বিশ্বমানের শিক্ষাব্যবস্থা ও উন্নত জীবনব্যবস্থার সঙ্গে বাজেটের দিকটা মিলে গেলেই উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে দেশটিতে পাড়ি জমান অনেক শিক্ষার্থী। বিশেষ করে ইউরোপ, মধ্য এশিয়া, আমেরিকার বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কম খরচে অধ্যয়নের সুযোগ রয়েছে। স্বল্প খরচে উচ্চশিক্ষার এমন ১০টি দেশ নিয়ে আজকের আয়োজন
জার্মানি
শিক্ষার্থীদের পছন্দের শীর্ষ দেশ জার্মানি। এখানকার অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রের অর্থায়নে পরিচালিত। ব্যাচেলর কোর্স এবং বেশির ভাগ মাস্টার্স কোর্সের জন্য সাধারণত কোনো ফি নেই। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খরচ বলতে আছে সেমিস্টার কন্ট্রিবিউশন ফি, যার সঙ্গে টিউশন ফির কোনো সম্পর্ক নেই। এটি শিক্ষার্থীদের কল্যাণেই পাবলিক পরিবহন, ক্রীড়া, অনুষদ/বিভাগীয় ছাত্রসংগঠন এবং প্রশাসনিক ফি ব্যয়ভার বহন করে। এই ফি প্রতিষ্ঠানভেদে পরিবর্তিত হয় এবং সাধারণত ১০০ থেকে ৩৫০ ইউরোর মধ্যে থাকে। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জীবনযাত্রার খরচ সাধারণত প্রতি মাসে ৭২৫ ইউরোর মতো হয়ে থাকে, যেখানে বাসস্থান, খাবার, পোশাক ও বিনোদনমূলক কার্যক্রম সবই অন্তর্ভুক্ত।
নরওয়ে
নরওয়ের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সব আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর জন্য টিউশন ফি মুক্ত। প্রতি সেমিস্টারে শুধু একটি শিক্ষার্থী ইউনিয়ন ফি দিতে হবে, যা ৩০ থেকে ৬০ ইউরোর মধ্যে। পাবলিক পরিবহন, জাদুঘর ও সাংস্কৃতিক ইভেন্ট, স্বাস্থ্যসেবায় বিশেষ ছাড় এবং ক্রীড়া সুবিধাগুলোসহ বেশ কিছু সুবিধা পাওয়া যাবে। নরওয়েতে জীবনযাত্রার জন্য প্রতি মাসে গড়ে ৮০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ ইউরোর মতো খরচের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। বড় শহরগুলোতে স্বাভাবিকভাবেই খরচ অনেক বেশি কিন্তু ছোট শহরগুলোতে গড়পড়তা ৮০০ থেকে ১ হাজার ইউরোর মধ্যেই থাকা-খাওয়া, চলাফেরার যাবতীয় খরচ হয়ে যায়।
অস্ট্রিয়া
ইউরোপের অন্যতম দেশ অস্ট্রিয়া। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইউ)/ইউরোপিয়ান ইকোনমিক এরিয়া (ইইএ) দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের জন্য এখানকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর টিউশন ফি একদম ফ্রি। কিন্তু নন-ইউ/ইইএ দেশগুলোর ছাত্রছাত্রীদের জন্য এখানকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রতি সেমিস্টারে ২০ ইউরো ছাড়াও টিউশন ফি বাবদ গড়ে ৭২৬ দশমিক ৭২ ইউরোর মতো খরচ হয়। তবে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য অস্ট্রিয়ার অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় টিউশন ফি-মুক্ত শিক্ষা প্রদান করছে। এগুলোর মধ্যে ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়, ভিয়েনা মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ইনসব্রুক বিশ্ববিদ্যালয়, জোহানেস কেপলার ইউনিভার্সিটি লিঞ্জ, গ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় ও লিওবেন বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম। জীবনযাত্রার খরচ ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশ কম।
তাইওয়ান
