বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : পারমাণবিক বোমা নিরস্ত্রীকরণ একটি অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত এবং কূটনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে পরিচালিত হয়। পারমাণবিক অস্ত্র ধ্বংস বা নিষ্ক্রিয় করার জন্য বিভিন্ন প্রযুক্তি এবং প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে কিছু প্রধান প্রযুক্তি ও পদ্ধতি রয়েছে।
পারমাণবিক বোমা নিষ্ক্রিয় করার প্রথম ধাপ হলো বোমার বিভিন্ন অংশ খুলে ফেলা। এই প্রক্রিয়ায় বিশেষজ্ঞরা খুবই সাবধানে বোমার প্লুটোনিয়াম বা ইউরেনিয়াম কোর থেকে ডেটোনেটর বা বিস্ফোরক অংশগুলো আলাদা করেন। এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং বিশেষজ্ঞদের দ্বারা সম্পন্ন হয়, কারণ সামান্য ভুলের কারণে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।
পারমাণবিক অস্ত্রে ব্যবহৃত মূল উপাদান হলো উচ্চমানের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম বা প্লুটোনিয়াম।
একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় নিষ্ক্রিয় করা হয়, যাতে মূল উপদানগুলি উপাদানগুলিকে পুনরায় ব্যবহার করা যায়। এই প্রক্রিয়াকে বলে নিউক্লিয়ার ম্যাটেরিয়াল রেন্ডারিং হার্মলেস।
উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামকে কমমাত্রায় মিশিয়ে সাধারণ জ্বালানি হিসাবে ব্যবহারের যোগ্য করে তোলা যায় এক বিশেষ পদ্ধতিতে একে বলে ডিলিউশন বা হ্রাস প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার ইউরেনিয়াম পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন কেন্দ্রে ব্যবহার করা যায়, কিন্তু অস্ত্র হিসেবে আর ব্যবহার করা সম্ভব নয়।
পারমাণবিক বর্জ্য বা ধ্বংসকৃত পারমাণবিক উপাদান গ্লাসের মতো কঠিন পদার্থে রূপান্তরিত করা হয়। এর ফলে পারমাণবিক উপাদান সুরক্ষিতভাবে সংরক্ষণ করা যায় এবং এটি পরিবেশের জন্য কম ক্ষতিকর হয়। এ প্রক্রিয়াকে বলে ভিট্রিফিকেশন।
পারমাণবিক বোমা নিষ্ক্রিয় করতে বা খুলে ফেলতে রোবটিক প্রযুক্তিও ব্যবহৃত হয়। মানুষ সরাসরি এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকলে জীবনের ঝুঁকি থাকে, তাই রোবট এবং রিমোট কন্ট্রোল প্রযুক্তি দিয়ে অস্ত্রের ডেটোনেটর বা বিস্ফোরক অংশগুলো নিষ্ক্রিয় করা হয়।
এই রোবটগুলো খুবই নিখুঁতভাবে কাজ করতে সক্ষম এবং বিপজ্জনক পদার্থ থেকে মানুষকে দূরে রাখতে সাহায্য করে।
নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়ার সময় পারমাণবিক উপাদান থেকে তেজস্ক্রিয়তা নির্গত হয়। তাই রেডিয়েশন শনাক্তকরণ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। এই প্রযুক্তি নির্দিষ্ট করে কোন অংশে তেজস্ক্রিয় উপাদান রয়েছে এবং তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা কতটুকু তা নির্ণয় করে। বিশেষ ডিভাইসের সাহায্যে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়।
এছাড়া প্লাজমা প্রযুক্তি ব্যবহার করে উচ্চ তাপমাত্রায় পারমাণবিক বোমার ধাতু এবং অন্যান্য উপাদান গলিয়ে ফেলা হয়। এর মাধ্যমে বোমার কার্যক্ষম অংশগুলো পুরোপুরি ধ্বংস করে নিষ্ক্রিয় করা যায়।
পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের সময় সার্বক্ষণিক নজরদারি ও নিরাপত্তার জন্য বিশেষ মনিটরিং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো, যেমন আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA), এই মনিটরিং সিস্টেম ব্যবহার করে নিশ্চিত করে যে নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়া সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে। ধ্বংসকৃত উপাদানগুলো আর কোনোভাবেই অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহার করা সম্ভব নয়।
প্রযুক্তির পাশাপাশি পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ সফল করতে আন্তর্জাতিক চুক্তি এবং কূটনৈতিক প্রক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন, নিউক্লিয়ার নন-প্রলিফারেশন ট্রিটি (NPT) বা পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি এবং অন্যান্য চুক্তি পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা কমাতে এবং নিরস্ত্রীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।