সুয়েব রানা : জেলার জৈন্তাপুর উপজেলার ৫নং ফতেপুর ইউনিয়নের বৃহত্তর হরিপুর একটি শান্তিপ্রিয় ও ধর্মপ্রাণ এলাকা হিসেবে পরিচিত। এখানে কোনো দোকানে টেলিভিশন নেই, এবং কম্পিউটার বা মোবাইল থেকে গান লোড করা বা বাজানোও হয় না। এলাকার মানুষ মূলত ইসলামি জীবনাচার, হুজুরদের শিক্ষা এবং মাদ্রাসার পড়াশোনাকে অগ্রাধিকার দেন।
বাজারের পাশে দিয়ে তামাবিল মহাসড়ক গেছে, যেখানে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে পর্যটনবাহী গাড়ি চলাচল করে। কিন্তু অনেক সময় চালক বা যাত্রীরা বাজারে ঢোকার আগে না জেনে গান বাজিয়ে চলে যান। এজন্য বাজারে প্রবেশের আগে একটি “গান বাজানো নিষেধ” সাইনবোর্ড টাঙ্গানো আছে। যারা বিষয়টি না জানেন, তারা বাজারে উপস্থিত মানুষের শান্তিপূর্ণ আহ্বান শুনে গান বন্ধ করেন। বিয়ে বাড়ি বা অন্য কোনো অনুষ্ঠানেও প্রকাশ্যভাবে গান বাজানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
হরিপুরের ধর্মীয় শিক্ষার ক্ষেত্রে তিনটি পুরাতন ও ঐতিহ্যবাহী মাদ্রাসা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমে জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম হেমু, যা প্রতিষ্ঠা করেছেন মাওলানা মাহফুজুর রহমান ও মৌলভী হাফিজুল্লাহ (র:)। বর্তমানে মুহতামিম হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মুফতি জিল্লুর রহমান কাসেমী।
দ্বিতীয়টি জামেয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসাতুল উলুম দারুল হাদিস, হরিপুর বাজার, যা প্রতিষ্ঠা করেছেন শায়খ আবদুল্লাহ হরিপুরী (র:) এবং বর্তমান মুহতামিম শায়খ হিলাল আহমদ বিন শায়খ আব্দুল্লাহ হরিপুরী।
তৃতীয়টি হলো শ্যামপুর হাফিজিয়া মাদ্রাসা, যেখানে মুহতামিম ছিলেন মৌলানা হারিছ উদ্দিন (র:), যিনি এলাকায় ধর্মীয় শিক্ষা ও সামাজিক অনুশাসনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
হরিপুরের হুজুরদের কারণে আজকের শান্তিপ্রিয় পরিবেশ, ইসলামি জীবনাচার এবং প্রকাশ্য অনুষ্ঠানগুলোতে নিয়মিত ইসলামিক মূল্যবোধ মেনে চলা সম্ভব হয়েছে। উনারা এলাকার মানুষকে ইসলামের মূল শিক্ষার বিষয়ে সচেতন করেছেন, যার ফলে প্রতিবছর হাজার হাজার হাফিজ ও মৌলানা বিভিন্ন সুনামধন্য মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করছেন।
এই এলাকার ধর্মীয় উন্নয়ন ও ইসলাম প্রচারে আরো গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন শায়খ ইসমাইল হাকরগ্রামী (র:), আল্লামা মুফতি মুহাম্মদ ইউসুফ সাহেব শ্যামপুরী (র:), শায়খ মাওলানা ইসমাঈল শ্যামপুরী (দা.বা.) এবং আল্লামা শায়খ আব্দুল কাদির বাগেরখালী (দা.বা.)। জীবিত দুইজন বর্তমানে হরিপুরের মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করছেন এবং ইসলামি শিক্ষা ও সমাজগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।
হরিপুরের প্রায় প্রতিটি ঘরে একজন থেকে চার-পাঁচজন পর্যন্ত মাদ্রাসা শিক্ষার্থী বা হুজুর বসবাস করেন। কোনো সমস্যা দেখা দিলে এলাকার মানুষ বড় কোনো বিপদের সম্মুখীন হলে একত্রিত হয়ে পরামর্শ করে, এলাকার সবাই মিলে তা সমাধান করেন।
৫নং ফতেপুর ইউনিয়নের বৃহত্তর হরিপুরের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, এখানে রাজনৈতিক দলের মধ্যে কোনো হিংসা বা দ্বন্দ্ব দেখা যায় না। যে যার মত করে রাজনীতি করলেও, সবাই একসাথে শান্তিপূর্ণভাবে চলাচল করে। এছাড়া, হরিপুর এলাকায় অসংখ্য সুনামধন্য মসজিদ ও মাদ্রাসা রয়েছে, যা স্থানীয় মানুষের ধর্মীয় ও সামাজিক জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে।
হরিপুর বাজারের শান্তিপ্রিয় পরিবেশ, ধর্মীয় ঐতিহ্য এবং সামাজিক ঐক্য মিলিয়ে এটি একটি অনন্য এলাকা। স্থানীয়রা ইসলামি আদর্শে বিশ্বাসী, হুজুরগণ ও বক্তাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং এই শান্তিপ্রিয় পরিবেশ এলাকাবাসীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।