শিক্ষা অঙ্গন : অনেক শিক্ষার্থীর স্বপ্ন বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করা। সেই স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীরা এইচএসসি পরীক্ষার পর বিভিন্ন কোর্সে ভর্তি হওয়া শুরু করেন। যারা সঠিক পরিকল্পনা ও বাস্তব জ্ঞান অর্জন করতে পারেন তারাই বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে সফল হন। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের হার প্রতিনিয়ত বাড়লেও বর্তমানে সে হার অনেকটা কমে গেছে বেশকিছু কারণে।
সেই কারণগুলো কী হতে পারে তা তুলে ধরেছেন আহমদ মানিক
শিক্ষার্থী ও ব্যাংকিং চ্যানেলের পরিসংখ্যান
গত ৮ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রজ্ঞাপনে ডলারের নতুন বিনিময় হার নির্ধারণ করা হয়। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী বর্তমানে প্রতি ডলারের দর ১১৭ টাকা। এর আগে মুদ্রাটির বিনিময় হার ছিল ১১০ টাকা। এ ছাড়া জানুয়ারি ২০২০ থেকে চলতি মাস পর্যন্ত টাকার বিপরীতে ডলারের দর বেড়েছে প্রায় ৩৮ শতাংশ। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে প্রতি ডলারের দর ছিল ৮৪ টাকা ৯০ পয়সা।
ইউনেস্কোর হিসাব অনুযায়ী, ২০২১ সালে উচ্চশিক্ষায় বিদেশে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৫২ হাজার ৭৯৯ জন। কয়েক বছর ধরে এ সংখ্যা বাড়ছে। এর মধ্যে ২০২১-এর তুলনায় ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে ৬০ শতাংশ। সাধারণত দেশের বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের ভর্তি ও টিউশন ফিসহ আনুষঙ্গিক খরচ ডলারে পরিশোধ করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিদেশে উচ্চশিক্ষা বাবদ গত তিন অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলে লেনদেনের পরিমাণ ১৩০ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। এর মধ্যে ২০২১-২২ অর্থবছরে লেনদেন হয় ৪১ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। পরের অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫১ কোটি ৯৯ লাখ ডলারে। আর চলতি অর্থবছরে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাঠানো হয়েছে ৩৭ কোটি ৩ লাখ ডলার। জাতিসংঘের শিক্ষা বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থার (ইউনেস্কো) সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, বিদেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এখন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। বিগত সালে ১১ হাজার ১৫৭ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়েছেন আবুধাবি ও দুবাইসহ ইউএইর উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয়। সে হিসেবে গত বছর বাংলাদেশ থেকে উচ্চশিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে বিদেশে যাওয়া মোট শিক্ষার্থীর ২২ শতাংশই গেছেন ইউএইতে।
ডলার সংকট
