জুমবাংলা ডেস্ক : টানা আট মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে বিগত ১৪ দিন উন্মুক্ত নদীতে জাল ফেললেও ইলিশ ধরা পড়ছে না জেলেদের জালে। এছাড়াও সাগরে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা থাকায় এখানকার মোকামে মাছের সংকট প্রকট আকার ধারণ করছে। সাগরের মোহনায় ঝুঁকি নিয়ে যারা জাল ফেলেছে তাতে সামান্য ইলিশের দেখা মেলছে। গত এক সপ্তাহ থেকে দৈনিক গড়ে ৩০ থেকে ৪০ মণ করে ইলিশ নিয়ে ট্রলারগুলো পোর্টরোডের মোকামে আসছে। অথচ ইলিশের এই ভরা মৌসুমে বিগত বছরগুলোতে পোর্ট রোডের মোকামের আড়তগুলোতে দিনশেষে ২ হাজার মণ ইলিশ বেচাকেনা হতো। পোর্টরোড মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র আড়তদার মালিক সমিতির অর্থ সম্পাদক ইয়ার হোসেন শিকদার জানান, তার আড়তে নদী থেকে প্রায় শূন্যহাতে ফেরত আসছে জেলেরা। সাগরের মোহনা (ঢাল চরে) থেকে গতকাল মাত্র ৩০ মণ ইলিশ এসেছে। অথচ এ সময়ে প্রতিদিন ২ হাজার মণ ইলিশ বিক্রি হতো। একাধিক আড়তদার জানান, সাগরে নিষেধাজ্ঞা থাকায় মোকামে মাছ নেই। আর এর ফলে নদীতেও তেমন একটা মাছ নেই। তবে আমরা আশা করছি, নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে মাছ পাব। তারা বলেন, পোর্টরোড মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে মোট ১৭০টি আড়তে এ ভরা মৌসুমে আগে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার মাছ বেচাকেনা হলেও বর্তমানে বেচাবিক্রি হচ্ছে মাত্র ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার।
বরিশাল জেলা মত্স্য কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান জানান, সরকারের নানামুখী সিদ্ধান্তে ইলিশের উৎপাদন বাড়লেও বৃষ্টিপাত না হলে সাধারণত ইলিশ ধরা পড়ে না। এ বছর পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় গত কয়েক দিন ধরে তেমন ইলিশ ধরা পড়ছে না জেলেদের জালে। এছাড়াও এ বছর অতিরিক্ত গরমের কারণেও ইলিশ পেতে আগস্ট মাসের মাঝামাঝি অথবা শেষের দিক পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
শুক্রবার সকালে বরিশাল নগরীর প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র পোর্টরোড ঘুরে দেখা যায়, ইলিশের পাইকারি আড়তগুলো অনেকটা ইলিশ শূন্য। যতটুকু ইলিশ উঠছে, তার দাম অত্যধিক। পাশাপাশি অন্যান্য মাছের দামও ছিল অনেকটাই বেশি। স্বাভাবিক সময় এক কেজি ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায়। এতে বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা। এছাড়াও ৬০০ থেকে ৯০০ গ্রামের ইলিশের কেজি ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা আর ৫০০ গ্রামের বা তার একটু কম ওজনের ইলিশের কেজি ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে অন্যান্য মাছের দামও বেশি। পাইকারি বাজারে রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, গলদা চিংড়ির কেজি ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা, পোয়া মাছ ৪০০ টাকা, ট্যাংরা ৫৫০ টাকা, কোরাল ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, রূপচাঁদা ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
পোর্টরোড মৎস্য আড়তদার নাসির উদ্দিন বলেন, আমরা সব সময় দেখে আসছি, আষাঢ় মাস এলেই ইলিশে সয়লাব হয়ে যেত পোর্টরোডের মোকাম। আর এখন ইলিশের ভরা মৌসুমের দুই সপ্তাহ পার হলেও আশানুরূপ মাছ পাচ্ছি না। এজন্য তিনি প্রশাসনকে দায়ী করে বলেন, ‘সরকার ঠিকই নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে কিন্তু তা অমান্য করে কিছু অসাধু জেলে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে জাটকা ধরে বাজারে বিক্রি করছে। ফলে ইলিশের ভরা মৌসুমেও আড়তে মাছ পাচ্ছি না।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শুধু বরিশালেই নয়, ইলিশ সংকটের এ চিত্র এখন দক্ষিণাঞ্চলের সব নদনদীতেই। যার বিরূপ প্রভাব পড়েছে বাজারে। সরবরাহ না থাকায় ইলিশের দাম সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে। সাগরে মাছ ধরায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে আগামী ২০ জুলাই। আর এখন টানা বৃষ্টি শুরু হয়েছে, পূর্ণিমার জো চলছে। এর পর ইলিশ বেশি বেশি ধরা পড়বে- এমন আশায় বুক বেঁধে আছেন জেলে এবং মাছ ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা, সেই সঙ্গে ইলিশপ্রেমী ক্রেতা সাধারণেরাও।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।