বিনোদন ডেস্ক : করোনার কারণে টানা দুই বছর পর ঈদ উৎসবে নতুন সিনেমার মুখ দেখলো দেশের প্রেক্ষাগৃহগুলো। এবার ঈদের সিনেমার তালিকায় আছে চারটি সিনেমা। এগুলো হলো- ‘শান’, ‘গলুই’, ‘বিদ্রোহী’ ও ‘বড্ড ভালোবাসি’। এর মধ্যে এম এ রাহিম পরিচালিত ‘শান’র প্রধান দুই চরিত্রে অভিনয় করেছেন সিয়াম আহমেদ ও পূজা চেরি। এস এ হক অলিক পরিচালিত ‘গলুই’-এ আছেন বাংলা সিনেমার সুপারস্টার শাকিব খান ও পূজা চেরি। অন্যদিকে শাহীন সুমন পরিচালনায় ‘বিদ্রোহী’তে থাকছে শাকিব খান ও বুবলী। আর জুয়েল ফারসির ‘বড্ড ভালোবাসি’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন নবাগত নায়িকা সুলতানা রোজ নিপা, হাছিব খান শান্ত ও টলিউড অভিনেতা অমিতাভ ভট্টাচার্য।
এদিকে, দেশের প্রায় দেড়শ’ হলে দুই সপ্তাহ ধরে চলছে ঈদের সিনেমাগুলো। এর মধ্যে কিছু হল দর্শক আগ্রহের কথা ভেবে পাল্টিয়েছে সিনেমা। চার সিনেমার মধ্যে ঈদে সবচেয়ে বেশি হল পেয়েছে ‘বিদ্রোহী’। এরপর আছে ‘শান’, ‘গলুই’ ও সবশেষ ‘বড্ড ভালোবাসি’। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখন বেশ কিছু হলে প্রদর্শনের জন্য ‘শান’ ও ‘গলুই’ তোলা হচ্ছে। আর পিছিয়ে যাচ্ছে ‘বিদ্রোহী’র হল সংখ্যা। আর তেমন সাড়া নেই ‘বড্ড ভালোবাসি’র।
রাজধানীর স্টার সিনেপ্লেক্সের জ্যেষ্ঠ বিপণন কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘আমাদের প্রেক্ষাগৃহে দুটি সিনেমা চলছে ‘শান’ ও ‘গলুই’। ঈদের দিন থেকেই সিনেমা দুটি ভালোই যাচ্ছে। কোনোটা আগে পরে না করে বলতে চাই, করোনার ধাক্কা সামালে নতুন আলোর পথ দেখাচ্ছে ঈদের সিনেমাগুলো। কারোনার কারণে আমরা দুই বছর চারটি ঈদে নতুন সিনেমা পাইনি। তবে এবার এর চিত্রটা ভিন্ন। আমাদের তিনটি শাখায় দুটি সিনেমারই দুটি করে শো চলছে। দর্শক উপস্থিতিতে আমরা খুশি।’’
একই সুরে কথা বলেন যমুনা ব্লকবাস্টার সিনেমাসের অপারেশন ইনচার্জ এ. এইচ রাজু। তিনি বলেন, ‘‘এবার সিনেমাগুলো ভালো যাচ্ছে। আমাদের ৭টা হলে ‘গলুই’, ‘বিদ্রোহী’ ও ‘শান’ চলছে। এর মধ্যে ‘শান’র তিনটা ‘গলুই’ ও ‘বিদ্রোহী’র একটি করে শো হচ্ছে। আমরা ভেবেছিলাম, সময়ের চাহিদা অনুযায়ী হয়তো বাংলা সিনেমার প্রতি দর্শক আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। কিন্তু এবার দেখলাম, না দর্শক এখনো ভালো গল্পের খোঁজ করছে। আর সে কারণেই শোগুলো ভালো দর্শক নিয়েই চলছে।’’
