বিজ্ঞান ও প্রযক্তি ডেস্ক : গবেষণাটির ফলাফল ব্ল্যাক হোল ও এদের পারিপার্শ্বিক অবস্থা সম্পর্কে প্রচলিত ধারণাকে নাড়িয়ে দিয়েছে। এর আগে কোনও ব্ল্যাক হোলের এমন আচরণ কখনও দেখা যায়নি।
এমন এক সুবিশাল কৃষ্ণগহ্বরের সন্ধান মিলেছে, যেটি সম্ভবত ‘হেঁচকি’ তুলছে। আর এই কৃষ্ণগহ্বর বা ব্ল্যাক হোলের অবস্থান পৃথিবী থেকে প্রায় ৮০ কোটি আলোকবর্ষ দূরের একটি গ্যালাক্সিতে।
এ সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলটিকে অদ্ভুতরকম আচরণ করতে দেখা গেছে, যেটি অনেকটা ‘হেঁচকি’ দেওয়ার মতোই ঘটনা ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘মাস্যাচুসেট্স ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি)’ ও বিশ্বের অন্যান্য দেশের একদল গবেষক এ ব্ল্যাক হোলটি খুঁজে পেয়েছেন। ব্লাক হোলটি প্রতি সাড়ে আট দিন ‘হেঁচকি’র মাধ্যমে গ্যাস বের করে পরবর্তীতে আবার শান্ত অবস্থায় ফিরে আসে।
এর আগে কোনও ব্ল্যাক হোলের এমন আচরণ কখনও দেখা যায়নি, যা বিশ্বের বিভিন্ন জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মধ্যে রীতিমতো উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।
সাধারণত, ব্ল্যাক হোলকে একটি মহাজাগতিক ‘ভ্যাকুয়াম ক্লিনার’ হিসাবে কল্পনা করা হয়ে থাকে কারণ এরা নিজেদের চারপাশের সবকিছুকে শুষে নেয়। তবে এ ব্ল্যাক হোল থেকে ধারাবাহিকভাবে নির্গত গ্যাসের বিভিন্ন ‘প্লাম’ থেকে ইঙ্গিত মেলে, এতে আরও অনেক কিছুই ঘটছে।
গবেষকদের ধারণা, কোনও ছোট আকারের ব্ল্যাক হোল সম্ভবত এর চেয়ে বড় আকারের ব্ল্যাক হোলকে প্রদক্ষিণ করে থাকে। এর ফলে বড় ব্লাক হোলটি সাড়ে আট দিনে ছোট আকারের ব্লাক হোলটিকে নিজের ‘গ্যাস ডিস্কে’ টেনে নিচ্ছে। আর এভাবে প্রতিবার এর মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় ‘হেঁচকি’র মাধ্যমে গ্যাসকে মহাশূন্যে ছড়িয়ে দিচ্ছে সুপারম্যাসিভ ব্লাক হোলটি।
গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’ জার্নালে, যার বিভিন্ন ফলাফল ব্ল্যাক হোল ও এদের পারিপার্শ্বিক অবস্থা সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের প্রচলিত ধারণাকে নাড়িয়ে দিয়েছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানিভিত্তিক সাইট নোরিজ।
ব্ল্যাক হোল প্রায়শই এর আশপাশের ‘গ্যাসের ডিস্কের’ মাধ্যমে বেষ্টিত থাকে, যা এদের চারপাশেই ঘোরাফেরা করে। অনেকটা ড্রেনের নীচ দিয়ে পানি প্রবাহের মতো।
এখনও পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের প্রচলিত ধারণা ছিল, ব্লাক হোলের চারপাশের ‘গ্যাসের ডিস্ক’ বোঝা বেশ সহজ। তবে নতুন এ গবেষণায় ইঙ্গিত মেলে, ব্ল্যাক হোলের চারপাশে থাকা ‘গ্যাসের ডিস্কগুলো’ সম্ভবত ছোট ছোট ব্ল্যাক হোল, এমনকি সেগুলো তারাও হতে পারে।
“আমরা ভেবেছিলাম, ব্ল্যাক হোল সম্পর্কে আমরা অনেক কিছুই জানি। তবে নতুন এ গবেষণা আমাদের জানান দিচ্ছে, ব্ল্যাক হোল সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান এখনও সীমিত। কারণ এটি আরও অনেক কিছুই করতে পারে,” বলেছেন এ গবেষণার অন্যতম লেখক ও এমআইটি’র বিজ্ঞানী ধীরাজ ‘ডিজে’ পাশম।
ইতালি ও চেক প্রজাতন্ত্রের মতো বিশ্বের নানা দেশের গবেষকরা যুক্ত রয়েছেন এ গবেষণা দলে।
একটি শান্ত ছায়াপথ হঠাৎ করে কেন হাজার গুণ উজ্জ্বল হয়ে উঠল— বিষয়টি নজরে আসে পাশমের। পরবর্তীতে নাসা’র এক্স-রে অবজারবেটরি টেলিস্কোপ ‘নাইসার’ দিয়ে বিষয়টি পর্যবেক্ষণের সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
‘নাইসার’ টেলিস্কোপটি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে অবস্থান করছে ও এক্স-রে প্রযুক্তির মাধ্যমে মহাকাশে অনুসন্ধান করে চলেছে, যা ব্ল্যাক হোলের কার্যকলাপের মতো বিভিন্ন ঘটনা সম্পর্কে সংকেত পাঠাতে সক্ষম।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।