বিশ্বের যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী যেতে আগ্রহী এমন দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং জার্মানি। এ ছাড়া চীন, জাপান দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিও আগ্রহ আছে আমাদের শিক্ষার্থীদের। বর্তমানে দেশে ডলার সংকটের কারণে গত বছর জটিলতায় পড়ে যান বিদেশগামী অনেক শিক্ষার্থী। ডলারের সে সংকট এখনো কাটেনি। ওই সময় অনেক ব্যাংক বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি পরিশোধের জন্য ‘স্টুডেন্ট ফাইল’ খুলতে গড়িমসি করে। এর মধ্যে নতুন করে ডলারের বিপরীতে টাকার ক্রমাগত অবমূল্যায়ন বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণকে আরও কঠিন করে তুলেছে। বৈধ লেনদেনের জন্য দেশীয় ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ‘ফাইল খোলা’ বাধ্যতামূলক। কিন্তু ফাইল খোলা প্রায় বন্ধই রেখেছে অধিকাংশ ব্যাংক। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অফার লেটার এমনকি সংশ্লিষ্ট দেশের ভিসা পেয়েও বিদেশে যেতে পারছেন দেশের অনেক শিক্ষার্থী। ডলার সংকটের কারণে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরনের জটিলতায় পড়তে হচ্ছে জানিয়ে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. মুন্না জানিয়েছেন, ‘আমাদের ভর্তির সময় ডলারের দাম ছিল ৯৮ টাকা। এখন ১১৬ টাকা ব্যাংক রেট নির্ধারিত হলেও খোলাবাজারে প্রায় ১৩০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এতে আমার প্রায় আড়াই লাখ টাকা টিউশন ফি বেশি দিতে হবে; ডলারের দাম বাড়লে এটি আরও বাড়বে।’
বিসিএস ভাইভার প্রস্তুতি নেবেন যেভাবে
বিসিএস পরীক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো ভাইভা। অনেকে লিখিত পরীক্ষায় ভালো করতে পারলেও ভাইভাতে গিয়ে খারাপ করে বসে। কাক্সিক্ষত ক্যাডার প্রাপ্তির জন্য লিখিতের পাশাপাশি ভাইভার মার্কসও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ভাইভা ও লিখিত মিলিয়েই চূড়ান্ত মেধা তালিকা প্রকাশ করা হয়। ভাইভা বোর্ডে কী ধরনের প্রশ্ন করা হবে এ নিয়ে অনেকের মাঝে একটা ভীতিও কাজ করে। তবে নিম্নোক্ত উপায়ে পরিকল্পনামাফিক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারলে এ ভয়কে দূর করা সম্ভব। বিস্তারিত তুলে ধরেছেন ৩৭তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে ৮ম মো. দিদারুল ইসলাম
জানা থাকা চাই নিজের সম্পর্কে
ভাইভা বোর্ডের অধিকাংশ প্রার্থীকেই নিজের সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। তাই প্রার্থীকে নিজের সম্পর্কে খুঁটিনাটি সবকিছু জানা থাকাটা জরুরি। প্রার্থী নিজের সম্পর্কে কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারলে ভাইভা বোর্ডের সদস্যরা চরম বিরক্ত হন। নিজের সম্পর্কে তথ্যগুলো খাতায় একত্রে নোট করে লিখে বারবার চর্চা করতে হবে। জন্মসন, ভাইভার তারিখে বয়স, নিজের নামে কোনো বিখ্যাত ও জনপ্রিয় ব্যক্তি থাকলে তার সম্পর্কিত তথ্য, নিজ পরিবার, বাবা ও মায়ের পেশা, নিজের ভালো ও খারাপ দিক, শখ, কারিকুলার এক্টিভিটি প্রভৃতি সম্পর্কে জানতে হবে।
জানতে হবে নিজের এলাকা সম্পর্কেও
নিজ উপজেলা ও জেলার আয়তন, জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত, প্রধান নদ-নদী, ঐতিহাসিক স্থান, জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বিখ্যাত ও কুখ্যাত ব্যক্তি, বর্তমান ডিসি, এসপির নাম, জেলা-উপজেলায় কোনো মন্ত্রী থাকলে তার সম্পর্কিত তথ্যাদিও জানা থাকতে হবে।
নিজ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কিত তথ্য
নিজ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম, প্রতিষ্ঠার সন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও নিজ ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান, প্রথিতযশা শিক্ষক সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখতে হবে। তাছাড়া নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বিষয়ে অসামান্য অর্জন থাকলে তাও জানা রাখতে হবে।
