রংপুরের ব্যবসায়ী আশরাফুল হককে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ১০ লাখ টাকা আদায় করতে চেয়েছিল বন্ধু জরেজুল ইসলাম ও তার প্রেমিকা শামীমা আক্তার ওরফে কোহিনুর (৩৩)। এ জন্য এক মাস আগে আশরাফুলের সঙ্গে মিথ্যা প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন শামীমা। পরে তাকে ঢাকায় এনে খুন করে লাশ ২৬ টুকরো করেন জরেজ মিয়া ও শামীমা।

শনিবার (১৫ নভেম্বর) কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল ফায়েজুল আরেফীন।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তার শামীমার সঙ্গে ঘটনার প্রধান আসামি জরেজের প্রায় এক বছরের প্রেমের সম্পর্ক। জরেজ সম্প্রতি শামীমাকে বলেছিল, তার এক বন্ধুকে ‘প্রেমের ফাঁদে ফেলে ব্লাকমেইল করে’ ১০ লাখ টাকা আদায় করা যাবে। এরমধ্যে জরেজ ৭ লাখ টাকা এবং শামীমা ৩ লাখ টাকা ভাগ করে নিবে বলে আলোচনা হয়। শামীমা ভিকটিম আশরাফুলে সাথে একমাস আগে থেকে মোবাইলে যোগাযোগ শুরু করে তার প্রতি আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেন। তাদের নিয়মিত অডিও এবং ভিডিও কলে কথা চলতে থাকে।
মঙ্গলবার রাত আটটার দিকে আশরাফুলকে নিয়ে ঢাকায় রওনা দেন জরেজ। বুধবার তারা শামীমার সঙ্গে দেখা করেন এবং তিনজন মিলে শনির আখড়ার নূরপুর এলাকায় সাড়ে ৫ হাজার টাকার একটি ভাড়া বাসায় উঠেন। এর মধ্যে জরেজ ও তার প্রেমিকা শামীমার মধ্যে আলোচনা হয়, আশরাফুলের আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে সেটি দেখিয়ে ১০ লাখ টাকা আদায় করা হবে।
এটি অনেকটা ‘হানিট্র্যাপের’ মত মন্তব্য করে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, বুধবার দুপুরে ওই বাসায় ভিকটিম আশরাফুলকে মালটার শরবতের সাথে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে হালকা অচেতন করে ফেলে জরেজ। আমরা সেদিনের ভিডিও শামীমার মোবাইলে পেয়েছি।
ভিডিও দেখিলে ‘ব্ল্যাকমেলিং’ করে টাকা আদায়ের পরিকল্পনা থাকলেও দুপুরে পুরোপুরি অচেতন আশরাফুলের হাত দড়ি দিয়ে বেধে ফেলে এবং মুখ স্কচটেপ দিয়ে আটকে দেয় জরেজ। একপর্যায়ে আশরাফুলকে হাতুড়ি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে।
র্যাব কর্মকর্তা ফায়েজুল আরেফীন আরও বলেন, অতিরিক্ত আঘাত এবং মুখ কসটেপ দিয়ে আটকানো থাকায় শ্বাস না নিতে পেরে ঘটনা স্থলেই আশরাফুল মারা যায়। লাশ একই ঘরে রেখে জরেজ ও শামীমা বুধবার রাত্রীযাপন করে। বৃহস্পতিবার সকালে জরেজ কাছের বাজার থেকে চাপাতি ও ড্রাম কিনে আনে। এরপর আশরাফুলের লাশ ২৬ টুকরা করে ড্রামে ভরে রাখে। দুপুর পৌনে তিনটার দিকে একটি সিএনজি ভাড়া করে ড্রাম দুটি সিএনজিতে নিয়ে তারা বেরিয়ে যায়। দুপুর সোয়া তিনটার দিকে তারা হাইকোট মাজার গেইটের কাছে লাশভর্তি ড্রাম রেখে দ্রুত চলে যায়, যেসব ‘মুভমেন্টের’ সিসিটিভি ভিডিও রয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
এরপর সায়েদাবাদ গিয়ে শামীমাকে কুমিল্লায় বাড়িতে চলে যেতে বলে জরেজ এবং নিজে রংপুর চলে যাবে বলে জানায়।
পরে শামীমার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আশরাফুলের রক্তমাখা সাদা রংয়ের পায়জামা-পাঞ্জাবীসহ হত্যার ব্যবহৃত দড়ি, স্কচটেপ, একটি গোলগলা গেঞ্জি এবং একটি হাফ প্যান্ট নূরপুর এলাকা থেকে উদ্ধারের কথা বলেছে র্যাব।
এক প্রশ্নের জবাবে ফায়েজুল আরেফীন বলেন, শামীমার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ব্লাকমেইল করে টাকা উপার্জন করায় তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল। তবে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পিছনে পূর্ব শত্রুতা আছে কি না তা মূল আসামি জরেজকে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসবে। একটু অপেক্ষা করলে আমরা মূল মোটিভটা জানতে পারব। কারণ যে নৃশংশতা হয়েছে, রিভেঞ্জ বা রাগ ছাড়া এভাবে মারাটা আমাদের কাছে স্বাভাবিক লাগেনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