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য তাইওয়ান অন্যতম স্বল্প খরচের দেশ। প্রযুক্তিগত, ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক, ভাষাগত, প্রাকৃতিক সম্পদসহ যাবতীয় অভিজ্ঞতা অর্জনের অনেক সুযোগ রয়েছে দেশটিতে। এখানে ইংরেজি ভাষায় অধ্যয়নের জন্য প্রচুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করছে। বহু সাংস্কৃতিক ও সমৃদ্ধ পুরনো ইতিহাস পরিদর্শনে তাইওয়ান বিদেশি শিক্ষার্থীদের আন্তরিকভাবে স্বাগত জানায়। ফলে খুব সহজেই সাবলীল হয়ে ওঠা যায় অপরিচিত এই দেশেও। বেশ কয়েক বছর ধরেই তাইওয়ানের উচ্চ শিক্ষাব্যবস্থা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এবং দারুণ স্বীকৃতিও পেয়েছে। দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অধ্যয়ন খরচ প্রতিবছর ৬৭৫ থেকে ১২ হাজার ৭০০ ইউরো। এখানে ন্যূনতম জীবনধারণের জন্য প্রতি মাসে প্রায় ৬৮০ থেকে ৮৮০ ইউরো খরচ করতে হবে।
গ্রিস
গ্রিস উচ্চশিক্ষার জন্য একটি জনপ্রিয় গন্তব্য। কারণ গ্রিস শুধু তাদের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক উত্তরাধিকার নিয়েই গর্ব করে না, তারা তাদের শিক্ষার মাধ্যমে সে ঐতিহ্যকে উন্নত করছে। দেশজুড়ে প্রচুর গ্রিক বিশ্ববিদ্যালয় ইংরেজি ভাষায় অধ্যয়ন করে ডিগ্রি লাভের সুবিধা রেখেছে। ইইউ দেশ হিসেবে গ্রিস বোলোগনা প্রক্রিয়ার সদস্য, তাই এখানকার শিক্ষার্থীরা ইউরোপের যে কোনো বোলোগনা সদস্য দেশের যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রেডিট স্থানান্তর করতে পারেন।
নন-ইইউ/ইইএ শিক্ষার্থীদের জন্য বেশির ভাগ ব্যাচেলর এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রির জন্য প্রতি শিক্ষাবর্ষে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ইউরোর মতো অর্থ খরচ করতে হয়। গ্রিসের সাশ্রয়ী পরিবেশে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর বাজেট প্রতি মাসে ৪৫০ থেকে ৭৫০ ইউরো হয়ে থাকে।
হাঙ্গেরি
পাবলিক হাঙ্গেরিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়গুলো টিউশন ফির দিক থেকে তাদের পশ্চিমা সমকক্ষদের তুলনায় অনেক বেশি সাশ্রয়ী। একজন বিদেশি শিক্ষার্থীকে অধিকাংশ ডিগ্রির জন্য প্রতিবছর ১ হাজার ২০০ থেকে ৫ হাজার ইউরোর মতো খরচের প্রস্তুতি নিতে হয়। আর বসবাসের জন্য ব্যয় হয় ৩৭৫ থেকে ৭০০ ইউরোর মধ্যে। তবে তা অবশ্যই শহরের ধরনের ওপর নির্ভর করে। আবাসন, খাবার, পরিবহনসহ আনুষঙ্গিক বিষয় বিবেচনা করে রাজধানী বুদাপেস্টে প্রতি মাসে ৬০০ ইউরো যথেষ্ট। আর ছোট শহরগুলোয় প্রতি মাসে ৬০০ ইউরোর নিচে জীবনযাত্রার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। বিদেশে স্নাতক অধ্যয়নের জন্য আর্থিক সহায়তার মধ্যে আছে ফেডারেল অনুদান, ফেডারেল এবং ব্যক্তিগত ঋণ। এর বাইরে আছে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার প্রদত্ত বৃত্তি, যেগুলো এই দেশগুলোয় জীবনযাত্রার খরচের ঘাটতি অনেকটাই পূরণ করতে পারে।
ফ্রান্স
ফ্রান্সকে বলা হয় বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বর্গ। দেশটি শুধু পড়াশোনার জন্যই নয়; বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং সমগ্র ইউরোপীয় বাজারে তাদের রয়েছে অবাধ পদচারণ। স্নাতক করার পর আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা এখানে বিভিন্ন ব্যবসায়িক খাতে আকর্ষণীয় কর্মসংস্থানের সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এখানে লাইসেন্স (স্নাতক) স্তরে প্রতিবছর খরচ হতে পারে ২ হাজার ৭৭০ ইউরো। মাস্টার্স লেভেলে খরচ আছে বছরপ্রতি ৩ হাজার ৭৭০ ইউরো।
