দেশ যেমন নতুন ফল পাবে, তেমনি সমৃদ্ধ হবে অর্থনীতি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।