পঠিত বিষয়ের ধারণা
প্রার্থীকে নিজ পঠিত বিষয়ে বেসিক ধারণা রাখতে হবে। নিজের পঠিত বিষয় সম্পর্কে কোনো কিছু না পারলে ভাইভা বোর্ডে বিরূপ ধারণার সৃষ্টি হয়। নিজের সাবজেক্ট সম্পর্কিত কয়েকটি বইয়ের নাম, সাবজেক্টের সঙ্গে প্রদত্ত ক্যাডারের সম্পর্ক প্রভৃতিও অনেক সময় জানতে চাওয়া হয়। তাই এসব প্রশ্নের উত্তর আগে থেকেই নোট করে গুছিয়ে রাখতে হবে।
ক্যাডার সম্পর্কিত তথ্য
বিসিএসে কেন আসতে চান? কেন প্রশাসন/পুলিশ/ফরেন প্রথম পছন্দ? এসব প্রশ্নের উত্তর আগে থেকেই রেডি করে রাখতে হবে। ভাইভা বোর্ডের অধিকাংশ প্রশ্ন প্রথম পছন্দ থেকেই করা হয়ে থাকে। তাই ক্যাডার তালিকার প্রথম পছন্দ সম্পর্কে একটু বিস্তারিত জানতে চেষ্টা করুন। উক্ত ক্যাডারে গেলে আপনি কোন পদে যোগদান করবেন, যোগদানের পর কাজ কী হবে, পদক্রম, কাজের চাপ কেমন, সুবিধা-অসুবিধা, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় প্রভৃতি সম্পর্কে জেনে রাখুন। পরবর্তী দুটি পছন্দ সম্পর্কে বেসিক ধারণা রাখুন যাতে প্রশ্ন করলে আটকে না পড়েন। বাকি চয়েজগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত না জানলেও চলবে।
ভাইভা বোর্ডের কমন প্রশ্নগুলো সম্পর্কেও জেনে রাখুন
সংবিধানের প্রস্তাবনা, মৌলিক অধিকার, রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতি, রাষ্ট্রের তিনটি বিভাগ, সরকারি কর্মকমিশন ও সংবিধানের প্রাধান্য সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদ ও সংশোধনীগুলো জেনে রাখুন।
ষ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, সেক্টর ও সেক্টর কমান্ডারগণ, মুজিবনগর সরকার, বীরশ্রেষ্ঠগণের নাম ও পদবী, মুক্তিযুদ্ধের পদকপ্রাপ্তের সংখ্যা প্রভৃতি।
ষ শেখ মুজিব ও তার পরিবার সম্পর্কিত তথ্য, অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা থেকে তথ্য, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও রাজনৈতিক জীবন এবং তার রচিত কয়েকটি বইয়ের নাম ও তার দেশ-বিদেশের অর্জিত পদক ও খেতাব সম্পর্কিত তথ্য।
ষ বর্তমান সরকারের সাফল্য ও চ্যালেঞ্জসমূহ, দেশের সাম্প্রতিক রাজনীতি, অর্থনীতি ও কূটনীতি সম্পর্কিত তথ্যাদি।
ষ দেশের উন্নয়নে নারীর ভূমিকা, বিখ্যাত নারী ও তাদের কার্যক্ষেত্রসমূহ।
ষ তাছাড়া নিয়মিত পত্রিকা পড়ার অভ্যাস থাকাটাও জরুরি। ভাইভা বোর্ডের অনেক প্রশ্নই সাম্প্রতিক বিষয় থেকে করা হয়ে থাকে আর এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে পত্রিকা পড়ার কোনো বিকল্প নেই।
ষ ভাইভা বোর্ডে অনেক সময় ইংরেজিতে প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। এসব প্রশ্নের উত্তরও করতে হয় ইংরেজিতে। তাই ভাইভা বোর্ডে ইংরেজিতে কথা বলার দক্ষতাও অর্জন করতে হবে। আয়নার সামনে নিয়মিত চর্চা ইংরেজিতে কথা বলার দক্ষতা অর্জনে অনেকটা সহায়ক হতে পারে।
ষ ভাইভার প্রস্তুতির জন্য কিছু বই আপনার সহায়ক হতে পারে যেমন- রাজনীতি কোষ, স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস, ভাইভা বোর্ডের মুখোমুখি, মুজাহিদ’স ভাইভা সাজেশন ইত্যাদি। পারলে এগুলো সংগ্রহ করে রাখুন। সর্বোপরি ভাইভাতে ভালো করার জন্য নিজের উপর বিশ্বাস রাখাটা জরুরি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।