জুমবাংলা ডেস্ক : বঙ্গোপসাগরে ভাসা জালে আশানুরূপ ইলিশ ধরা পড়ছে না। তাই তাইল্যা জালই এখন জেলেদের ভরসা। বঙ্গোপসাগরে বড় আকারের ইলিশের সংখ্যা কমে আসায় ভাসা জালে ইলিশ ধরা কম পড়ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বঙ্গোপসাগরে বিভিন্ন ধরনের জাল দিয়ে মাছ ধরা হয়। এরমধ্যে ইলিশ ধরা হয় ৪ থেকে ৫ আঙুলের ফাঁসযুক্ত সুতার জাল দিয়ে, যেটি ভাসা জাল নামেই জেলেদের কাছে পরিচিত। আর সাগর থেকে তাইল্যা ও কোরাল মাছ ধরা হয় দুই থেকে তিন আঙুলের ফাঁসযুক্ত এক ধরনের রক জাল দিয়ে, যেটি তাইল্যা জাল নামে পরিচিত। কিন্তু গত প্রায় তিন মাস ধরে ভাসা জালে আশানুরূপ ইলিশ ধরা পড়ছে না। তাই অধিকাংশ জেলে এখন তাইল্যা জালের দিকে ঝুঁকছে।
বঙ্গোপসাগর থেকে মাছ ধরে প্রতিদিন কক্সবাজার শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারিঘাটে আসে অসংখ্য ট্রলার। এখান থেকে ইলিশসহ অন্যান্য মাছগুলো ট্রাকবোঝাই করে পাঠানো হয় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে। গতকাল শনিবারও এখান থেকে ৪টি ট্রাকে প্রায় ৩২ মেট্রিক টন ইলিশ ঢাকার উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়েছে, যার মধ্যে অধিকাংশ ইলিশই তাইল্যা জালে ধরা পড়া বলে জানান ফিশারিঘাট মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী।
তিনি বলেন, বর্তমানে ফিশারিঘাটে আসা ৬০ ভাগ থেকে ৮০ ভাগ ইলিশই তাইল্যা জালে ধরা পড়া। বাকি ২০ ভাগ থেকে ৪০ ভাগ ইলিশ ভাসা জালে ধরা পড়েছে। তিনি জানান, তাইল্যা জালের বোটগুলোতে দেড়শ থেকে ৪শ গ্রাম ওজনের ইলিশ ধরা পড়ে। আর ভাসা জালের বোটগুলোতে ৪শ গ্রাম থেকে বড় ওজনের ইলিশগুলো ধরা পড়ে।
জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন জানান, বঙ্গোপসাগরে ভাসা জালে এখন আশানুরূপ ইলিশ ধরা পড়ছে না। অনেকেই সাগর থেকে ১৭–১৮ দিন পর ঘাটে ফিরেছে প্রায় খালি হাতে। বঙ্গোপসাগরে বড় আকারের ইলিশের সংখ্যা কমে আসায় ভাসা জালে ইলিশ ধরা কম পড়ছে বলে মনে হচ্ছে। এতে অনেকেই তাইল্যা জালের দিকে ঝুঁকে পড়ছে।
ফিশারি মৎস্য ব্যবসায়ী ঐক্য সমবায় সমিতির সভাপতি জানে আলম পুতু বলেন, গত অক্টোবর মাসে সাগরে মাছ ধরার উপর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা অতিবাহিত হওয়ার পর বঙ্গোপসাগর থেকে গত তিন মাসে গড়ে ৭/৮ টনের বেশি ইলিশ আসেনি। তবে গত চার দিন ধরে দৈনিক গড়ে ৩০ টনের বেশি আসছে। কিন্তু মাছগুলো আকারে ছোট।
কঙবাজার ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির মতে, কঙবাজারে ছোট বড় ৭ সহস্রাধিক যান্ত্রিক বোট রয়েছে। এরমধ্যে বড় নৌকায় ৩০ থেকে ৪০ জন এবং ছোট নৌকায় ৫ থেকে ১৭ জন জেলে থাকে। আবার কঙবাজার শহরতলীর দরিয়ানগর ঘাটের ইঞ্জিনবিহীন ককশিটের বোটে থাকে মাত্র ২ জন জেলে। ট্রলারগুলোর মধ্যে ইলিশ জালের বোটগুলো পক্ষকালের রসদ নিয়ে এবং তাইল্যা জালের বোটগুলো এক সপ্তাহের রসদ নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যায়। আবার ৭/৮ আঙুলের ফাঁসযুক্ত ফইল্যা জালের বোটগুলো সাগরে মাছ ধরতে যায় ৫/৬ দিনের রসদ নিয়ে। এই বোটগুলো রূপচান্দা জাতীয় মাছ ধরে। এছাড়া চাউপ্পা জাল, ডোবা জাল, চামিলা জাল ও চোখফোলা জালের বোটগুলো মাত্র একদিনের রসদ নিয়ে সাগরে যায় এবং মাছ ধরে দিনে দিনেই ফিরে আসে। এই ধরনের জালের বোটগুলো সাগর উপকূলে ছোট প্রজাতির মাছ ধরে, যাকে স্থানীয় ভাষায় ‘পাঁচকাড়া’ (পাঁচ প্রকারের) মাছ বলা হয়। বোটগুলোতে একেক মৌসুমে একেক প্রজাতির মাছ বেশি ধরা পড়ে। তবে ৬.৫ সেন্টিমিটার বা ৪ আঙুলের কম ফাঁসযুক্ত জাল দিয়ে এবং যেকোনো সাইজের রক জাল দিয়ে সাগরে মাছ ধরা বেআইনি বলে জানান বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের কঙবাজারস্থ সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্রের প্রধান ড. শফিকুর রহমান।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।