জুমবাংলা ডেস্ক : ছত্রাকজনিত অলটারনারিয়া ব্লাইট রোগ প্রতিরোধী ও উচ্চ ফলনশীল সরিষার পাঁচটি জাত উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) গবেষক অধ্যাপক ড. আরিফ হাসান খান রবিন ও তার দল। দীর্ঘ পাঁচ বছরের গবেষণায় এ সাফল্য পেয়েছেন তারা।
উদ্ভাবিত সরিষার জাতগুলো হলো- বাউ সরিষা-৪, বাউ সরিষা-৫, বাউ সরিষা-৬, বাউ সরিষা-৭ এবং বাউ সরিষা-৮।
জাতগুলোর গড় ফলন হেক্টরপ্রতি ২ দশমিক ৫ টন; যা দেশে প্রচলিত অন্যান্য জাতের তুলনায় ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ বেশি। জাতগুলো সারা দেশে চাষের উপযোগী এবং এদের জীবনকাল ৯০ থেকে ৯৫ দিন। কৃষকরা এ জাতগুলো চাষ করে প্রচলিত জাতের তুলনায় প্রায় দেড় থেকে দুইগুণ বেশি আয় করতে পারবেন।
সোমবার দুপুরে বাকৃবি সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান গবেষক দলের প্রধান বাকৃবির কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক ড. আরিফ হাসান খান রবিন।
গবেষক ড. রবিন জানান, দেশে সরিষা উৎপাদনের ক্ষেত্রে বড় বাধা হলো নানান রোগ ও পোকার আক্রমণ। এর মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি হলো অলটারনারিয়া ব্লাইট রোগ। এটি একটি ছত্রাকজনিত রোগ। রোগটি এককভাবে তেলবীজের ফলন ৩০-৫০ শতাংশ কমিয়ে দেয়। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে জমির শতভাগ ফসল নষ্ট করে দেয়। নতুন উদ্ভবিত জাতগুলো অলটারনারিয়া ব্লাইট রোগের প্রতি উচ্চমাত্রায় সহনশীল এবং প্রায় ৯৯ শতাংশ প্রতিরোধী। আগাম ও স্বল্প জীবনকালের আমন ধান চাষের পর একই জমিতে এ সরিষার জাতগুলো কৃষকরা চাষ করতে পারবেন। গত তিন বছর ধরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে প্রকল্পটির গবেষণা চলমান রয়েছে। গবেষণা প্রকল্পটির সঙ্গে উপদেষ্টা হিসেবে যুক্ত ছিলেন বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান।
সরিষার উপকারিতা সম্পর্কে তিনি বলেন, সরিষার তেলে উপকারী ফ্যাটি অ্যাসিড থাকায় রক্তে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। এছাড়া ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৬ ফ্যাটি এসিডের একটি আদর্শ অনুপাত (২:৫:১) থাকায় এটি স্বাস্থ্যের জন্য অতি উপকারী। এছাড়া সরিষার তেল হৃদরোগ ও ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
ড. রবিন আরও জানান, উদ্ভাবিত সরিষার এ পাঁচটি জাত ব্রাসিকা জুনসিয়া প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত। জাতগুলো অতিরিক্ত আদ্রতাতেও ১০০ দিনের মধ্যে দানা পরিপক্ব হতে সক্ষম। দেশে বর্তমানে প্রায় ০.৩ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়। পুষ্টিগুণ, স্বাদ ও ঝাঁঝের কারণে রসনাবিলাসের পাশাপাশি ভোজ্যতেলের চাহিদার একটি বড় অংশ পূরণ করছে সরিষা। সরিষার তেলবীজে জাতভেদে ৪০ থেকে ৪৫ ভাগ তেল থাকে। এ উৎপাদন দেশের মোট চাহিদার মাত্র ১৫-২০ শতাংশ পূরণ করছে। ভোজ্যতেল আমদানিতে বাংলাদেশকে প্রতিবছর ২ হাজার ১০০ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করতে হয়। সরিষা জাতগুলো আবাদের মাধ্যমে দেশে ভোজ্যতেলের সংকট অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব বলে জানান এই গবেষক।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।