তুরস্ক
তুরস্কের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুব সাশ্রয়ী মূল্যের। দেশটিতে রয়েছে মানসম্পন্ন শিক্ষাব্যবস্থা। ইউরোপীয় উচ্চশিক্ষা অঞ্চলের অংশ, যা বোলোগনা প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত। এতে করে তুর্কি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত ডিপ্লোমা বা ডিগ্রি ইউরোপের সর্বত্র স্বীকৃতি পায়। সাধারণত প্রতি শিক্ষাবর্ষে ১০০ থেকে ৪ হাজার ইউরোর মতো খরচ করতে হয় শিক্ষার্থীকে। বিশ্বের অন্যান্য অধ্যয়নের গন্তব্যের তুলনায় এটি অনেক বেশি সাশ্রয়ী। একজন বিদেশি শিক্ষার্থী প্রতি মাসে ৪০০ থেকে ৬৫০ ইউরো বাজেটের মধ্যে তুরস্কে থাকতে পারেন।
পোল্যান্ড
ইউরোপের দেশ পোল্যান্ড। ৪৫০টিরও বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে দেশটিতে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অ্যাডমিশন পরীক্ষা না থাকার কারণে এই অধ্যয়নের গন্তব্য দেশের বাইরের ছাত্রছাত্রীদের কাছে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য। এ ছাড়া পোল্যান্ডে পড়াশোনার খরচ অন্যান্য পশ্চিমা ইউরোপীয় দেশের তুলনায় কম। আন্ডারগ্র্যাজুয়েশনের জন্য সর্বসাকুল্যে প্রয়োজন হবে শুধু মাধ্যমিক শিক্ষার একটি প্রশংসাপত্র, একটি আর্থিক কার্যকারিতা প্রশংসাপত্র এবং ইংরেজি বা পোলিশ ভাষার দক্ষতা। প্রথম, দ্বিতীয় এবং দীর্ঘ-চক্র অধ্যয়নের জন্য টিউশন ফি ২ হাজার ৩৬৮ ইউরো। তাই বাইরের শিক্ষার্থীদের জীবনযাত্রার খরচ এখানে প্রতি মাসে ৩৫০ থেকে ৫৫০ ইউরোর মধ্যে পরিবর্তিত হয়। শহরের সীমারেখা ও নগরায়ণের অবস্থার ওপর নির্ভর করে এই বাজেটের তারতম্য ঘটে থাকে।
মালয়েশিয়া
মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য প্রচুরসংখ্যক প্রোগ্রাম অফার করে। তবে মালয়েশিয়ার সবচেয়ে প্রাচীন ও খ্যাতিসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয় মালয় বিশ্ববিদ্যালয়, যেটি মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালামাপুরে অবস্থিত। ডিপ্লোমা, ব্যাচেলর (অনার্স), মাস্টার্স ও পিএইচডি কোর্সে উচ্চশিক্ষা গ্রহনের সুযোগ রয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রিতে খরচ পড়ে গড়ে প্রতিবছর ২ হাজার থেকে ৪ হাজার ৫০০ ইউরো। স্নাতকোত্তর ডিগ্রিতে প্রতিবছর ৫০০ থেকে ৪ হাজার ইউরো খরচ যায়। জীবনযাত্রার ব্যয়ভার বহন করার জন্য প্রতি মাসে ৪৫০ থেকে ৮০০ ইউরোর মতো লাগে। সাধারণত দুই সময়ে আবেদন গ্রহণ করা হয়ে থাকে- প্রতিবছরের জুন মাসে আবেদন শুরু হয়, এ আবেদনের সময়সীমা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এবং নভেম্বরে, এ আবেদনের সময়সীমা ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। মালয়েশিয়ায় পৌঁছানোর পর প্রথম মাসেই কিছু কাজ জরুরিভাবে করে নিতে হবে। প্রথম সাত দিনের মধ্যে যেকোনো ইএমজিএস-নিবন্ধিত কিনিকে মেডিকেল স্ক্রিনিং করে নিতে হবে। আবাসনের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি শিক্ষাগত নথিগুলো সঠিকভাবে রয়েছে, তা নিশ্চিত করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ইএমজিএসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
তথ্যসূত্র : ইউএনবি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।