আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইলিশ, স্বাদে–গন্ধে আর মুখরোচক খাবার হিসেবে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বেশ জনপ্রিয়। বাংলাদেশের জাতীয় মাছ এই ইলিশ। নরওয়েজিয়ানদের কাছে স্যামন যেমন, ব্রিটিশদের কাছে যেমন ‘ফিশ অ্যান্ড চিপস’, ঠিক তেমনই বাঙালির পরিচয়ের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ ইলিশ। এটি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের একটি ভালো অনুষঙ্গও বটে।
ভারতে গঙ্গা নদীর শাখা বাংলাদেশের পদ্মা, এই নদীতেই ধরা পড়ে বেশির ভাগ ইলিশ। বাকিটা আসে পশ্চিমবঙ্গের গঙ্গা থেকে। তবে বাংলাদেশি ইলিশই সবচেয়ে স্বাদের। আকার এবং স্বাদের জন্য বাংলাদেশের ইলিশ সুপরিচিত।
হিন্দু সম্প্রদায়ের পাঁচ দিনের উৎসব দুর্গাপূজার সময় ভারতে ইলিশের বিশেষ চাহিদা রয়েছে। খাবারের তালিকায় পদ্মার ইলিশের পরিবেশন যে কারো মর্যাদার ইঙ্গিত দেয়।
পানি বণ্টন নিয়ে বিরোধের জেরে ২০১২ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ভারতে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ। এর প্রভাব পড়ে দুই দেশের কূটনীতিক সম্পর্কে। ২০২২ সালে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন ভারত সফর করেন, তখন তাঁর সফরের প্রথম দিনই ইলিশ নিয়ে আলোচনা হয়। এর কদিন পরই ফের ভারতে যায় ইলিশ।
তবে গত ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ায় দুই দেশের সম্পর্ক গড়ায় অন্যদিকে। শেখ হাসিনার প্রতি ভারতের অটল সমর্থন, পালিয়ে তাঁর ভারতে আশ্রয় নেওয়া—এসবই অনেক বাংলাদেশিকে হতাশ করেছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশে আকস্মিক বন্যার জন্য ভারতকে অভিযুক্ত করেছেন কেউ কেউ। তাদের ভাষ্য, বাঁধ খুলে দেওয়ায় পানি এসে বাংলাদেশে সৃষ্টি হয়েছে বন্যা। ভারত এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের তথ্যানুসারে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ গৌতম আদানির মালিকানাধীন আদানি পাওয়ার বাংলাদেশের কাছে বকেয়া পাবে ৫০০ মিলিয়ন ডলার। যা নিয়ে এরই চিঠি দিয়েছে আদানি পাওয়ার। এ অবস্থাতেই গত ৩ সেপ্টেম্বর একটি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার ইলিশ রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করেছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত করব যেন এই দুর্গাপূজায় ভারতে ইলিশ রপ্তানি করা না হয়।’
পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় এক কেজির ইলিশের দাম ২৫০০ রুপিতে পৌঁছেছে এরই মধ্যে, যা স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৩৫ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশ থেকে ইলিশ না গেলে পূজা এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে দাম আরও বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
ভারতে পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও ইলিশের অভ্যন্তরীণ উৎস আছে। একটি হলো পার্শ্ববর্তী রাজ্য ওড়িশা। গুজরাটও আরেকটি উৎস। তবে কলকাতার এক বাসিন্দা বলেছেন, ‘কোনো আত্মমর্যাদাশীল বাঙালি এই ইলিশ খাবে না।’ অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে কলকাতার বাঙালিদের এই নাক সিঁটকানো আরও বাড়বে বৈ কমবে না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।