মধুমিতা সিনেমা হলের মালিক ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, ‘‘এখন ‘শান’ চলছে আমার হলে। আগামী সপ্তাহ থেকে ‘গলুই’ চালাবো। প্রতিদিন চারটি করে শো হচ্ছে। হাউজফুল না হলেও যেরকম দর্শক সাড়া পাচ্ছি, তাতে আমরা খুশি। এখন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশের হল সংকট। ঢাকায় তেমন হল নেই বললেই চলে। যা আছে মাল্টিপ্লেক্স। তবে এখানে কিন্তু সব ধরনের দর্শক যেতে পারে না। তাই আমাদের সিনেমা হলগুলোর দিকেও একটু নজর দিতে হবে সরকারকে। নতুন হল তৈরি অনেক সময়ের ব্যাপার, পুরোনো হলগুলোতে অনুদান দিয়ে সংস্কার করলে দর্শক সংখ্যা আরও বাড়বে। আর মানসম্মত বেশি বেশি সিনেমা নির্মাণে সবাইকে এগিয়ে আসতে ও উৎসাহ দিতে হবে। আমার বিশ্বাস বাংলা সিনেমার ইন্ডাস্ট্রি আবার সগৌরবে দাঁড়াতে পারবে।’’
তবে শ্যামলী সিনেমা হলের দায়িত্বে থাকা আহসান উল্লাহ হাসান জানালেন ভিন্ন কথা। তার ভাষ্য, ‘‘ঈদের প্রথম সপ্তাহ থেকে ‘শান’ চলছে। শুরুর দিকে ভালোই ছিল। এখন একটু ঢাউন হয়ে এসেছে। আগামী সপ্তাহ থেকে ‘পাপ পুণ্য’ চলবে।’’
এদিকে, ঢাকার বাইরের হলগুলোতে ঈদের সিনেমাগুলো খুব একটা সাড়া ফেলতে পারেনি। মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুরের পান্না সিনেমা হলের দায়িত্বে থাকা আজগর হোসেন বলেন, ‘অবস্থা খুব খারাপ। ঈদে প্রথম আমরা মুক্তি দিয়েছিলাম ‘বিদ্রোহী’, আর এই সপ্তাহ থেকে চলছে ‘শান’ কিন্তু কোন ছবিই দর্শক টানতে পারেনি। চলে না বলে নাইট শো বন্ধ করে দিয়েছি।’’
বগুড়ার মধুবন সিনেপ্লেক্সের দায়িত্বে থাকা আর.এম. ইউনুস বলেন, ‘করোনার পর থেকে এখন একটু ভালো। তবে খুব ভালো, তা কিন্তু না। আমরা ঈদের পর থেকে ‘শান’ চালাচ্ছি। এটি যে ধরনের ছবি তার দর্শক হওয়া উচিত ছিল হল ভর্তি। প্রতিদিন চারটি করে শো হচ্ছে কিন্তু হল আসন কিছুটা ফাঁকা যাচ্ছে। তবে শুক্রবারের শোগুলো একটু বেশি দর্শক ছিল। আপাতত খরচটা উঠে এসেছে। ‘শান’র একটা ভালো লক্ষণ আমার একটা শোও বন্ধ হয়নি।’
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির আইন বিষয়ক এই নেতা আশার কথাও শোনালেন। বললেন, ‘একটা ভালো লক্ষণ, আমরা নতুন একজন নায়ককে পেয়েছি। যার ছবি দেখার জন্য মানুষ হলে আসছে। কারণ একটা সময় হলগুলো একক নায়ক শাকিব খান কেন্দ্রীক হয়ে গিয়েছিল। এখন সেই প্রথা ভাঙছে। আরিফিন শুভর সঙ্গে সিয়াম আহমেদও ভালো একটা জায়গা তৈরি করেছে। যার কারণে দর্শকদের আগ্রহ বাড়ছে বাংলা সিনেমায়। ঈদের ঘাটতিটা আমাদের আরও পূরণ হবে ‘পাপ পুণ্য’ মুক্তি পেলে। কারণ চঞ্চল চৌধুরী ও সিয়াম আহমেদ দ্বৈত নায়কের উপস্থিতি আছে ছবিতে। ফলে অনেক দর্শকই হলমুখী হবেন বলে আমি আশা করছি।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।